ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না, নেই শৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০২০

 ত্রাণ বিতরণে সামাজিক  দূরত্ব মানা হচ্ছে  না, নেই শৃঙ্খলা

রশিদ মামুন ॥ ত্রাণ বিতরণে যেমন সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না তেমনি নেই কোন শৃঙ্খলা। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণ সংগ্রহের চিত্র বলছে প্রতিরোধ তো দূরের কথা এতে করে করোনার বিস্তার ঘটতে পারে দ্রুত। বৃহস্পতিবার পুলিশের তরফ থেকে ত্রাণ বিতরণের আগে সহায়তা নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও শুক্রবার একই চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার রাস্তায় সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও একেবারে প্রান্তিক মানুষ বের হয়ে আসছেন ত্রাণ পাওয়ার আসায়। সমাজের বিত্তবান মানুষ এই সময়ে সাধ্যমতো ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করছে। পাড়া মহল্লা থেকে চাঁদা তুলেও অনেকে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। কেউ শুকনা খাবার বিতরণ করছেন আবার কেউ রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন। সমাজের বিত্তবানদের এই উদ্যোগকে সকলে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনা জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন কেবল সামাজিক দূরত্ব তৈরি করেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এজন্য সব মানুষকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। আর খুব বেশি প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে বের হওয়া যাবে। তবে সেক্ষেত্রে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের দূরত্ব থাকতে হবে তিন ফুট। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে বৈশি^ক মহামারী প্রতিরোধে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। আর এই সচেতনতা না বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ত্রাণ বিতরণে সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। কিভাবে এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় তার উদাহরণ এর মধ্যেই দেশে সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সরকারীভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হচ্ছে সেখানে তিন ফুট দূরে দূরে বিত্ত আঁকা হয়েছে। এই বিত্তের মধ্যে এক একজন করে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর একে একে ত্রাণ নিতে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এই চিত্র কোথাও নেই। রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মতিঝিল, শাহবাগ, বাংলামোটর, পরিবাগ, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, খামারবাগ, মহম্মদপুর, শ্যামলিসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ত্রাণ বিতরণে কোন শৃঙ্খলাই নেই। রাস্তার ধারে প্রায় সারাদিনই বিভিন্ন বয়সের নারী এবং পুরুষ মানুষ বসে থাকছেন। সাধারণ রিক্সাচালক, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে বাসাবাড়ির কাজের লোক এসব ত্রাণ পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছেন। আকস্মিকভাবে একটি গাড়ি আসছে। এবার সেই গাড়ির ওপর সব মানুষ এক সঙ্গে হামলে পড়ছে। ভেতর থেকে ত্রাণের ব্যাগ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ নেয়ার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। একবার নিয়েই কেউ যে চলে যাচ্ছেন তেমনটি নয় এরা সারাদিনই যতবার পাচ্ছেন ততবারই নিচ্ছেন। এভাবে সারা দিনের সব গুছিয়ে নিয়ে ঘরে ফিরছেন। এভাবে আবার পরের দিন আসছেন। ঘুরে ফিরে একই মানুষ বারবার ত্রাণ নিচ্ছেন খাবারও নিচ্ছেন। কিন্তু এর বিপরীতে ত্রাণ বিতরণের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা যেত বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব জায়গাতে ত্রাণ দেয়া হবে সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিত্ত অঙ্কন করা যেত। আবার এই ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নেয়া যেত। তাহলে দিনে একবারের বেশি একজন ত্রাণ পেত না। এতে করে আরও বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো। এখন রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। তাদের সামনেই ত্রাণ বিতরণের জায়গাও নির্দিষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা রামপুরা এলাকায় হনুফা বেগমের কাছে জানতে চাইলাম করোনা কিভাবে ছড়ায় জানেন? সোজা সাপ্টা উত্তর না জানি না। আজকে কতবার পেয়েছেন জানতে চাইলে মুচকি হেসে জবাব দিলেন দুই তিন বার। এত বেশি পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে আর উত্তর পাওয়া গেল না। মমিন উদ্দিন জানালেন, গাড়ি যখন আসে তখন তারা সবাইকে দিতে পারে না। ভিড়ের মধ্যে যারাই হাত বাড়িয়ে কাড়াকাড়ি করে নিতে পারে তারাই পায়। নয়তো আর পাওয়া যায় না। যারা কাড়াকাড়ি করে নিতে পারে না তারা পায় না। ফলে কেউ একবারও পায় না আবার কেউ অনেকবার পাচ্ছেন। মমিনও মনে করেন, বিষয়টিকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনা সম্ভব হলে তাদের সমস্যা নেই। রাজধানীর দরিদ্র মানুষের কোন ডাটাবেজ নেই। কেবলমাত্র বস্তি নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করেন তাদের কাছে বস্তিবাসীর একটি তালিকা রয়েছে। তবে সব প্রান্তিক মানুষই বস্তিতে থাকেন না। যাদের সত্যিকার অর্থেই এই দুর্যোগে ত্রাণের প্রয়োজন।
×