ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার কত দূর?

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৩ এপ্রিল ২০২০

  করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার কত দূর?

রাজন ভট্টাচার্য ॥ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত গোটা বিশ^। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রীতিমতো অসহায়। তবে প্রতিরোধ যুদ্ধ থেমে নেই। দেশে দেশে করোনা রোধে চলছে নানা রকম প্রস্তুতি। গবেষণা। গোটা পৃথিবীর নজর এখন প্রতিষেধক আবিষ্কারের দিকে। বিশে^র ৩৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান টিকা আবিষ্কারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, চীনসহ বড় বড় রাষ্ট্রগুলো গবেষণার কাজে নিজেদের যুক্ত করেছে। মানুষ ও প্রাণীদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। খোদ আমেরিকাও ইতোমধ্যে ৪৫ জনের মধ্যে ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালিয়েছে। ফল পেতে সময় লাগবে অন্তত কয়েক মাস। সব মিলিয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারে এখন পর্যন্ত কোন আলো নেই। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যে কোন সময় আসবে সুখবর। অপেক্ষা এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাইলফলকের। চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাস এখন বিশ^বাসীর কাছে এক মহা আতঙ্কের নাম। সবচেয়ে উন্নত ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যু। তেমনি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মহাচিন্তিত ট্রাম্প প্রশাসন। স্পেন ও ইতালিতেও রীতিমতো মহামারী চলছে করোনায়। পৃথিবীর ২০০-এর বেশি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে নয় লাখ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৯৪ হাজারের বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬, সুস্থ হয়েছেন ২৬, মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। গবেষকরা বলছেন, আজ থেকে শত বছর আগে পৃথিবী আর এক মহামারীর কবলে পড়েছিল। এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। তখন বিশ্বে জনসংখ্যা ছিল দেড়শ’ কোটি। আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। আর মারা গিয়েছিল আনুমানিক পাঁচ কোটি কিংবা তারও বেশি সংখ্যক মানুষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৮ সালের শুরুতে ওই মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছিল ১৯২০ সালে। অস্ট্রেলিয়ায় নতুন গবেষণা শুরু ॥ দুই এপ্রিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় এমন দুটো সম্ভাব্য টিকা বা ভ্যাকসিনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, যা একটা মাইলফলক হতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে। এই দুটো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে পরীক্ষাগারে প্রাণীদের ওপর। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিটিকালসকে এই পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সায়েন্স এজেন্সি এটা দেখবে যে, ভ্যাকসিনগুলো কতটা কার্যকর এবং তা মানুষের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ। তবে এর আগেই মানুষের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষা হয়েছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এই পরীক্ষা হয়, কিন্তু সেখানে কোন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা হয়নি। তবে বিশ্বজুড়ে নানা জায়গায় দ্রুত গতিতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন বলছে, এটাই করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন পরীক্ষা হতে যাচ্ছে যেটা কোন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এই ভ্যাকসিন তৈরিতে পুরো বিশ্বের যে সমন্বয় এবং যে গতিতে তা করা হচ্ছে, তা নজীরবিহীন। কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের ড. রব গ্রেনফেল বলেছেন, আমরা এখন যে অবস্থায় আছি সেখানে পৌঁছাতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগে। কিন্তু মাস দুয়েকের মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছেছি। কিভাবে কাজ করবে এই টিকা? অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ বিজ্ঞান ও শিল্প কারখানা গবেষণা সংস্থা, যা সংক্ষেপে সিএসআইআরও নামে পরিচিত, বলছে যে গত কিছুদিন ধরেই ছোট প্রাণী ও স্তন্যপায়ীদের ওপর ভ্যাকসিনের নানা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই প্রাণীগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রমাণিত। কোভিড-১৯’র পেছনে রয়েছে সার্স- কোভ-২ ভাইরাস। এর সঙ্গে লড়াই করতে এই মুহূর্তে বিশ্বে ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। সিএসআইআরও একটি বৈশ্বিক সাহায্য নিয়ে এই মহামারী রোধের কাজ করছে। জুন মাসের মধ্যে ফল আসবে বলছে বিশ্লেষকরা ॥ কবে ফল পাবে বিশ্ব। বিজ্ঞানীরা বলছে, প্রাণীর ওপর পরীক্ষার প্রাথমিক ফল আগামী জুন মাস নাগাদ পাওয়া যেতে পারে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে এটার ক্লিনিকাল পরীক্ষা হবে- যা করা হবে বিশ্বের অন্য কোন ল্যাবে। এভাবে বাজারে এই ওষুধ আনার গতিও ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, একটা টিকা তার পরীক্ষা ও গুণগত মানের পর্যায়ে উত্তীর্ণ করতে কমপক্ষে ১৮ মাস প্রয়োজন হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনটি অন্য আরেকটি পরীক্ষাগারেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের যে নিয়মনীতি আছে তাতে এটা কতটা সফল। বিশ^জুড়ে আবিষ্কারের দৌড় ॥ মূল কথা হলো কোভিড-১৯ রোগের প্রতিষেধক কে আগে বার করবে, সেই দৌড় চলছে এখন বিশ^জুড়ে। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৩৫টির প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ টিকা তৈরির চেষ্টা জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এক ধাপ পেরিয়ে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রাণীদেহে এই প্রতিষেধক প্রয়োগের নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের ওপর প্রথম এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে বোস্টনের বায়োটেকনোলোজি কোম্পানি মডার্না থেরাপিউটিকস। গবেষণার এই ত্বরিত গতির জন্য চীনের একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য বলে জানাচ্ছে গার্ডিয়ান। কারণ তারাই শুরুতে সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসটির জিনোমের নমুনা নিয়ে তা জানিয়েছিল সবাইকে। গত জানুয়ারিতে চীনের কাছ থেকে এই ভাইরাসের জিনোম নমুনা মেলার পর থেকেই বিশ্বের গবেষণাগারে শুরু হয় নোভেল করোনাভাইরাসের অনুলিপি তৈরির চেষ্টা। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করে কিভাবে এই ভাইরাস মানুষের শরীরের কোষগুলোকে আক্রান্ত করে; যার কারণে মানুষ অসুস্থ ও মৃত্যুঝুঁকিতেও পড়ে। কোভিড-১৯ প্রতিষেধক তৈরিতে অর্থ জোগান দিচ্ছে অসলোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সেপি)। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গার্ডিয়ানকে বলেন, আর সব করোনাভাইরাসে টিকা কিভাবে তৈরি করা যায়, এই চিন্তা করেই দ্রুতগতিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। মেরিল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নোভাভ্যাক্স বলছে, মার্সের সময়ে তৈরি টিকাগুলো এখন মানুষের শরীরে পরীক্ষার জন্য প্রয়োগ করা সম্ভব। কোভিড-১৯’র টিকা তৈরির দৌড়ে আছে অন্তত ৩৫টি প্রতিষ্ঠান। মার্স প্রাদুর্ভাবের সময় তৈরি হওয়া প্রতিষেধক থেকেই নতুন করোনাভাইরাসের টিকা বানানোর কাজটি এগিয়ে নিয়েছে মডার্না থেরাপিউটিকসও। বিজ্ঞানীরা সার্স ভাইরাসটির সঙ্গে নোভেল করোনাভাইরাসের জিনোমের গঠনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাই নতুন এই ভাইরাসটির আরেকটি নাম দেয়া হয়েছে সার্স-সিওভি-২। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদনের মতো পদ্ধতি অনুসরণ করতে গেলে তিনটি ধাপ পেরিয়ে হাতে আসতে পারে এই ভাইরাসের টিকা। প্রথম ধাপে যুক্ত করতে হবে একাধিক স্বেচ্ছাসেবক। যাদের শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করে তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। দ্বিতীয় ধাপে এই পরীক্ষা চালানো হবে কয়েক শ’ কোভিড-১৯ রোগীর ওপর। এতে দেখার বিষয় হলো, এই টিকা প্রয়োগের পর তাদের আরোগ্য মিলছে কি না? সর্বশেষ ধাপেও আরও কয়েক শ’ লোকের ওপর এই টিকার প্রয়োগ করে দেখতে হবে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, এই ভাইরাসটি যেমন মানুষের জন্য নতুন, তেমনই এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে অনেক নতুন প্রযুক্তি। সাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের ব্রুস জিলিন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই টিকা চালু করার তোড়জোড় চলছে; তবে এখানে কোন শর্টকাট নেয়ার সুযোগ নেই। আর এসব কারণেই সাধারণ মানুষের জন্য টিকার অনুমোদন হতে হতে সাধারণত এক যুগও লেগে যায়। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বিভাগের অধ্যাপক এ্যানেলিস ওয়াইল্ডার-স্মিথ বলেন, আর সব ভ্যাকসিনোলজিস্টদের মতো আমিও মনে করি না যে ১৮ মাসের আগে এই টিকা চালু করা সম্ভব। তবে টিকা অনুমোদন হলেও সারা বিশ্বে এর যা চাহিদা, সেই অনুপাতে জোগান দেয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব নয়, বলছে গার্ডিয়ান। ওয়াইল্ডার-স্মিথ বলছেন, টিকা চালু হওয়ার আগেই এই মহামারীর বিপর্যয়ের সূচক অনেক ওপরে উঠে তারপর আবার নেমে আসবে। তবে টিকা অবশ্যই অসংখ্য প্রাণ বাঁচাতে পারে; বিশেষত যদি এই মহামারী পুনরায় দেখা দেয়। আর তার আগে পর্যন্ত সংক্রমণ এড়াতে ভাল করে হাত ধোয়ার বিকল্প আর মিলছে না। জনসন এ্যান্ড জনসন ॥ কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করবে শিশুদের উপযোগী জিনিসপত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা জনসন এ্যান্ড জনসন। সোমবার ওই ঘোষণার পরেই জনসন এ্যান্ড জনসনের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, জরুরী ভিত্তিতে কোভিড-১৯’র টিকা বানানো শুরু করবে জনসন এ্যান্ড জনসন। আগামী বছরের গোড়ার মধ্যে ওই ওষুধ হাতে এসে যাওয়ার কথা। আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই মানুষের ওপরে ওই টিকা পরীক্ষা করা হবে। যদিও জনসন আদতে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা নয়। তা সত্ত্বেও কোভিড-১৯’র টিকা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম এগিয়ে এসেছিল এই সংস্থাটিই। জনসন এ্যান্ড জনসনের সিইও এ্যালেক্স গোরস্কি জানান, এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সঙ্কট চলছে। এই পরিস্থিতিতে ওই টিকা তৈরিতে আমাদের দিক থেকে যতটা সম্ভব তা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটি বিবৃতিতে সংস্থার তরফে আরও জানানো হয়েছে, আমেরিকায় টিকা তৈরির পরিকাঠামো ও ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে জনসন এ্যান্ড জনসন। এ দিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের তৈরি টিকাটি দেশের বাইরেও পরীক্ষার কথা ভাবছে বেজিং। চীনের এক গবেষক সম্প্রতি জানান, ভাইরাসের কেন্দ্র উহানের ওপরে পরীক্ষা সফল হলে অন্যান্য দেশেও তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। চাইনিজ একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য চেন ওয়েই জানান, সরকারের অনুমতি অনুসারে গত ১৬ মার্চই উহানে টিকাটির প্রথম ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এপ্রিলে তার ফল হাতে আসার কথা। চীনে থাকা বিদেশীদের ওপরেও ওই টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানান চেন। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক পরীক্ষার পরে টিকাটি যদি সুরক্ষিত ও সফল প্রমাণিত হয়, তবে টিকাটিকে পরীক্ষার পরবর্তী ধাপগুলোয় নিয়ে যাওয়া হবে। বিশ্বজুড়ে যা পরিস্থিতি, তাতে টিকাটি কাজ করলে কোভিড-১৯ অতিমারি অনেকটাই রুখে দেয়া যাবে বলে মনে করেন চেন। ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে চীনে। সে দেশের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর বিজ্ঞানীরা বেশ দ্রুত ভাইরাসটির জেনেটিক ক্রম (জেনেটিক সিকুয়েন্স) শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যাতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এর টিকা আবিষ্কারে কাজ শুরু করতে পারে। জেনেটিক সঙ্কেত জানা থাকলে টিকা তৈরিতে বিজ্ঞানীদের আর ভাইরাসটির নমুনার প্রয়োজন পড়বে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও দ্য ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন অনুসারে, তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ)-এর একটি নতুন গবেষণা দল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য টিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে পারে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যালার্জি এ্যান্ড ইনফেকশনস ডিজিসেস-এর পরিচালক ড. এ্যান্থনি ফওসি। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে এনআইএইচ’র ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যালার্জি এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ছিলেন। এই সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব ভাইরাস নিয়ে কাজ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এইচআইভি, ইবোলা ও জিকা। যুক্তরাষ্ট্রের ফল কবে জানা যাবে ॥ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে স্থানীয় সময় গত সোমবার চারজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে এই টিকা দেয়া হয়। তবে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা বুঝে উঠতে কয়েক মাস সময় লাগবে। সিয়াটলে বসবাসকারী দুই সন্তানের মা জেনিফার হলার প্রথম এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। ৪৩ বছর বয়সী এই স্বেচ্ছাসেবী বলেন, করোনাভাইরাসের কাছে এই মুহূর্তে আমরা সবাই অসহায়। এটা আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ যে আমি কিছু করতে পারছি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানায়, এই ভ্যাকসিন ফলপ্রসূ হবে কিনা তা জানতে কয়েক মাস লেগে যাবে। এছাড়া এই ভ্যাকসিন বাজারে আসতে এক থেকে দেড় বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। করোনা ভ্যাকসিন তৈরি দলের বিজ্ঞানী ড. লিসা জ্যাকসন বলেন, তারা সবাই এই জরুরী অবস্থায় যতটুকু পারেন তা-ই করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের অর্থায়নে এক মাস ধরে মানবদেহে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে। কমপক্ষে ৪৫ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে করোনার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে।
×