ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আকাশপথ বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন ৪৮৯০ ব্রিটিশ নাগরিক

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৮ এপ্রিল ২০২০

আকাশপথ বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন ৪৮৯০ ব্রিটিশ নাগরিক

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা শনাক্তের আগে পৌনে পাঁচ হাজার যুক্তরাজ্য প্রবাসী দেশে ফিরে বিপাকে পড়েছেন। তারা সবাই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক। অনেকে সেখানে পরিবার রেখে জরুরী কাজে দেশে ফিরে এখন আটকা পড়েছেন। এমন সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের দেয়া তথ্যমতে- এ ধরনের ৪৮৯০ জন ব্রিটিশ নাগরিক এখন ফেরার অপেক্ষায়। মূলত বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার দরুন তারা আটকা পড়েছেন। বেশিরভাগই তিন সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারছেন ন। এতে দূর দেশে স্বজনদের রেখে আসা এসব প্রবাসী বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে নাগরিকদের জন্য ব্রিটিশ সরকার যে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে, ফিরতে না পারায় তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা। যদিও ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে বলে আশ্বস্ত করছে বারবার। বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের ব্রিটেনে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি সমন্বয় করা হচ্ছে বলে হাইকমিশন তরফে জানানো হয়েছে। হাইকমিশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, বিমানের ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে তারা সার্বক্ষণিক বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিমান রাজি না হলে প্রয়োজনে অন্য কোন বিদেশী এয়ারলাইন্স থেকে চার্টার্ড করে তাদের ব্রিটেন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে বিমান বলছে, হয় চার্টার্ড ফ্লাইটে যেতে হবে- নয় অপেক্ষা করতে হবে বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত। উল্লেখ্য, চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ পরিস্থিতিতে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিতে থাকে একের পর এক দেশ। ব্রিটেন-বাংলাদেশ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইত্তেহাদ, এমিরেটস, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের পর সর্বশেষ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ব্রিটেনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিমান প্রথমবার ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে। তারপর সেটা আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এ কারণেই আটকা পড়েন বাংলাদেশে আসা যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে পরিচিত। মূলত তাদের প্রতি ব্রিটেনের দায়টা এখানেই। গত মাসে ইকবাল আহমদ নামে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একজন যাত্রী জানান, হাইকমিশনে ফোন করলে বলা হচ্ছে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে। তিনি অভিযোগ করেন, এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। করোনার কারণে টার্কিশ এয়ারওয়েজ তার গত ৩১ মার্চের ফ্লাইট বাতিল করে। এতে তিনি একই এয়ারলাইন্সের পরবর্তী সম্ভাব্য ফ্লাইট ১৮ এপ্রিলের বুকিং দেন। এরপর ওই ফ্লাইটও আগেই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বাতিল করে। বাধ্য হয়ে তিনি ফিরতি ফ্লাইটের অর্থ রিফান্ড চাইলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, তাদের পক্ষে রিফান্ড দেয়া সম্ভব নয়। যে এজেন্টের কাছ থেকে টিকেট কেনা হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তারা। একইভাবে ভোগান্তির শিকার মৌলভীবাজারের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা মোঃ শাহাবুদ্দিন। তিনি থাকেন বার্মিংহামে। জানতে চাইলে বলেন, জায়গা-জমি সংক্রান্ত কাজে দেশে এসে আটকা পড়েছি। ৮ এপ্রিল বিমানের ফ্লাইটযোগে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান এখন বলছে, এপ্রিলের পর যোগাযোগ করার জন্য। ফ্লাইট ফের চালু করা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলেও বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, অনেক বয়োবৃদ্ধ ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে আনা ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কুরিয়ারযোগে ওষুধ আনাবার সুযোগও নেই। ডাক্তারও দেখাতে পারছেন না। ব্রিটেনের বাইরে থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। এ বিষয়ে ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম খসরু একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, এমিরেটস এয়ারলাইন্সে তার ফিরতি ফ্লাইট ছিল গত ২৯ মার্চ। এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ায় আর ফিরতে পারেননি তিনি। স্ত্রী সন্তান সবাই ব্রিটেনে। ফখরুল জানান, তার বড় ভাই বার্মিংহাম দারুস সুন্নাহ একাডেমির প্রিন্সিপাল মুফতি তাজুল ইসলামের ফিরতি ফ্লাইট ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনন্সযোগে।
×