ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাকিল আহমেদ মিরাজ

ওয়ার্নার না মালিক, বুমরাহ না রোহিত?

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৮ এপ্রিল ২০২০

ওয়ার্নার না মালিক, বুমরাহ না রোহিত?

চলছে টি২০ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার বাছাই কে টি২০ ইতিহাসের সেরা বোলার, কে সেরা ব্যাটসম্যান? অনেকেই হয়ত ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদি, আন্দ্রে রাসেল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, সুনীল নারাইন, মোাহাম্মদ নবি, রশীদ খান, সাকিব আল হাসান, লাসিথ মালিঙ্গার কথা বলবেন। ক্রিকেটের জনপ্রিয় সাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফো ছোট্ট ফরমেটের ইতিহাসসেরা বেছে নিতে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করেছে। কেবল আন্তর্জাতিক নয়, ক্লাব টি২০’তে সেরা পারফর্মারদের পরিসংখ্যানের চুম্বক অংশ তুলে ধরে সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কার প্রতিদ্বন্দ্বী কে, ইএসপিএন সেটিও ঠিক করে দিয়েছে। আগের রাউন্ডগুলোতে হয়ে যাওয়া ভোটে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের চেয়ে ইমরান তাহির, শেন ওয়াটসনের চেয়ে শহীদ আফ্রিদি, মাইক হাসির চেয়ে সুনিল নারাইন, সাঈদ আজমলের চেয়ে রশীদ খান, কেভিন পিটারসেনের চেয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের চেয়ে সুরেশ রায়না এগিয়ে। এ পর্যায়ে ডেভিড ওয়ার্নার ভার্সেস শোয়েব মালিক, জাসপ্রিত বুমরাহ ভার্সেস রোহিত শর্মার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। মোট ৩২Ñএর মধ্যে ১৬তম রাউন্ডে এই চার তারকাকে ভোট দেয়া যাবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। ডেভিড ওয়ার্নার বনাম শোয়েব মালিক ডেভিড ওয়ার্নার ॥ (রান ৯২৮, গড় ৩৭.৯৩, স্ট্রাইক রেট ১৪২.২০) আধুনিক অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ ফরমেটের বড় তারকা ওয়ার্নার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার যেমন রয়েছে ৪৩ বলে ৮৯ রানের ইনিংস তেমনি বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্জাইজি টি২০তে সময়ের ভয়ঙ্করতম ওপেনার তিনি। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে। জিতেছে অরেঞ্জ ক্যাপ। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এসে গতবারও রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে ক্লাব টি২০তে তার নামের পাশে ৪৭০৬ রান। ২০১৬ আইপিএলে যেবার হায়দরাবাদকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন সেবার করেছিলেন ৮৪৮ রান, গড় ৬০.৫৭! ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া জনপ্রিয় আসর বিগব্যাশে সেঞ্চুরির প্রবর্তন তিনিই করেছিলেন। আসরটিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২২০৭ রানের মালিক ওয়ার্নার। ওয়ার্নার আসলে কি, সেটি বোধ হয় নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। নিষেধাজ্ঞার পর ফিরে এসে গত বিশ্বকাপেও ব্যাটে ফল্গুধরা বইয়ে দিয়েছিলেন ক্রেজি ওপেনার। বিশ্বজুড়ে টি২০ টুর্নামেন্টে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য রীতিমতো এক হট কেক। সেরাদের সেরার রেসে উঠে আসতে সুপার ওয়ার্নার যদি শোয়েব মালিককে হারিয়ে দেন অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ক্রেজ তার হয়েই কথা বলে। শোয়েব মালিক ॥ (রান ৯৮৯২, গড় ৩৭.৪৬, স্ট্রাইক রেট ১২৫.৫৮, উইকেট ১৪৭, গড় ২৭.