ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৬ এপ্রিল ২০২০

লালমনিরহাটে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহার ॥ করনো সংক্রামণরোধে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার পেঁয়াজ চাষীদের উৎপাদিত ফসলের উপর। পেঁয়াজ দেশের কোথাও যেতে না পাড়ায় দিন দিন পেঁয়াজের দাম পাইকারী বাজারে কমতে শুরু করেছে। প্রতিমণ পেঁয়াজ পাইকারী বাজারে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কৃষক ফসলের খেতে তুলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে ২৫ টাকা কেজি দরে। সেটা আবার হাট বাজারের দোকানে খচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫টাকা কেজি দরে। একমণ পেঁয়াজ এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরে কৃষক পরিবার গুলো দারুণ খুশিতে। করোনা না হলে পেঁয়াজের দাম আরো বেশি পেত বলে কৃষকের অভিমত। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুণা গ্রামের কৃষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম(৫২), প্রতিবছর৩/৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। এবছর পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে ছিল। তাই এবছর পেঁয়াজ আবাদ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে(প্রতি ৩৩ শতাংশে এক বিঘা)। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হালচাষ করে জমি তৈরি থেকে পরির্চচা, সেচ, সার, কীটনাশক, আগাছামুক্ত করতে শ্রমিকের খরচসহ উৎপাদিত পেঁয়াজ ফসল তোলা পর্যন্ত জমি ভেদে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়। জমির উর্বরতা ভেদে এক বিঘা জমিতে ৩০, ৩৫ ও সর্বোচ্চ ৪০ মন পর্যন্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজার অনুয়ায়ী দেখা যায় এক বিঘা পেঁয়াজ খেতে ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকায়। খরচ বাদে কৃষকের নীট লাভ হচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার টাকায়। পেঁয়াজ ৩ মাসের ফসল। ৩ মাসে এক বিঘা জমি হতে প্রায় ২৪ হাজার টাকার ফসল পাওয়া বর্তমান কৃষিপণ্যের বাজারে বিরাট ব্যাপার। তবে পেঁয়াজ চাষীরা দাবি করেছে পেঁয়াজের দাম আরো বেশি হতো যদি উৎপাদিত পেঁয়াজ সারাদেশের বাজারে যেতে পারতো। করোনার প্রভাবে লক ডাউন থাকায় পরিবহন সমস্যা ও সংকটের কারণে সারাদেশের বাজারে পেঁয়াজ যেতে পারছেনা। শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে পাইকাররা খেত হতে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে। আবার কোন কোন কৃষক হতাশাও প্রকাশ করেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রামণ ঠেঁকাতে ভারত হতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারতেও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলসির মাধ্যমে ভারত হতে পেঁয়াজ আমদানি করলে হয়তো পেঁয়াজ আরো কম দামে বিক্রি করতে হতো। বর্তমান পেঁয়াজের বাজার অনুয়ায়ী কৃষক খুশি। কৃষক পরিবার গুলো তার উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাচ্ছে। দেশিয় উৎপাদিত পেঁয়াজে বাজার সয়লাফ হয়ে গেছে। অথচ দেড়মাস আগে পেঁয়াজের দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। তখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২শত টাকায় বিক্রি হয়েছে। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৭৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছে প্রান্তিক কৃষক। এবছর পেঁয়াজের উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৫ মেট্রিক হয়েছে। এতে জেলায় ১১ হাজার ৬২৫ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সির্ন্দুনা, পারুলিয়া, গড্ডিমারী,হলদীবাড়িসহ তিস্তা নদীর জেগে উঠা পলিমাটিরপড়া চর গুলোতে ব্যাপক আকারে প্রতিবছর পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। এখানে মৌসুমে কৃষক তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রির পর মাচাং পদ্দতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকে। এই সংরক্ষিত পেঁয়াজ কৃষক সারাবছর খায় ও অবশিষ্ট ছোট পেঁয়াজ মৌসুমে রোপন করে। এবছর হাতীবান্ধা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়েছে ৩৯০ হেক্টর জমিতে। এখানকার উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ১টি বিশেষায়িত পেঁয়াজ সংরক্ষণের হিমাগার নির্মাণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। হিমাগার থাকলে সারাবছর সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যেত। ভারত হতে পেঁয়াজ আমদানির নির্ভরতা কমে আসতো।
×