ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রী লন্ডনে, তাই উদ্বিগ্ন তকলিস!

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২ এপ্রিল ২০২০

স্ত্রী লন্ডনে, তাই উদ্বিগ্ন তকলিস!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সিলেটের সন্তান তিনি। বয়স ২৪। উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। নেইমারের গুণমুগ্ধ তিনি। পেশাদার ফুটবলার। প্লেয়িং পজিশন স্ট্রাইকার। কদমতলা সংসদ তার ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাব (২০১০)। তারপর একে একে খেলেছেন টিম বিজেএমসি, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। এখন খেলছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। ক্লাব ক্যারিয়ারে জিতেছেন দুটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি ফেডারেশন কাপ এবং একটি কিংস কাপের (ভুটানে অনুষ্ঠিত) শিরোপা। এই পাঁচটি শিরোপাই জিতেছেন শেখ জামাল ধানমণ্ডির জার্সিতে। নতুন ক্লাব রাসেলের হয়ে জিততে চান লিগের শিরোপা। যদিও এবারের লিগে ৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে অষ্টম স্থানে আছে ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেল। দলের তেমুর-লেস্তের ফরোয়ার্ড পেদ্রো হেনরিক এবং উইঙ্গার মোহাম্মদ আবদুল্লাহসহ কয়েকজন খেলোয়াড় ইনজুরি পড়ায় দলের শক্তি অনেকটাই কমে যায়, তাই লিগে প্রত্যাশিত শুরুটা হয়নি রাসেলের-জনকন্ঠকে এমনটাই জানান তকলিস। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন হেমন্ত, মুন্না, বাবলুসহ আরও কয়েক কুশলী পারফরমারদের নৈপুণ্যে এই ঘাটতি পূরণ করে পয়েন্ট টেবিলে ভাল অবস্থানে চলে আসবে রাসেল। এ প্রসঙ্গে তকলিসের ভাষ্য, ‘আশা করি আমরা অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবো, কারণ আমাদের আছেন সাইফুল বারী টিটুর মতো অভিজ্ঞ-পরীক্ষিত কোচ।’ তকলস আরও যোগ করেন, ‘এই লিগে আমরা কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই ভাল খেলেছি। লড়াই করেছি। কিন্তু খেলা শেষদিকে গিয়ে গোল হজম করে হেরে যাই বা ড্র করি। আশা করি, সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা জয়ের ধারায় ফিরতে পারবো।’ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ। ফলে বিপিএল ফুটবলও বন্ধ। ফলে সিলেটের মেজর টিলায় নিজেদের বাড়িতে গত ২০ মার্চ চলে এসেছেন (ব্যক্তিগত গাড়িতে একা, জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটিয়ে নেন গাড়িতে) তকলিস। ১১ এপ্রিলের পর পরিস্থিতি দেখে ক্লাব তাকে জানাবে কবে তাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। সিলেটে এসে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত কয়েকদিন ধরে ১২ কিলোমিটার রানিং করছেন তকলিস। এটাকে তিনি ‘গ্রাউন্ড ট্রেনিং’ হিসেবে অভিহিত করেন। এলাকার একটি পার্কের চারদিকে ঘুরে ঘুরে দৌড়ান। ১২ কি.মি দৌড়াতে ৪০ মিনিট সময় লাগে তার। একাই দৌড়ান। তবে তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এলাকার কিছু তরুণও তার সঙ্গে দৌড়ায়। মরণঘাতী করোনা থেকে বাঁচতে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে মুখোশ পড়া, হাতে দস্তানা পড়া ... এগুলো করছেন তকলিস। শুরুতে মসজিদে গিয়েই নামাজ পড়তেন। পরে যখন সরকার সবাইকে বাসায় নামাজ পড়ার অনুরোধ জানালো, তখন থেকে সতর্কতা হিসেবে বাসাতেই নামাজ আদায় করছেন তিনি। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে করোনার বিস্তার ঘটিয়েছেন। তারা যে এব্যাপারে মোটেও সচেতন ছিলেন না, তাতে একমত তকলিসও। তার অভিমত, ‘তাদের এই কাজ মোটেও সমর্থন করা যায় না। এছাড়া সরকারের ঘোষিত দশ দিনের ছুটি কাটাতে সাধারণ মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে যেভাবে ভিড় করে গ্রামে গেছে, তা সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই কাজটা দারুণ বোকামির হয়েছে।’ করোনা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভারতে গোমূত্র পান এবং বাংলাদেশে থানকুনি পাতা খাওয়া নিয়ে তকলিসের ভাষ্য, ‘এটা একেবারেই হাস্যকর বিষয়। বিশেষ করে ভারতে যা হয়েছে সেটা। এগুলো হচ্ছে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস এবং স্রেফ কুসংস্কার। তবে এই কাজ করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছে। এতে অনেকেরই ভুল ভেঙ্গেছে।’ তকলিসের স্বস্তি- তার আত্মীয়-পরিজনদের কেউই এখন পর্যন্ত ভয়ংকর কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হননি। তবে তিনি ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী রিমা জাহানের জন্য। কেননা তিনি থাকেন ইংল্যান্ডের লন্ডনে। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষ প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। বছরখানেক আগে তাকে পরিারের পছন্দে বিয়ে করেন তকলিস। দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউনে সবচেয়ে বেশি মানবিক বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে গৃহহীন, ভিক্ষুক, দিনমজুর, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া অসহায় মানুষরা। তারা যেন না খেয়ে মারা যায়, সেজন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরাও যেন এসব মানুষদের প্রতি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, এমনটাই চান তকলিস। করোনা-সন্দেহে হাসপাতালে গেলে সেখানে ভর্তি হতে বিড়ম্বনা, ডাক্তারদের চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি, পাড়া-প্রতিবেশীদের এগিয়ে না আসা, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া, এমনকি মারা গেলে জানাজা পড়ানো ও লাশ দাফনে পর্যন্ত এলাকাবাসীর বাধা দান, করোনার জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেয়া ... এগুলো যথেষ্ট পীড়া দিয়েছে তকলিসকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো খুবই দুঃখজনক। আশা করবো পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং এগুলো যেন আর না ঘটে। সবশেষে বলবো গুজবে কান দেবেন না এবং সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, অসহায়দের সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন।’
×