ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মামুন রশীদ

জীবনের অর্থটা বুঝতে পারছেন জাভেরিয়া

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৮ এপ্রিল ২০২০

জীবনের অর্থটা বুঝতে পারছেন জাভেরিয়া

একসময় হয় তো সবকিছুই ঠিকঠাক হয়ে যাবে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপীই এখন মৃত্যুর মিছিল। আতঙ্কে নিজেদের ঘরেই আবদ্ধ করে রেখেছেন বিশ্বের মানুষরা। শেষ পর্যন্ত এই মহামারী বিদায় নিলে যারা জীবিত থাকবেন তারা হয় তো উপলব্ধি করবেন কত কম পেয়েও আমরা ভালভাবে বাঁচতে পারি এবং আসলে মানুষের পুরো জীবনকালে কি আছে! এসব এখন উপলব্ধি করছেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে সময় কাটানো পাকিস্তান মহিলা ক্রিকেট দলের তারকা জাভেরিয়া খান। তিনি আশা করছেন সবাই জীবনের অর্থটা এই মহামারীর মাধ্যমে বুঝতে সক্ষম হবেন। প্রত্যেকটি জীবনই একটা সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। তবে মহামারীর কবলে মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার মতো নয়। এরপরও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ^ব্যাপী মৃত্যুকে ঠেকানো যাচ্ছে না। পুরো বিশ্বেই আতঙ্ক বিরাজ করছে সেজন্য। জাভেরিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় ছেলেদের ক্রিকেটের চেয়ে মেয়েদের ক্রিকেট অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই মহামারীতে। কারণ যে কোন পর্যায়ে তিন ফরমেটের ক্রিকেট তাদের চেয়ে আমরা অনেক কম খেলি। মহিলা টি২০ বিশ্বকাপের পর হয় তো এখন অনেক ক্রীড়াপ্রেমীরা মেয়েদের ক্রিকেট দেখ তো এবং আগ্রহী হয়ে উঠ তো। সেটাতো এখন হচ্ছে না। কিন্তু আমরা কি চাই সেই মোতাবেক তো কিছু হবে না, সৃষ্টিকর্তাই সবকিছু নির্ধারণ করেন। আমরা এখন তার ফাঁদে আটকা পড়েছি। পরস্পরের প্রতি কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলাম সেটা ধরা পড়ে গেছে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং পরিবেশের প্রতি আমাদের কর্তব্যটা এখন আমাদের সামনে আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। যখন স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে, আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন কত কম পেয়েও আমরা ভাল থাকতে পারি এবং কতটুকু আসলে আমাদের আছে। যখন আমি আবার ক্রিকেট খেলতে নামব, ইনশাআল্লাহ আর পারফর্মেন্স নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে এই খেলার প্রতি যে ভালবাসাটা আছে সেটাই উজাড় করে দিয়ে উপভোগের চেষ্টা করব।’ বিশ^ মহামারী হিসেবে যখন করোনাভাইরাসকে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে তার কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছেন জাভেরিয়া। পাকিস্তান মহিলা ক্রিকেট দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি২০ বিশ^কাপ খেলতে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরেছেন ৪ মার্চ। ফেরার ২/৩ দিন পরই অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার লাভের খবর শিরোনাম হয়েছে। জাভেরিয়া বলেন, ‘আমি কিছুটা ভারমুক্ত বোধ করছিলাম যে বিশ্বকাপটা শেষ করতে পেরেছি লকডাউন পরিস্থিতি শুরুর আগে। কারণ এটা মহিলা ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় ইভেন্ট। এখন এই বিরতির সময়ে বিশ^কাপ চলাকালীন যে হালকা ইনজুরিগুলো ছিল সেটার পুনর্বাসন চালিয়ে যাচ্ছি এবং ঘরেই কিছু ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ট্রেনার ফিটনেস পরিকল্পনা ও পুনর্বাসনের জন্য আমাকে কিছু প্রয়োজনীয় ভিডিও পাঠিয়ে দিচ্ছে নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে নিজেই ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার সময় অনেকবার হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে গেছে এবং এটা এখন স্বাভাবিক কার্যকলাপে রূপ নিয়েছে।’ এই ঘরে আবদ্ধথাকার সময়টাতে জীবনের অর্থটা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারছেন জাভেরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার অনেকগুলো স্যুটকেস ভর্তি হয়ে কাপড়-চোপড় ছিল সেগুলো একে একে খুলে পরিষ্কার করছি এবং যাদের এখন দরকার তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারছি। আমার কলেজ জীবনের কিছু স্যুভেনির, ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার ক্রিকেট সামগ্রী, জার্সি খুঁজে পাচ্ছি। নতুন করে স্কুল-কলেজের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হচ্ছে যাদের সঙ্গে আমার ব্যস্ততায় দীর্ঘদিন কথাই বলতে পারিনি। পরিবারের সঙ্গে প্রচুর ভাল সময় কাটাতে পারছি। ধর্মীয় বই পড়ছি, আমার মা আমাকে শেখাচ্ছেন। খেলা বিষয়ক অনেক প্রোগ্রাম দেখছি নেটফ্লিক্স ও এ্যামাজন প্রাইমে।’
×