ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে ১০ টাকা কেজির চাল

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৫ এপ্রিল ২০২০

 আজ থেকে ১০ টাকা কেজির চাল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ রবিবার থেকে চালু হচ্ছে বিশেষ ওএমএস। চলমান করোনা দুর্যোগে কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে সারাদেশে সরকার প্রথমবারের মতো বিশেষ ওএমএস চালু করছে। ভোক্তা পর্যায়ে ১০ টাকা করে চাল বিক্রি হবে। চলমান ওএমএস (আটা) এর পাশাপাশি বিশেষ এই ওএমএস কার্যক্রম চলবে। সপ্তাহে তিনদিন অর্থাৎ রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫ এপ্রিল রবিবার থেকে আগামী জুনমাস পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচী। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত দুর্যোগে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ওএমএসএর ভোক্তা পর্যায়ে চালের মূল্য ১০ টাকা কেজি নির্ধারণের ঘোষণা দেন। সেই প্রেক্ষিতে চালের আগের গুদাম মূল্য ২৮ টাকার পরিবর্তে ৮ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি মূল্য ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকায় পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাই। বর্তমানে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সকলের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই কর্মসূচী চলবে। তিনি বলেন, এতে কেউ কোন প্রকার অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাদ্য অধিদফতরের এক আদেশে বলা হয়- করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট কর্মহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিশেষ এ ওএমএস কর্মসূচী, চলমান ওএমএস (আটা) কর্মসূচীর অতিরিক্ত হিসেবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন জনসাধারণ গৃহে অবস্থান করায় শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। দিনমজুর, রিক্সাচালক. ভ্যানচালক, পরিবহনচালক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকান, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষকে এর আওতায় এনে এই বিশেষ ওএমএস বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মসূচীটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভোক্তর বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত মাস্টার রোল (প্রয়োজ্যক্ষেত্রে মোবাইল নাম্বারসহ) সংরক্ষণ করতে হবে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা যাবে না। এছাড়া উক্ত পরিবারের কেউ যদি খাদ্য বান্ধব অথবা ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এই কর্মসূচীর আওতায় ভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন না। জেলা ও বিভাগীয় শহরে কেন্দ্র প্রতি দুই মেট্রিকটন এবং ঢাকা মহানগরের কেন্দ্র প্রতি তিন মেট্রিক টন করে চাল দৈনিক বিক্রি করা যাবে। জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর ওএমএস বরাদ্দের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির (জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর ওএমএস কমিটির) মাধ্যমে বিদ্যামন ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ঠিক রেখে বিক্রয় কেন্দ্রের স্থান পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবীদের বসবাস কেন্দ্রের নিকটস্থ বস্তি এলাকা অথবা পর্যপ্ত খালি জায়গা আছে এমন স্থানকে অস্থায়ী বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। ভোক্তাপ্রতি পাঁচ কেজি করে চাল বিক্রি করা যাবে। একজন ভোক্তা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সপ্তাহে একবার মাত্র পাঁচ কেজি চাল এই কর্মসূচীর আওতায় ক্রয় করতে পারবেন। সপ্তাহে তিনদিন- রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা প্রতিনিধির উপস্থিতি/তদারকিতে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক বিক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ওএমএস নীতিমালায় বর্ণিত জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর কমিটি সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করবে। খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক সরবরাহকৃত নমুনা অনুযায়ী কার্ড প্রস্তুত করে কার্ডের মাধ্যমে চাল/আটা বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। ডিলারগণ দৈনিক বিক্রয় প্রতিবেদন তদারকি কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষর গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির সভাপতির কাছে প্রেরণ করবে। এদিকে হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর বেনামি বা অবৈধ কার্ড জনপ্রতিনিধি-ডিলারসহ কারও কাছে থাকলে তা রবিবারের (৫ এপ্রিল) মধ্যে জমা দিতে বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর কোন অবৈধ কার্ড ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। সকল জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের (ডিসি-ফুড) কাছে পাঠানো চিঠিতে খাদ্যমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন- শুভেচ্ছা নিবেন, আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সাল থেকে দরিদ্রদের জন্য ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ/ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’ চালু করেছেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিয়ে যাচ্ছেন। ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল ডিলার মারফত কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করা হয়’ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমান খাদ্য সচিব প্রায় তিন মাস পূর্বে সব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিকট তালিকাগুলো হালনাগদ করার জন্য পত্র দিয়েছিলেন। তারপরেও তালিকাসমূহ যদি সম্পূর্ণ হালনাগাদ না হয়ে থাকে তবে এখনি আপনাদের কাছে আমার নির্দেশনা- যদি কোন ডিলার, কোন মেম্বার বা কেউ যদি বেনামি কার্ড সংরক্ষণ করে থাকেন তবে আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তা জমা দেবেন এবং স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতিমালা অনুসরণ করে রিপ্লেসমেন্ট করবেন। চিঠিতে জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের আরও বলা হয়, এই নির্দেশনার পরেও যদি কোন অবৈধ কার্ড ধরা পড়ে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বিষয়টি আপনার সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের অবহিত করবেন।
×