ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক অঙ্কের সুদহার

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৫ এপ্রিল ২০২০

 এক অঙ্কের সুদহার

অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে দেশের সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলো। বুধবার থেকে কার্যকর সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৪ ফেব্রুয়ারির নির্দেশনা মোতাবেক। তবে এর আওতায় ক্রেডিট কার্ড পড়বে না। সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নেয়া ঋণের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে ৯ শতাংশ হারে পরিশোধ। তবে করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কয়েকটি ব্যাংক এখনই তা বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে বলেও খবর আছে। আবার বেসরকারী ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমানতের বিপরীতে ৮-৯ শতাংশ লভ্যাংশও দিচ্ছে। সে অবস্থায় তারা ৬-৯ শতাংশ সুদহার কিভাবে কার্যকর করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ বাংক বলছে, সব ব্যাংকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়ন না করার সুযোগ নেই। এর বিপরীতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য কিছু সুবিধাও দিচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) নেতারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, যথাসত্বর তারা সিঙ্গেল ডিজিট তথা সরল সুদহার কার্যকর করবেন। এই সুদহার হবে দশের নিচে, আমানত ও ঋণের অনুপাতে ৬-৯-এর মধ্যে। এর বিনিময়ে তারা সরকারের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধাও আদায় করে নিয়েছিলেন। যেমন- কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, সরকারী আমানতের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত রাখা ইত্যাদি। সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেও কোন ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করেনি, সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার তো দূরের কথা। ফলে আমানতকারীদের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও বেশ হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। উপরন্তু দন্ডসুদে নাকাল হতেন অনেক উদ্যোক্তা। অন্যদিকে প্রায় সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমে যাওয়ায় আমানতকারীরাও ছিলেন হতাশ। প্রসঙ্গত, ২০১৮-’১৯ অর্থবছরের বাজেটে সুদহার কমাতে ব্যাংকের কর্পোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এছাড়া কম সুদে সরকারী আমানতের টাকার প্রায় অর্ধেক এখন বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোতে রাখা হচ্ছে। সুদ কমাতে ব্যাংকগুলোর অন্যান্য খরচ কমিয়ে আনারও পদক্ষেপ রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ কারণে ব্যাংক ঋণের ও আমানতের সুদহার কমানোর কথা। আশা করা হচ্ছে, সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতি ফিরে আসবে। ইতোমধ্যে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা স্বাগত জানিয়েছেন। এফবিসিসিআই বলছে, ঋণের সুদ কমানোর ফলে নতুন বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। দেশে শিল্প স্থাপনসহ কর্মসংস্থান বাড়বে। ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাংক খাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়। গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর নগদ জমার বাধ্যবাধকতা বা সিআরআর ১ শতাংশ কমিয়ে ৫.৫ শতাংশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারী আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে রাখতেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত বা এডিআর সমন্বয়ের সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হয়। সবই করা হয়েছে দেশের আর্থিক খাতে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য সামনে রেখে। ধারণা করা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কমবে খেলাপী ঋণও। ব্যাংকিং খাতে সুবাতাস বয়ে যাক- এটাই প্রত্যাশা। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মনিটরিং জরুরী। তবে ঋণের সুদ কমাতে গিয়ে যে আমানতের সুদও কমানো হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাও দেখতে হবে অবশ্যই।
×