ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুয়েত থেকে ৩১৬ বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:০১, ৬ এপ্রিল ২০২০

  কুয়েত থেকে ৩১৬ বাংলাদেশীকে  ফেরত আনা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশে কর্মরত প্রায় এক কোটি মানুষের মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রবিবার রাজধানীর ইস্কানস্থ (প্রবাসী কল্যাণ ভবন) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে (পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত আনা হবে। একইসঙ্গে কুয়েতে ফিরতি ফ্লাইটে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এ তথ্য জানান। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সেলিম রেজা, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ শহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ শামছুল আলম, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রমুখ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর আগেও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে এনেছে সরকার। করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্য করণীয় বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের যাচাই-বাছাই করে দেশে ফেরত আনা হবে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিষয়ে অন্য কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। দেশে ফেরত আনা প্রবাসীকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীরা দেশের সম্পদ। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। বিভিন্ন দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হচ্ছে। ফলে সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম কূটনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত হবে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রাধান্য পাবে। আমাদের এই সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না। দেশের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা তার নাগরিক অধিকার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সরকার খাদ্য, চিকিৎসাসহ সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য সব ধরনের সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে চাহিদা অনুসারে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানবিক বিবেচনায় কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত আনা হবে এবং কুয়েতের সেই ফিরতি ফ্লাইটে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও ইপিএসের আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ১৫০ জন কর্মী এবং সেখানে অধ্যয়নরত ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে কোরিয়ায় পাঠানো হবে। যেসব বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা ইকামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ভিসা বা ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোন কর্মী বিদেশে চাকরিচ্যুত হলে, অথবা নিয়োগকারী কোম্পানি যদি কর্মী ছাঁটাই করে সেক্ষেত্রে তাদের দেশে না পাঠিয়ে সে দেশের অন্য কোন কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থ-ঋণ সহায়তা দেয়া হবে।
×