ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে গৃহবধূ হত্যা

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৪ এপ্রিল ২০২০

 বাগেরহাটে গৃহবধূ হত্যা

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কুনিয়া গ্রাম। সে গ্রামের একজন গৃহবধূ ইতি বেগমকে জবাই করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। লুণ্ঠনকারী প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা এমন লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটায়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ পাশবিক তান্ডব চালায় সংশ্লিষ্ট পরিবারটির ওপর। মারধর, বিষয় সম্পদ লুণ্ঠন ও প্রচন্ড হামলা চালিয়ে এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করে। সেখান থেকে সহজ সরল গৃহবধূরাও রক্ষা পায়নি। সদ্য বিবাহিত বধূ ইতি বেগম এমন নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ করে পুরো হামলার বিবরণ বলে দেয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে দুর্বৃত্তরা ইতি বেগমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয় চরম অমানবিক সহিংসতায়। দুঃখজনক হলো হামলার শিকার পরিবার দুটি ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানালেও প্রতিকার পায়নি। পুলিশ সদস্যরা একবার অকুস্থল ঘুরে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে, যা প্রত্যাশিত নয়। আরও দুঃসাহসী হয়ে ওঠে দুর্বৃত্তরা। দ্বিতীয়বার আক্রমণ করতেও তারা পিছপা হয়নি। সিন্দুক ভাঙ্গা থেকে শুরু করে গরু, ছাগল, কবুতর নিয়ে যাওয়াসহ মারধর সব অপকর্ম করে তারা হামলার স্থান থেকে বের হয়ে যায়। মরিয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিচার চেয়ে ব্যর্থ হওয়া পরিবারটি শেষমেশ দুবর্ৃৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়। বাদী হয়ে মামলাটি করেন ইতি বেগমের বড় জা পরিবারের আরেক গৃহবধূ সানজিদা বেগম। হামলার সময় বাদী সানজিদা বেগমও দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রমণের শিকার হন। কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সানজিদা অভিযোগ করেন, তারা সবাই মিলে তাদের পরিবারটির ওপর নগ্ন হামলা পরিচালনা করে। স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলসহ শতাধিক কবুতরও নিয়ে যায় লুণ্ঠনকারীরা। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা অনবরত হুমকি দিতে থাকে পরিবার দুটিকে। মঙ্গলবার থানায় মামলা করার পর অভিযুক্তরা আরও বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে। তারই জের হিসেবে ছোট জা ইতি বেগমকে জবাই করে। সানজিদা মনে করেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ন্যূনতম ব্যবস্থাও যদি নেয়া হতো তাহলে এমন পাশবিক হত্যাযজ্ঞটি ঘটতে পারত না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে অভিযুক্তরা কেন সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। যারা হামলা ও লুণ্ঠনের মতো অপকর্ম করে, দিবালোকে মানুষের বাড়ি আক্রমণ করতে পারে তাদের এমন দুঃসাহস আর দুর্বৃত্তায়নের মূল শক্তিটা কোথায়? যত বড় অপরাধী চক্রই হোক না কেন কোন প্রভাব প্রতিপত্তিশালী শক্তি তাদের পেছনে কতখানি মদদ যোগাচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরী। দেশ যখন করোনাভাইরাসের মতো চরম সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে জনগণ এক জোট হয়ে লড়াইয়ে নেমেছে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বটেই সামরিক জোয়ানরাও আজ সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এমন দুঃসময়ে কিভাবে এই জঘন্য ঘটনা ঘটতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজর এড়িয়ে? শুধু তাই নয়, অভিযোগ করার পরও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। এমনটা হওয়া তো সঙ্গত নয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যখন সারাদেশকে ভয়ে, আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায় গ্রাস করেছে তেমন ক্রান্তিকালে লুটতরাজের মতো চরম অপতৎপরতা এক অমানবিক অপরাধ এবং মনুষ্যত্বের ভয়ঙ্কর স্খলন। কোন সভ্যতা বিবর্জিত বর্বর যুগে আমরা বাস করছি? শেষ অবধি অপরাধীরা ঠিকঠাক ধরা পড়বে কিনা এমন আশঙ্কা হয় পরিবারটির। এমন অমানবিক নির্যাতন আর সহিংসতাকে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। নারীর ওপর সহিংসতা কি এই করোনাকালেও ঘটতে থাকবে? আমরা দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
×