ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৪ এপ্রিল ২০২০

  করোনা মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবাধ চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করার পরও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের হাট, বাজার, গ্রামে-গঞ্জে, শহরে, বন্দরের রাস্তাঘাটে মানুষজন ভিড় জমাচ্ছেন। বাঁচার তাগিদে, কাজের সন্ধানে, মানবিকতার খাতিরে, সব কিছু মিলিয়ে অনেকটাই ছাড় দিয়ে চলেছে সরকার। কিন্তু সামনের দুই থেকে তিন সপ্তাহ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অবাধ চলাচল বন্ধে লকডাউন পদ্ধতি কড়াকড়ি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারই সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবাধ চলাচলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ার পর তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ঘুরে মাইকিং করে জনসাধারণকে সচেতন করছেন। র‌্যাবের টহল গাড়ি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জিপ, পিকআপ গাড়ি ও হেঁটে সেনাবাহিনীর দল ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার’ আহ্বান জানানো পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধ করছেন। পাশাপাশি রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। অলিতে গলিতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিতে আজ থেকে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সারাদেশে ছুটি ঘোষণা করে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়ার পর গত কয়েকদিন স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে সেনাবাহিনী। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা আরও জোরদার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হওয়ার পর অন্য দিনের চেয়ে রাজধানীর রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি ও যানবাহন কম দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ রাস্তায় অপেক্ষমাণ বা জটলা করে দাঁড়ানো মানুষের সামনে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি, জিপ এসে বাইরে থাকতে নিষেধ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। গাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় থাকা লোকজনকে হ্যান্ড মাইকে বলতে দেখা গেছে, আপনারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। একই আহ্বান জানিয়ে কয়েকটি এলাকায় মাইকিং করতে দেখা গেছে। এ সময় কয়েকজন পথচারীকে রাস্তায় বের হওয়ার কারণও জানতে চান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে চলে যেতে বলেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার, মুখে মাস্ক পরিধানের আহ্বান জানাতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রচারকালে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় রাস্তায় অযথা ঘোরাফেরা না করার জন্য। জরুরী কাজ না থাকলে সবাইকে বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। একইভাবে পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া ও গন্তব্যের কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলা, মহানগরসমূহ, উপজেলাগুলোতে গত কয়েক দিনে নানা কারণে রাস্তায় নেমে এসেছে মানুষ। রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, যশোর, কুমিল্লাসহ কয়েকেটি জেলা ও বিভাগীয় শহর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যদিনের মতোই মানুষ চলাফেরা করছে। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেনা। বাজারেও রয়েছে মানুষের ভিড়, এই ধরনের প্রতিবেদন এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা বৃহস্পতিবার থেকেই কঠোর হবেন। করোনাভাইরাস ছড়ানো থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষকে অনুরোধ জানাচ্ছেন বাসায় থাকার জন্য। এরপরও জরুরী কাজের কারণ দেখিয়ে কেউ রাস্তায় বের হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দুনিয়ায় আতঙ্ক। কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় আপাতত এর একমাত্র সমাধান বা বাঁচার একমাত্র পথ কোয়ারেন্টাইন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সঙ্গে হাত ধোয়া। সারা দুনিয়ায় মেনে চলছে এই নিয়ম। এই নিয়ম না মানার কারণে চরম মূল্য দিচ্ছে প্রথমে ইতালি, তারপর স্পেন ও সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে। এ কারণে ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আর বাংলাদেশের অবস্থা? সরকার সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রশাসনের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহারের পরও এক শ্রেণীর মানুষের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। মনে হবে যেন সামাজিক দূরত্ব কীভাবে ধ্বংস করা যায় এর প্রতিযোগিতা দেখছেন বাংলাদেশের মানুষ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন নীতি নির্ধারক বলেন, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমায়েত বা সমাবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গরিব মানুষেরও পেট আছে একথা বিবেচনায় ত্রাণ দেয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন কাজ করছে। মানুষ মানুষের পাশে খাদ্য ইত্যাদি নিয়ে এগিয়ে আসছে।
×