ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লোকশিল্পী পদক- ২০২০’ পাচ্ছেন খুলনার শিল্পী গুরুপদ গুপ্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২ এপ্রিল ২০২০

লোকশিল্পী পদক- ২০২০’ পাচ্ছেন খুলনার শিল্পী গুরুপদ গুপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত ‘লোকশিল্পী পদক ২০২০’ পাচ্ছেন লোকগানের গীতিকার, সুরকার ও প্রখ্যাত দোতরাবাদক খুলনার শিল্পী গুরুপদ গুপ্ত। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পদক তুলে দেয়া হবে। ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমির কর্ণধার লোকসঙ্গীত শিল্পী রুপু খান জানান, দীর্ঘ একুশ বছর ধরে প্রতিবার চৈত্র সংক্রান্তিতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের এই পদক প্রদান করা হয়। আমাদের দেশের লোকসঙ্গীতকে যারা বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের হাতে এই পদক আমরা তুলে দিয়ে থাকি। ইতিপূর্বে অনেকেই এই পদকে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতী, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, আলম দেওয়ান, শহীদ দেওয়ান, নূরুন নাহার আওয়াল, বাউল আবুল সরকার, শব্দসৈনিক শেখ জমির উদ্দীন, কুটি মনসুর, হারিস মোহাম্মদ আল সুরেশ্বরী প্রমুখ। রুপু খান জানান, সারা বিশ্বজুড়ে এখন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দেশের স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সবই এখন বন্ধ। দেশের সকল অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে এই কারণে। এবার চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারব কি না জানিনা। তবে দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান হলে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পদক প্রদান করা হবে। শিল্পী গুরুপদ দত্ত খুলনা বেতারের নিজস্ব দোতারাবাদক ও শিল্পী। তবে খুলনা-যশোর অঞ্চলে তাঁর পরিচিতি একজন গীতিকার ও সুরকার হিসেবে। এখনো আপন মনে লিখে চলেছেন একের পর এক গান। গুরুপদ গুপ্তের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নড়াইল জেলার সদর উপজেলার রামনগরচর গ্রামে। তার বয়স যখন ১৫-১৬ বছর, তখন থেকেই কাজের ফাঁকে গান লেখা, সুর করা ও গাইতে শুরু করেন। বাবা অমৃত লাল গুপ্তও ছিলেন দোতরাবাদক ও ভাটিয়ালি গানের শিল্পী। বাবার হাতেই তার দোতরায় হাতেখড়ি। এরপর একে একে একতারা, দোতরা, খোল বাজানো শেখা। বেতারে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন যাত্রা দল, কীর্তন দল, গাজীর গানের দলে কাজ করেছেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ বেতার খুলনায় শিল্পী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এখন দোতরাবাদকের পাশাপাশি খুলনা বেতারের জনপ্রিয় চাষাবাদ অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করেন। খুলনা, যশোর ও নড়াইল অঞ্চলের ভাষায় এরই মধ্যে তিনি পাঁচশর বেশি জীবন ভিত্তিক আঞ্চলিক গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন। পাশাপাশি জারি, সারি, ভাটিয়ালি, অষ্টক, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লী গীতিসহ অন্যান্য গানও লিখেছেন আরও পাঁচশর মতো। সাম্প্রতিক তার লেখা ও সুর করা ‘ও মানুষ, মানুষ, দুডো চোক আর দুডো কান, দেকপা আর শোনবা, এট্টা মুক তো, কথা কম কবা’ আঞ্চলিক গানটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আলোচিত হচ্ছে গানের কথা। ব্যতিক্রমী সুর ও উপস্থাপনার জন্য উপভোগ করছে শ্রোতা। ‘বয়স আমার বেশি না ওরে টুকটুকির মা, খালি চুল কয়ডা পাইহে গেছে বাতাসে, ‘আমরা দুইজন মিলে ম্যাট্রিক পাস, মানে ও পড়িল ফোর পর্যন্ত আমি পড়িলাম ছয় কেলাশ’, ‘আজ কালকের পোলাপান, বাপেরে কয় হুক্কা আন, মারে কয় কুটনি বুড়ি, বউরে কয় সোনার চান’, ‘যতই হোক গে বৃষ্টি খরা, ছাতি আমি ম্যালবো না, এডা আমার শ্বশুর বাড়িততে চুরি এরে আনা’ জনপ্রিয় এসব গানও তিনি চলার পথে দেখা এবং নিজের ও আশপাশের মানুষের জীবনবাস্তবতার নিরিখে লিখেছেন।
×