ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সচেতনতাই পারে এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে’

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৮ এপ্রিল ২০২০

‘সচেতনতাই পারে এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে’

বাংলাদেশের প্রমীলা শূটারদের মধ্যে বর্তমানে শীর্ষ নাম আরদিনা ফেরদৌস আঁখি। সুনয়না এই শূটার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেয়ে চলেছেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ১২ স্বর্ণপদক জিতেছেন। দেশের হয়ে আঁখির সেরা সাফল্য ২০১৯ সালে এসএ গেমসে রেকর্ড গড়ে রৌপ্যপদক জয়। গত ডিসেম্বরে নেপালের কাঠমান্ডুতে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে স্বর্ণপদক জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত রুপা জিতেছিলেন আঁখি। কুষ্টিয়া তথা দেশের এই অহঙ্কার পিস্তলে মেয়েদের একক ইভেন্টেও অল্পের জন্য স্বর্ণপদক হাতছাড়া করেন। তবে রৌপ্যপদক জিতেও ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। কেননা পিস্তলের এককে এর আগে বাংলাদেশের কোন মেয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে পদক জিততে পারেননি। আরদিনা আঁখি সেই বন্ধাত্ব ঘুচিয়ে দেশকে উপহার দিয়েছেন রুপার পদক। এটা এসএ গেমসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে তার সর্বোচ্চ সাফল্য। এর আগে আঁখির সেরা সাফল্য ছিল ২০১৬ সালে এসএ গেমসে দলীয়ভাবে রৌপ্যপদক জয়। কুষ্টিয়ার চৌড়হাসের এই মেয়ে পড়ালেখা করেছেন কুষ্টিয়া সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজে। এরপর ঢাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন বিবিএ। এখন শূটিংই আঁখির ধ্যানজ্ঞান। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। যেভাবে মানুষ আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে তাতে বেশ চিন্তিত তারকা এই শূটার। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে বেশি ভাবাচ্ছে তাকে। দিনকে দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় শঙ্কা বাড়ছে। তেমনি ঘরের বাইরে বের হতে না পারায় সাধারণ মানুষের কষ্টও ব্যথিত করছে তাকে। কঠিন এই পরিস্থিতিতে আরদিনা আঁখি সবাইকে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আর সাধ্যমতো গরিব-দুঃখী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন। জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে আরদিনা আঁখি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের গ-ি চীনের উহান প্রদেশ ছাড়িয়ে এখন গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের জীবদ্দশায় এ ধরনের বিপর্যয় এটাই প্রথম। তাই হয় তো এই ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকটা অগোছালোভাবেই সব দেশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের খারাপ সংবাদ শুনে বেশ শঙ্কা অনুভব করছি।’ কঠিন এই পরিস্থিতিতে ঘরে থাকাটাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই বিধিনিষেধ খুব একটা মানছেন না। এ বিষয়ে আঁখি বলেন, ‘আমার মনে হয়, উন্নত বিশ্বের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকিয়ে আমাদের নিজেদের আরও সচেতন করে তোলা উচিত। যেখানে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আধুনিক দেশগুলো এই করোনাকে সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের নিজেদের সচেতনতাই পারে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে। যেহেতু এর কোন প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি তাই নিজেদের সুরক্ষিত রেখে প্রতিরোধ করাই শ্রেয়।’ করোনার থাবা সবকিছু থমকে দিয়েছে। তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। অনেকেই আছেন যারা ব্যস্ততার জন্য পরিবারকে ঠিকমতো সময় দিতে পারতেন না। এখন ঠিকই তারা পরিবারকে কাছে পাচ্ছেন। জাতীয় এই শূটারও পরিবারের সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন, ‘পরিবারকে সময় দিয়ে, সংসারের কাজ করে আর মুভি দেখেই সময়টা কাটানোর চেষ্টা করছি। এছাড়া পরিচিতজনদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছি সবসময়। যদিও দীর্ঘসময় বাসায় বসে থেকে অনেকটা অবসাদ আমাকেও ভর করছে। তারপরও এই ক্রান্তিলগ্নে এতটুকু ত্যাগ অবশ্যই সামনে ভাল দিনের সূচনা করবে।’ কঠিন চ্যালেঞ্জে সবাইকে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আঁখি বলেন, ‘বর্তমানে সবাই নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গৃহবন্দী অবস্থায় আছে। তাই অনেক কিছু চাইলেও হয়তো করার খুব একটা সুযোগ নেই। তারপরও আমাদের উচিত আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর খেয়াল রাখা। আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে যদি কয়েকটি পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারি তাহলে কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।’ শূটিং রেঞ্জে যেতে না পারায় অনুশীলনেও ছেদ পড়েছে। তবে বাসায় থেকেও নিজেকে ফিট রাখতে হালকা অনুশীলন করছেন আঁখি। একঘেয়েমি দূর করতে ছাদে হাঁটাহাঁটি করছেন, পড়ছেন বই, দেখছেন মুভি। পাশাপাশি যে সব কাজ নিজেকে আনন্দ দিতে পারে এমন কিছু করছেন।
×