০৮) ৩৮ পেরিয়ে ৩৯ বছরে পা দেয়া শোয়েব মালিক যেন এখনও তরুণ। দুর্দান্ত ফিটনেসে কেবল পাকিস্তান জাতীয় দলই নয়, বিশ্বজুড়ে ক্লাব টি২০তেও অপরিহার্য অভিজ্ঞ এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ে খুনে মেজাজ নেই। কিন্তু প্রয়োজনে ঠিকই দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দিতে সক্ষম। সঙ্গে ডানহাতি অফস্পিনেও কম যান না। ক্রিকেটে ২০ বছর পার করেও জাতীয় দলে এবং ফ্র্যাঞ্জাইজি অঙ্গন দাপিয়ে বেড়ানো এমন খেলোয়াড় খুব কমই আছেন। দীর্ঘদিন মাঠে থাকায় নামের পাশেও অনেক অনেক রান, অনেক উইকেট এবং অনেক রেকর্ড। টি২০ ইতিহাসে মালিকের চেয়ে বেশি রান আছে কেবল ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। আর অলরাউন্ডার হিসেবে মালিকের চেয়ে বেশি উইকেট কেবল পোলার্ডের। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে শিয়ালকোটের হয়ে শিরোপা জিতেছেন, গত বছর সিপিপিএলেও তার ব্যাটিং ছিল উদ্ভাসিত। ৬৪ গড়ে করেছিলেন ৩১৭ রান। পাকিস্তানকে ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন আগে পরেও। সব মিলিয়ে গ্রেট হওয়ার দৌড়ে ওয়ার্নারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন কিংবদন্তিতুল্য এই অলরাউন্ডার। জাসপ্রিত বুমরাহ ভার্সেস রোহিত শর্মা জাসপ্রিত বুমরাহ ॥ উইকেট ১৮২, গড় ২২.৫১ ক্রিস গেইল, লাসিথ মালিঙ্গা, শোয়েব মালিক কিংবা সতীর্থ রোহিত শর্মার সঙ্গেও জাসপ্রিত বুমরাহর দ্বৈরথটা যায় না। মাত্র ৪ বছর হল্ েআন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন। তবে ব্যতিক্রমধর্মী এ্যাকশন, দুর্দান্ত ইয়র্কারের জন্য প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন ২৬ বছর বয়সী এ পেসার। ঘরোয়া আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক সর্বত্র সমান সফল বুমরাহকে ক্রিকইনফো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রেখেছেন রোহিত শর্মার। যে রোহিতের নামের পাশে অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড। তবে আবির্ভাবের পর পর থেকে ধারাবাহিকতায় গোট ক্রিকেটবিশ্বকেই চমকে দিয়েছেন বুমরাহ। বুমরাহর উত্থান কিন্তু আইপিএল দিয়েই। আর সর্বকালের সেরা বাছাইয়ে ক্লাব টি২০কে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায়। আইপিএল থেকে এসে জাতীয় দলের হয়ে এত সফল ক্রিকেটারের উদাহরণ খুব কমই আছে। ২০১৬ সালে জাতীয় দলের আসার আগে ২০১৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে গ্রেট লাসিথ মালিঙ্গাকে পেয়েছিলেন বুমরাহ। মালিঙ্গা তখন একাদশের অটেমেটিক চয়েজ। সেখান থেকে বুমরাহর বেরিয়ে আসা বিশেষ কিছু। ২০১৬ সালেই তিনি মালিঙ্গাকে সরিয়ে দলের সেরা একাদশে অটোমেটিক চয়েজ ওয়ে ওঠেন। আর পেছন ফিরে তাকাকে হয়নি। রোহিত শর্মা ॥ রান ৮৬৪২, গড় ৩২.২৪, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৭১ রোহিত শর্মা। ভারতীয় গণমাধ্যম তাকে ডাকে ‘রোহিত’ শর্মা। যার ব্যাটিংয়ের দর্শনই মারো আর বল বাউন্ডারির ওপারে পাঠাও। ৩২ বছর বয়সীর নামের পাশে রয়েছে ছোট্ট ফরমেটের একাধিক রেকর্ড। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি টি২০তে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এই ফরমেটে রেকর্ড ৪ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির রেকর্ডও রোহিতের দখলে। যেখানে বিরাট কোহলির নেই একটিও। ক্লাব টি২০তে তার মোট সেঞ্চুরি ৬টি। আছে চার-ছক্কার রেকর্ডও। ২০০৭ সালে ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে রোহিতের অবদান ছিল অনেক। শুধু তাই নয় আইপিএলেও মুম্বাইর শিরোপজয়ী অধিনায়ক রোহিত। তিনি আইপিএল ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের মতো পেশিবহুল না হয়েও রোহিতের একেকটা চার-ছক্কা যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। ননস্ট্রাইকিংয়ে থাকা ব্যাটসম্যানের জন্য শিক্ষনীয়, আনন্দদায়ক। জাতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেটি অনেকবার বলেছেনও। বুমরাহকে টেক্কা দিয়ে ক্রিকইনফোর সেরাদের সেরা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন মহারাষ্ট্র থেকে উঠে আসা ৩২ বছর বয়সী ডানহাতি উইলোবাজ।
×