ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে করোনার প্রভাব

তিন লাখ টন আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ৮ এপ্রিল ২০২০

তিন লাখ টন আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে অন্তত ৩ লাখ টন আলু খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এসব আলু মাঠে স্তূপ করা বা রাস্তায় সারি সারি আলুর বস্তা। আলু উৎপাদনের সর্ববৃহৎ জেলা মুন্সীগঞ্জের আলু উঠানো শেষ প্রায়। কিন্তু করোনার প্রভাবে উৎপাদিত আলু বাজারজাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংরক্ষণে হিমাগারেও পাঠানো যাচ্ছে না। উৎপাদিত আলুর একটি অংশ স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। একটি অংশ হিমাগারে নেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাকি আলু নিয়েই কৃষক বিপাকে রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত আলুর দাম এবার বেশি থাকায় কৃষক খুশি। কিন্তু যারা এখনও আলু বিক্রি করতে পারেনি বা সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি তাদের মধ্যে নাভিশ^াস অবস্থা। মুন্সীগঞ্জে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) উৎপাদন এবিএম ওয়াহিদুর রহমান এই তথ্য দিয়ে বলেন, জেলায় এ বছর ৩৭ হাজার ৫শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৭ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ আলুর অধিকাংশ এখনও সংরক্ষণ করা যায়নি। কৃষক বেশ কিছু আলু বিক্রি করে দিয়েছে। তবে সংরক্ষণকারীরা সেই আলু এখনও হিমাগারে পাঠাতে বা বাজারজাত করতে পারেনি। জেলায় সচল ৬৮টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ ৪৩ হাজার টন। তিনি জানান, এই হিমাগারগুলো এখনও অনেকটা ফাঁকা। অনেক তাই স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষণ করছে। আবার অনেকে হিমাগারে নেয়ার জন্য আলু বস্তাবন্দী করে রাস্তার ধারে স্তূপ করে রেখেছে। আবার অনেকে আলু এখনও বস্তাবন্দী করতে পারেনি। জমিতে স্তূপ করে রেখে খড়, শুকনো কচুরী এবং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। অন্তত ৩ লাখ টন আলু খোলা আকাশের নিচে রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে। প্রতি কেজি আলুর মাঠের দর ১৫ থেকে ১৬ টাকা। খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। করোনার ত্রাণের সঙ্গে আলু যুক্ত করায় কিছুটা উপকার হলেও বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে কৃষক ও সংরক্ষণকারীদের যেন দিশেহারা অবস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের মুন্সির হাটে নতুন চালু হওয়া সুলতান কোল্ডস্টোরেজে ধারণ ক্ষমতা সাড়ে লাখ বস্তা। এক লাখ ২৫ হাজার বস্তা সংরক্ষণ করা গেছে মাত্র। আরও ২ লাখ ২৫ হাজার বস্তার ধারণ ক্ষমতাই ফাঁকা রয়ে গেছে। মুক্তারপুরের আলী হিমাগারে ৬০ শতাংশ আলু সংরক্ষণ হয়েছে। আর দেওয়ান কোল্ডস্টোরেজে ভর্তি হয়েছে ৮০ শতাংশ। নিশান কোল্ডস্টোরেজে ৬৫ শতাংশ আলু ভর্তি হয়েছে। আবার টঙ্গীবাড়ি হিমাগারে মচিরে অংশ বাদ দিলে আলুর পুরো অংশ অর্থাৎ এক লাখ টনই ভর্তি হয়ে গেছে। তবে এমন হিমাগারের সংখ্যা খুবই কম। সূত্রটি দাবি করেছে গড়ে ৬০ শতাংশ আলু হিমাগারে সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র। শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ি, লৌহজং, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলায় লক্ষ্য করা গেছে বাজারজাত করার জন্য বা হিমাগারে পাঠাতে বিভিন্ন রাস্তার পাশে সারি সারি আলুর বস্তা রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে আসতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে কম। লোকজন তেমন বাহিরে আসছেন না। পাশাপাশি আলু ক্যারিং করতেও জনবল না পাওয়ার পাশাপাশি যানবাহনও মিলছে না। আর যদিও একাজে কোনও কিছু মিলছে তার জন্য বাড়তি অর্থ দিতে হচ্ছে। এতে জনবলের অভাবে সময়মতো আলুর সংরক্ষণে অনেকটা পিছিয়ে পরছেন তারা।
×