ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রয়োজনে বাইরে থাকা মানুষকে ঘরে ফেরানো হচ্ছে

রাজধানীজুড়ে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৩ এপ্রিল ২০২০

  রাজধানীজুড়ে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বিনা প্রয়োজনে বাইরে থাকা লোকদের ঘরে ফেরাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিন দিন কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। বৃৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে রাস্তায় থাকা যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে। অহেতুক বাইরে থাকা ব্যক্তিদের ও যানবাহনকে ঘরে ফেরাতে কঠোর হতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বিনা প্রয়োজনে বাইরে থাকা ব্যক্তিদের ঘরে ফেরাতে প্রয়োজনে আরও কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে। তবে জরুরী পেশায় জড়িত ব্যক্তি ও যানবাহন এমন নির্দেশনার বাইরে থাকবে বলে ঢাকা মহানগর পুলিলশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যেই ঢাকার অলিতে গলিতে মাইকিং করে নগরবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। দেশবাসীকে বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে এর কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার সব বড় সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। বিনা প্রয়োজনে বাইরে থাকা লোকদের ঘরে ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তারা। তল্লাশির হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না রিক্সাও। কোন যানবাহনে একাধিক ব্যক্তি থাকলে, তাদের মধ্যে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। না থাকলে তাদের যে কোন একজনকে বা দুই জনকে যানবাহন থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপদ দূরত্বে থেকে চেক করছেন। তল্লাশির সময় অনেকে জরুরী সেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও যানবাবহনও নানাভাবে ঝামেলার শিকার হচ্ছে। ঢাকায় জীবাণুনাশক ছিটানো অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার অনেক এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঢাকার ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচে বসানো চেকপোস্টে যানবাহনগুলোকে চেক করতে দেখা যায়। সেখানে প্রায় পুরো রাস্তায় পুলিশ স্টিলের বক্স ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। শুধু একটি বড় গাড়ি যাতায়াত করতে এমন জায়গা রাখা হয়েছে। ব্যারিকেডের সামনেই দেখা গেল অন্তত দশ পুলিশ সদস্য ও উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। আর ব্যারিকেডের সামনেই অবস্থান করছেন তিন পুলিশ সদস্য। অনেক দূর থেকেই সেখান দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে চেকপোস্টে থামার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল। গাড়ির জানালার কাঁচ খুলে ভেতরে কতজন লোক আছে তা দেখা হচ্ছিল। গাড়িতে থাকা লোকজনদের প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেকের দূরত্ব কমপক্ষে তিন ফুট আছে কি না তা দেখা হচ্ছিল। যেসব গাড়িতে এমন দূরত্ব বজায় ছিল, সেসব গাড়ি কি কারণে বের হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হচ্ছিল। তা যৌক্তিক হলে বা সেই ধরনের কোন প্রমাণাদি দেখানোর পরেই ওইসব গাড়ি যেতে দেয়া হচ্ছে। এমন তল্লাশির হাত থেকে বাদ পড়েনি রিক্সাও। মোটরসাইকেলে সুস্থ যাত্রী থাকলে তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আর কেউ অসুস্থ থাকলে তাদের নেহায়েত মানবিক কারণে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। প্রতিটি প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনে এভাবেই তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঢাকার মৌচাক ও খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে রাস্তার একপাশ রেললাইনের সিগন্যাল দেয়া লোহার পাইপ বার দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এক পাশের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে। সেখানে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এসব জায়গায় রিক্সা থেকে অনেক যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকার প্রতিটি প্রবেশ পথ যেমন গাবতলীর পর্বতা সিনেমা হলের সামনে, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী ব্রিজের ঢালে, সায়েদাবাদ, তুরাগ থানাধীন দৌড় এলাকায়, মিরপুর মাজার রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। চেকপোস্টে সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি পুলিশের তরফ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে করণীয় সর্ম্পকে মাইকিংও করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে থাকা লোকদের ঘরে ফেরাতেই পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং তা মানতে বাধ্য করতে সরকারের তরফ থেকে কড়া নির্দেশনা এসেছে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকার প্রায় বড় বড় সব রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। চেকপোস্টে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে। প্রথমেই দেখা হচ্ছে, যে বাহনটি রাস্তায় নেমেছে, সেই বাহনটি রাস্তায় নামার যৌক্তিক কারণ আছে কি না। যৌক্তিক কারণ থাকলে বা সে ধরনের কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারলে প্রথমেই গাড়িটিকে চলার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত গাড়ির ভেতরে থাকা লোকজনদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। থাকলে ওইসব গাড়ি যেতে কোন বাধা দেয়া হবে না। মূলত বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে থাকা লোকদের ঘরে ফেরাতেই এমন কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা আছে পুলিশের প্রতি। তবে তল্লাশি নামে অহেতুক কাউকে হয়রানি না করতে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। জরুরী সেবাদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও যানবাহনের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি কমিশনার জরুরী সেবাদান ও এর সঙ্গে জড়িত যানবাহনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। জরুরী সেবাদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও যানবাহন এমন নির্দেশনার বাইরে থাকবে। তবে চেকিংকালে তাদের প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি দেখাতে হবে। তারপরেও কোন পুলিশ সদস্য যদি ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশ অমান্য করে কাউকে হয়রানি করেন, ওইসব পুলিশ সদস্যের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। চেকিংকালে পুলিশকে মানুষের প্রতি অত্যন্ত বিনয়ী আচরণ করতেও বলা হয়েছে। এদিকে অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবারও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ঢাকার রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে। টহল গাড়ির সামনে, পেছনে ও দুই পাশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ও নিজেকে রক্ষা করতে করণীয় সংবলিত ব্যানার ঝুলছে। এছাড়া মাইক দিয়ে নগরবাসীকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। নিতান্তই প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। বাসা বাড়িতে ফিরে সাবান দিয়ে ভালভাবে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে বলা হচ্ছে। অহেতুক হাত দিয়ে নাক মুখ স্পর্শ না করতে বার বার মাইকযোগে সতর্ক করা হচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবারও ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় আড়াইহাজার ছিন্নমূল মানুষকে একবেলা খাবার দেয়া হয়েছে। সরকারের আগের ঘোষিত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির দিন পর্যন্ত খাবার দেয়া অব্যাহত রাখবে পুলিশ। পরবর্তীতে সরকার ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বর্ধিত সাধারণ ছুটির দিন পর্যন্ত পুলিশের তরফ থেকে ৫০টি থানার অধীন আড়াইহাজার ছিন্নমূল মানুষকে একবেলা করে খাবার দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের তরফ থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান। এদিকে ঢাকার ডিএমপির তরফ থেকে দুই বেলা জীবাণুনাশক ছিটানো অব্যাহত আছে। পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসা, সশস্ত্র বাহিনীও জীবাণুনাশক ছিটানো অব্যাহত রেখেছে। ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি ও উর্দুভাষী অবাঙালীদের বিহারী ক্যাম্পগুলোতে অধিক হারে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। এসব এলাকার ভেতরে নিয়মিত পরিষ্কার করার কাজ চলছে। মানুষ যাতে ঘরে থাকে এজন্য সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষ ও দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অব্যাহত আছে। তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তবে ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের তরফ থেকে কর্মহীন হয়ে পড়া ঢাকার বাসিন্দাদের বাড়ি ভাড়া মওকুফ করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও কোন ইতিবাচক কোন ঘোষণা আসেনি।
×