ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুহার ধীর হচ্ছে ইতালি-স্পেনে

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৬ এপ্রিল ২০২০

মৃত্যুহার ধীর হচ্ছে ইতালি-স্পেনে

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালি ও স্পেনে মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধির গতি কমেছে; এই চিত্র দেখা গেছে ফ্রান্সেও। ইরানেও নতুন সংক্রমণের হার কমেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও। তবে হঠাৎ করেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে জাপান ও সিঙ্গাপুরে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও তার চেয়ে বড় শঙ্কা দেখা দিয়েছে মুম্বাইয়ের ধরাবি বস্তিতে সংক্রমণ ঘটায়। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা আগের চেয়ে কমে আসাকে লকডাউনের সাফল্য হিসেবে দেখছেন দেশগুলোর কর্মকর্তারা। ইতালির জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিলভিও ব্রুসাফেরো বিবিসিকে বলেন, “লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাই এতে সহায়তা করেছে।” কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতি কমে যাওয়ার এই ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিপর্যস্ত এই দেশটির এই কর্মকর্তা। ইতালিতে রবিবার ৫২৫ জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। একদিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা দেশটিতে গত দুই সপ্তাহে সর্বনিম্ন। মৃতের সংখ্যায় এখনও শীর্ষে রয়েছে ইতালি; দেশটিতে মোট ১৫ হাজার ৮৮৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ জন, যা বিশ্বে তৃতীয়। আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্পেনে টানা তৃতীয় দিনের মতো মৃতের সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। রবিবার স্পেনে ৬৭৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়ে সিএনএন বলেছে, গত ২৬ মার্চের পর এটাই দেশটিতে মৃত্যু বৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার। স্পেনে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১২ হাজার ৪১৮ জনে, যা ইতালির পর সর্বোচ্চ। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে আড়াই হাজার বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত ২০ মার্চের পর স্পেনে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি এটাই সর্বনিম্ন বলে সিএনএন জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটিতে ৩৪ হাজারের বেশি রোগীর সুস্থ হওয়ার খবরও মিলেছে। রবিবার যুক্তরাজ্যে মৃত্যর সংখ্যা বৃদ্ধিও আগের দিনের চেয়ে কমেছে। দেশটির রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এদিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ব্রিটিশেদের সাহস জুগিয়ে বলেছেন, সুদিন আবার ফিরবে। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৪০৬ জন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ছুঁইছুঁই করছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দেশে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসতে আরও সাত থেকে ১০ দিন বাকি রয়েছে, তারপর সংক্রমণের হার নিম্নগামী হবে। ফ্রান্সে রবিবার ৩৫৭ জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটেছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৪ জন কম। ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি, দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার জন মারা গেছে করোনাভাইরাসে, আক্রান্তের সংখ্যাও ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি যাওয়ার পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও একদিনে প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে জার্মানিতে। দেশটিতে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৪২ জন। এক দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে শতাধিক জন, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার জন। ইরানে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির গতি টানা পঞ্চম দিন কমতে থাকায় দেশটির সরকার আগামী ১১ এপ্রিল থেকে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর কথা ভাবছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মোট ৫৮ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ জন মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ এখন যে শহরে, সেই নিউ ইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে প্রথমবারের মতো আগের দিনের চেয়ে কমেছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। এরপরও সতর্কতায় ঢিল দিতে চাইছেন না নিউ রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। রবিবার নিউ ইয়র্ক রাজ্যে ৫৯৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে, আগের দিন মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৩০। নিউ ইয়র্কে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫৯ জনে। এর মধ্যে নিউ ইয়র্ক শহরে মারা গেছে ২ হাজার ২৫৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় এখনও বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দেশটিতে ৩ লাখ ২৫ হাজার জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজারের বেশি মানুষের। ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিস্থিতির উন্নতির চিত্র দেখা গেলও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে এশিয়ায়। জাপানে হঠাৎ করে রবিবার রোগীর সংখ্যা ৩৩৬ জন বেড়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে টোকিওতে। চীন থেকে সংক্রমিক হওয়ার পর শুরুর দিকেই জাপানে ছড়িয়েছিল নভেল করোনা ভাইরাস, তবে দেশটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। জাপানের মোট ৪ হাজারের মতো মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, তার মধ্যে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিঙ্গাপুরে একদিনে নতুন ১২০ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ হাজার ৩০৯ জন এবং মারা গেছে ৬ জন। ভারতে এখন প্রতি চার দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৩। পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ভারতেরও কম, সেখানে মোট ৩ হাজার ১ ৫৬ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ৪৭ জন। রোববার রাত নাগাদ বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১২ লাখ ৬০ হাজার ১০৪ জনে, এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ১৪৮ জন।
×