ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩ এপ্রিল ২০২০

 সঙ্কটে শিক্ষা ব্যবস্থা

বিশ্বসহ সারাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল পার করছে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দেশ এখন স্থবিরতার চরম দুঃসময়ে। সময় মতো কোন কাজই যেন ঠিকঠাক হচ্ছে না। সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক কার্যকলাপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্থবিরতায় সারাদেশ এক বিপন্ন আর দুর্যোগের আবর্তে। সবচাইতে বেশি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় দুঃসহ সময় অতিক্রম করছে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম। করোনাভাইরাসের নৃশংস ছোবলে দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল শিক্ষার্থীদের সংসদ টিভিতে শ্রেণীকক্ষের পাঠদান শুরু হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনার দুর্ভোগ মেটাতে আরও যে কত সময় পার করতে হবে তেমন অনুমান করাও কঠিন। আশঙ্কা করা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির অনুকূল পর্যায় দৃশ্যমান হতে ব্যাহত হবে শিক্ষার্জন। প্রথম নেতিবাচক প্রভাবটি আসবে শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। কোমলমতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীরা পড়বে বেশি বিপাকে। এখানে বছর নষ্ট করার সময় একেবারেই থাকে না। দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে পড়বে এসএসসি/এইচএসসি পরীক্ষাও। সঙ্গত কারণে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষাও নির্ভর করছে করোনার সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। ইতোমধ্যে সব ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং সময়মতো সমস্ত কার্যক্রম শুরু হলে ১২ এপ্রিল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তার কর্মবিধি নিয়ে এগিয়ে যাবে। আর এর ব্যত্যয় হলে দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে, যা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারে। ‘আমার ঘর, আমার স্কুল’ নামে সংসদ টিভি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে শ্রেণী পাঠদান কর্মসূচী শুরু করেছে। তবে তা স্থায়ী কোন সমাধান নয়। সাময়িক উপস্থিত বিপর্যয়কে মোকাবেলা করা মাত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক চালু করা এই টিভির শিক্ষা কার্যক্রম কতখানি ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী দেশের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেখানে সংসদ টিভি দেখা যায় না। ফলে একটি বড় অংশ এই পাঠদান থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে। সবাইকে এক সঙ্গে কর্মবিধির আওতায় আনতে না পারলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শুভ সঙ্কেত দৃশ্যমান হবে না। তার মধ্যে যদি করোনার প্রকোপ কোনভাবে থামানো না যায় তাহলে অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়ে যাবে শিক্ষা কার্যক্রম। এইচএসসি পরীক্ষার সময় এলেও তা শুরু করা সম্ভব হয়নি করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশ অবরুদ্ধ হওয়ায়। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীকে এই দুঃসময়ে চরম বিপর্যয়কে মোকাবেলা করতে হবে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন অশনিসঙ্কেতের কালো ছায়া থেকে বাদ পড়বে না কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও। যদিও ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে শুরু করেছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মবিধি শুধু তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামলানো কঠিন। অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব দুর্দশা কেটেও যাবে। তেমন সম্ভাবনা থেকে আমরা ভাল অনেক কিছুই আশা করতে পারি। আবার প্রতিকূল অবস্থার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।
×