ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য গোপন করে মহামারি এড়ানো যাবে না : রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২ এপ্রিল ২০২০

তথ্য গোপন করে মহামারি এড়ানো যাবে না :  রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য গোপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তথ্য গোপন করে করোনা মহামারি এড়ানো যাবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্স করে তিনি এ কথা বলেন। পুলিশের আইজিপিকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, গুলশানের বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ ২৬ মাস বিনা দোষে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। এখন তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি গুলশানে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় তার নিরাপত্তার জন্য আইজি বরাবর আবেদন করা হলেও এ বিষয়ে এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অবিলম্বে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সঠিক তথ্য দিয়ে এই রোগের ভয়াবহতা বুঝিয়েই জনগণকে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি করা উচিত। রিজভী বলেন, সরকারের তথ্য গোপন পলিসির সমালোচনা করার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত কয়েকদিনে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী ও চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেয়া উচিত। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগের পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে দেশে এ রোগের পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা সরকারি পরিসংখ্যানের আপডেট এখন কেউ আর বিশ্বাস করছে না। অন্ধ হলেই কি বন্ধ হবে প্রলয়! বিএনপি সম্পর্কে দেয়া আওয়ামী সলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তিনি বলেছেন- বিএনপি নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি, সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি দেশের এই দুঃসময়েও জনগণের পাশে নেই। এসব কথা বলে তারা সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অপতৎপরতায় লিপ্ত। রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই, আপনাদের গণতান্ত্রিক মানসিকতা নেই বলে সমালোচনা শুনলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই মহাদুর্যোগে মানুষ যখন জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে তখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য বিভাজন ও বিভেদেরই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। কি কারণে আপনারা সমালোচনার শঙ্কায় অস্থির থাকেন? রিজভী বলেন, করোনা প্রতিরোধ বা মোকাবেলায় সরকার যদি এতটাই সক্ষম হতো তাহলে আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ও জাপানিরা বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছেন কেন? আমার প্রশ্ন ওবায়দুল কাদের কোয়ারেন্টাইনে থেকে কি বিএনপির সমালোচনা ছাড়া কিছুই বোঝেন না? রিজভী বলেন, যখন দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলো তখন আমরাই রাজপথে নেমেছি, সারা দেশের সর্বত্র প্রথম সচেতনতামূলক কর্মকান্ড শুরু করেছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই দুঃসময়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শ্রেণী-পেশার সংগঠন অর্থাৎ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন। রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র ও ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সামান্য উঁচু-নীচুর ব্যবধানেও যেখানে মানুষ মানুষকে প্রতিপক্ষ ও প্রতিযোগী ভাবতো। কিন্তু আজ মৃত্যুভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের বিভেদহীন দূত হিসেবে প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। লাখ লাখ মানুষ সংক্রমিত হওয়া আর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু বিশ্বকে আজ এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। রিজভী বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমিত হচ্ছে বলে স্বীকার করলেও তা মৃদু মাত্রায় রয়েছে বলে দাবি করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে সরকার বলছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে। আর পশ্চিমা মিডিয়া বলছে, আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যু হানা দিচ্ছে দেশে দেশে। তাই আমাদের দেশে করোনা যদি এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। আমরা মনে করি, সরকারের তথ্য গোপন নীতির কারণেই দেশের করোনা পরিস্থিতির আসল চিত্র ফুটে উঠছে না। ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ হতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তানা হলে বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, হঠাৎই বাড়তে পারে ভয়াবহতা। তাই লকডাউন চালিয়ে যাওয়া, আরও বেশি বেশি টেস্ট করে পজেটিভ রোগী খুঁজে আইসোলেশনে নিয়ে আসা কাজে আসতে পারে। সেনাবাহিনী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ বিপদ ঠেকানো সম্বব নয়। তাই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবেলা করতে হবে।
×