ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেউ না খেয়ে থাকবে না

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩ এপ্রিল ২০২০

কেউ না খেয়ে থাকবে না

করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই সজাগ ও সচেতন থেকেছেন এবং তদনুযায়ী পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন সময়ে সময়ে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন সারাদেশে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত ডিসি, পদস্থ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবরাও অংশগ্রহণ করেন। মনে রাখতে হবে যে, সরকার জাতীয় পর্যায়সহ সর্বত্র জনসমাগম স্থগিত করতে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় অনুষ্ঠান বাতিল করে সীমিত ও সংক্ষিপ্ত করেছে। এসব অনুষ্ঠান মূলত পালন করা হয়েছে টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে। আসন্ন পয়লা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষের জাতীয় অনুষ্ঠানমালাসহ রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান, চারুকলা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং শহর-বন্দর-গ্রাম-গঞ্জে অনুষ্ঠেয় মেলা-সমাবেশ-পার্বত্য অঞ্চলে বৈসাবী বাতিল করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আপাতত পারস্পরিক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সঙ্গনিরোধই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। প্রতিবেশী দেশ ভারত পাকিস্তানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই চলছে লকডাউন বা শাটডাউন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এতে জাতীয় আর্থিক ক্ষতিসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ হলেও ইতিবাচক কাজও হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ গতি কমেছে অনেকাংশে। সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে প্রধানমন্ত্রী কিছু প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ছয়মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও আর্থিক প্রণোদনা দুর্গতদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়া, দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ইত্যাদি। মাঠপর্যায়ে কাজটি বাস্তবায়ন করতে হবে ডিসি, টিএনও অফিসকে। এ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সে ক্ষেত্রে আদৌ কোন দুর্নীতি-অনিয়ম সহ্য করা হবে না, বরং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশে কেউ অভুক্ত থাকবে না। খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে এবং যাবতীয় প্রণোদনা দেয়া হবে কৃষকদের। সরকার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশব্যাপী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করেছে ‘লকডাউন’। লকডাউন চলাকালীন সব ধরনের সুপার শপ, পাবলিক প্লেস, চেন শপ, মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স এমনকি মসজিদের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ থাকবে। মোটকথা, এ সময়ে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা ছাড়া সব ধরনের একটিভিটিজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে প্রশ্ন- এই অবস্থা চলবে কতদিন ধরে? জাতীয় ও বিশ্ব অর্থনীতিরই বা কি হবে? স্বেচ্ছা নির্বাসন তথা সেফ কোয়ারেন্টাইন আরও দীর্ঘ হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা সামলানো হবে দুঃসাধ্য। বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি নিয়ে ইতোপূর্বে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছিলেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। তার আশঙ্কাই বুঝি শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্ব মন্দার কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুঁকে দিয়েছে করোনাভাইরাস, যা বর্তমানে চিহ্নিত কোভিড-১৯ অভিধায়। প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক যোগাযোগ ও ব্যবসাবাণিজ্য। তেলের বাজারে নেমেছে ধস। মাত্র ২৫-৩০ ডলার প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে তেল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য অন্যান্য শিল্পপণ্যেও। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া, সুতাসহ নানা পণ্যের সরাসরি বাণিজ্য থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এই মহাসঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার পথ ও পদ্ধতি বের করতে হবে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দসহ অর্থনীতিবিদদের। এর পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে করোনার প্রতিষেধক ও টিকা আবিষ্কারে। তবে এই সঙ্কটেও বাংলাদেশের যেটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তা হলো, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। তরিতরকারী, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস-দুধ-পোলট্রিতেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ তো দূরের কথা, খাদ্য সঙ্কটেরও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এখন দরকার নিয়মিত বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসন সেদিকে দৃষ্টি রাখছে প্রতিনিয়ত। প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই আত্মবিশ্বাসই প্রতিফলিত হয়েছে, যেটি সাহস ও শক্তি জোগাবে সাধারণ মানুষ ও কৃষককে।
×