ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রাণের তালিকায় কৃষিপণ্য রাখার অনুরোধ

কৃষি উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৮ এপ্রিল ২০২০

কৃষি উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে এগুলো বাস্তবায়ন করতে অধীনস্থ দফতর/সংস্থাসমূহকে নির্দেশনা দিয়েছে। আর ভবিষ্যত সঙ্কট মোকাবেলা করতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জমি অনাবাদি না রেখে দেশের মানুষকে কিছু না কিছু লাগানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালন করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কেননা সাপ্লাই চেন ঠিক রাখতে হবে। এছাড়াও এই সময়ে হাওড়ে ধান কাটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। ইতোমধ্যেই দ্রুত যেখানে যন্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও যেহেতু ধান কাটার জন্য উত্তর এলাকার শ্রমিকরা আসে এই মুহূর্তে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ধানগুলো কাটা যায়। লেবার আনার একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। এছাড়াও কৃষি ও কৃষকের জন্য যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সঠিকভাবে পায় সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্থাৎ আমরা আমাদের কৃষি কৃষক বাঁচাতে যে কোন উদ্যোগ নেব। আমরা আমাদের কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। এদিকে, মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের কথা জানিয়ে আরও বলা হয়, বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ সকল পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্য ফসলের চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়েও জরুরী পণ্য বিবেচনায় সার, বালাইনাশক, বীজ, সেচযন্ত্রসহ সকল কৃষিযন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার প্রভৃতি), খুচরা যন্ত্রাংশ, সেচযন্ত্রসহ কৃষিযন্ত্রে ব্যবহৃত জ্বালানি/ডিজেল, কৃষিপণ্য আমদানি, বন্দরে খালাসকরণ, দেশের অভ্যন্তরে সর্বত্র পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় যথারীতি অব্যাহত থাকবে। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের ‘সেচ ভবন’ প্রাঙ্গণে কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত নিরাপদ সবজি সরাসরি বিক্রয়ের জন্য স্থাপিত প্রতি শুক্র ও শনিবারের ‘কৃষকের বাজার’-এ আসা কৃষিপণ্যবাহী গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের চলাচল অব্যাহত থাকবে। সকল কৃষিপণ্যবাহী গাড়ি চলাচল এবং এ সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত সরকারী-বেসরকারী ব্যক্তিদের চলাচল অব্যাহত থাকবে। আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিতকরণে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্নকরণ। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর দফতর/সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ কর্মস্থলে অবস্থান। কারোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে নিজের এবং কৃষকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সময়ে সময়ে সরকারের নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালনের নির্দেশনা। এদিকে, মঙ্গলবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে গুরুত্ব রাখার আহ্বান জানান। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই ভবিষ্যতে এই সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাটি আছে, মাটি উর্বর। আমাদের মানুষ আছে, এখন অনেকে বেকার বসে আছেন গ্রামে চলে গেছেন। কারও ঘরে এতটুকু মাটি যেন অনাবাদি না থাকে। ফলমূল, শাকসবজি, শস্য লাগান। যা পারেন কিছু না কিছু লাগান। ত্রাণের তালিকায় কৃষিপণ্য রাখতে চিঠি ॥ নোভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অফিস-আদালত এবং গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে কৃষকের ক্ষতি কমাতে ত্রাণের তালিকায় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ত্রাণ কার্যক্রমে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে নায্যমূল্য পেতে পারে সে লক্ষ্যে ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণযোগ্য খাদ্যসামগ্রীর আওতায় আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ জানা গেছে, নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটির মধ্যে মানুষ ও যানবাহন চলাচল কমে যাওয়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রি অনেক কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক। অনেক ক্ষেত্রে দাম কমে যাওয়ার পাশাপশি অবিক্রিত পচনশীল শাক-সবজি নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা গেলে কৃষকের অনেকটাই লাভবান হবে।
×