ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে ১শ’পরিবার লকডাউনে ॥ ১ জন আইসোলেশনে

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ৩ এপ্রিল ২০২০

নারায়ণগঞ্জে ১শ’পরিবার লকডাউনে ॥ ১ জন আইসোলেশনে

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রসুলবাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যুর বিষয়টি পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ওই মৃত নারীর বাড়িসহ আশপাশের ৬০টি বাড়ির ১শ’টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই লকডাউনের বিষয়টি এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করেছিলেন বন্দর উপজেলার ইউএনও শুল্কা সরকার। ১শ’টি পরিবার লকডাউনের পর ওই নারীর সংস্পর্শে আসায় সদর হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয়কে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর চিকিৎসা প্রদানকারী এক ডাক্তারসহ আরও ১০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানিয়েছেন লকডাউনে থাকা পরিবারের সদস্যদের ওপর পুলিশ কঠোর নজরদারিতে রেখেছে যাতে লকডাউনে থাকা কোন লোক গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই এলাকাটি নিয়মিত পাহারায় রেখেছে। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলোকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন মোঃ জসিম উদ্দিন। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ করে জানান, করোনায় মৃত্যু হওয়া নারীর বাড়িসহ আশপাশের একশ' পরিবারকে লকডাউনের আওতায় রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিবারগুলোর সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে। এই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই নারী কিভাবে এবং কার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সেটি এখনো নির্ণয় সম্ভব হয়নি। আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। জেলা সিভিল সার্জন আরো জানান, মৃতের পরিবারের ৭ সদস্যসহ তাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সদর জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ডায়াগণস্টিক সেন্টারের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে কোয়ারেন্টিানে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স, এ্যাম্বুলেন্স চালকর, প্রাইভেট ল্যাবের টেকনিশিয়ান, এক্সরে টেকনিশিয়ান, আয়া ও চেম্বার এসিস্ট্যান্ট রয়েছেন। পাশাপাশি আইইডিসিআর এর মাধ্যমে আজকালের মধ্যেই লকডাউনের আওতায় রাখা একশ’ পরিবারের সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। তাদের কারো শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, লকডাউন এলাকাটি আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। লকডাউনে রাখা পরিবরাগুলোর খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান। এদিকে শুক্রবার লকডাউন এলাকাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শুক্লা সরকার এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা। এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে সকাল থেকেই জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায় আক্রান্ত হয়ে যে নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে ওই এলাকার ১০০ পরিবারকে লক ডাউনে রাখা হয়েছে। মৃত নারী জানাযায় লাশ দাফন সহ যেসব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী ওই বাড়িতে এসেছিলেন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি সেটি নিয়ে কাজ করছি। আক্রান্তের সংখ্যা যাতে না বাড়তে সেই বিষয়টি বিবেচনা নিয়েই প্রশাসন কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, রসুলপুরের যে অংশটি লকডাউন রাখা হয়েছে তাদের খাবার দাবার সহ যাবতীয় বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই বাড়ির একজন করে সদস্য যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন সেজন্য ভ্যানে করে তরিতরকারি সহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, বন্দরের রসুলপুরের ১০০টি পরিার লকডাউন করা হয়েছে তারা যাতে ঘর থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চারদিকে ঘিরে রেখেছে। জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের সাথে সমন্বয় করে পুলিশ ওই এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রেখেছে। তিনি বলেন জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন যেখানে আমাদের সহায়তা চাচ্ছে আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি তাদের সহায়তা করতে। গত ২৯ মার্চ বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকায় হৃদরোগ ও ঠান্ডাজনিক রোগে আক্রান্ত হওয়া ওই নারীকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর চিকিৎসকের নিউমোনিয়া সন্দেহ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানকার করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেযা হয়। পরদিন ৩০ মার্চ ওই নারীকে কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নেয়ার পর পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে আইইডিসিআরকে খবর দিলে তারা এসে রোগীর মৃতদেহ হতে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রিপোর্ট আসে ওই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এরপর ওই মৃত নারীর বাড়িসহ আশপাশের ৬০টি বাড়ির ১০০টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়।
×