ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা-সচেতনতা নিয়ে নারী ফুটবলার জান্নাতুল নাজমা ...

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৭ এপ্রিল ২০২০

করোনা-সচেতনতা নিয়ে নারী ফুটবলার জান্নাতুল নাজমা ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রাম। সেখানকার কৃষক আবুল কালাম আর তার স্ত্রী মা বকুল বেগমের তিন মেয়ে, এক ছেলে। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। চতুর্থ যে সন্তানটি ধরণীতে এল, সেই মায়াকাড়া চেহারার কন্যাটি যে ফুটবল খেলে একদিন শুধু ওই পরিবারের নয়, গোটা দেশেরই গর্বে পরিণত হবে, এতটা ভাবতে পারেননি আবুল-বকুল দম্পত্তি। সুদর্শনা ষোড়শী মেয়েটিকে দেখলেই মনে হবে ঠিক যেন পাশের বাড়ির হাসিখুশি মেয়েটি। তার নাম জান্নাতুল নাজমা। ফুটবলে তার প্লেয়িং পজিশন সেন্টার ব্যাক। ২০১১ সালে যখন ক্লাস ফোরে পড়ার সময় ফুটবলে ‘পায়ে’খড়ি নাজমার। শুরুটা বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে। অংশ নেন ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ আসরে। শেষেরবার চ্যাম্পিয়ন হন কলসিন্দুর স্কুলের হয়ে। ২০১৪ সালে জাতীয় অ-১৪ দলে ডাক পান নাজমা। এরপর খেলেছেন অ-১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ দলেও। পছন্দের ২১ নম্বর জার্সি পড়ে সিনিয়র জাতীয় দলে অভিষিক্ত হবার স্বপ্ন দেখছেন। এছাড়া চান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অধরা শিরোপাটা জিততে। চান দেশের মহিলা ফুটবলকে আরও অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে। সাবিনা খাতুন এবং লিওনেল মেসিকে আদর্শ ফুটবলার মানা নাজমার এখন ফুটবল খেলা বন্ধ। কারণ করোনা ভাইরাস। বাফুফে যখন তাদের মহিলা ফুটবলারদের ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে, তার পরদিনই ১৯ মার্চ নিজের গ্রামে চলে আসেন নাজমা। গ্রামে এসে অনুশীলন করার প্রশ্নে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘আসার সময় কোচ ছোটন ও লিটু স্যার বলেছিলেন বাড়িতে গিয়ে সম্ভব হলে যেন প্র্যাকটিস করি। কিন্তু এখানে এসে পরিস্থিতির কারণে সেভাবে সেটা হচ্ছে না। তবে শিগগীরই অন্তত স্কিপিং এবং কোর প্র্যাকটিস শুরু করবো।’ সর্তকতা হিসেবে সারাক্ষণ বাসাতেই থাকছেন নাজমা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন। সবসময়ই সাবান দিয়ে হাত ধোন, অন্যদেরও তাই করতে বলেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে নাজমা বলেন, ‘দেশে করোনা ছড়িয়েছে প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীরা। ওরাই এজন্য পুরোপুরি দায়ী। তারা তো মোটেও সচেতন নয়। নিজের পরিবারের কথা তারা ভাবেনি, ভাবলে এত বড় ভুল তারা করতো না!’ করোনা থেকে রক্ষা পেতে দেশে অনেকেই থানকুনি পাতা খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাজমার ভাষ্য, ‘আমি কোন থানকুনি পাতা খাইনি। এসব গুজব। সচেতনতাই হচ্ছে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় উপায়।’ নাজমার জানামতে তাদের গ্রামের কেউই এই ভাইরাসে এখনও আক্রান্ত হয়নি। দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউনের কারণে নিন্ম আয়ের মানুষরা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ‘যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত।’ নামজমার অভিমত। করোনা-সন্দেহে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগী মারা যাবার ঘটনায় নাজমার প্রতিক্রিয়া, ‘এগুলো খুবই কষ্টদায়ক খবর। চিকিৎসা পাবার অধিকার সবারই আছে।’ বাড়িতে নাজমার সময় কাটছে তার ভাই-ভাবী, বড় বোনের সঙ্গে গল্পগুজব করে। সামনেই তার এইচএসসি পরীক্ষা। এটা নিয়েও খুব দুশ্চিন্তায় আছেন, ‘অথচ পড়ি না! তবে মা বকা দিলেই পড়তে বসি, যদিও সেটা ফাঁকিবাজি পড়া! (হাসি)। কলসিন্দুর সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে মানবিক বিষয় নিয়ে পড়ছেন নাজমা। সবশেষে করোনা থেকে বাঁচতে সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
×