ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

সাহায্য এবং সচেতনতায় শোবিজ তারকারা

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২ এপ্রিল ২০২০

সাহায্য এবং সচেতনতায় শোবিজ তারকারা

বিশ্বজুড়ে নোভেল করোনাভাইরাস নামক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে মানব সভ্যতা। অন্য সব লড়াই হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করা গেলেও এবারের লড়াই একেবারে ভিন্ন! ভয়ানক ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে বিচ্ছিন্ন থাকার কোন বিকল্প আপাতত নেই। বর্তমান সময়ে সবার একটাই পরামর্শ ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’। সমাজের দায়িত্ববান এবং সচেতন মানুষ হিসেবে শোবিজ তারকারা সবসময়ই অগ্রপথিক। এ যাত্রাও তাদের ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষণীয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও নানানভাবে মানুষকে সচেতন এবং সাধ্যমতো সাহায্য করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। এ অবস্থায় শ্রম বিক্রি করে যাদের দিন চলে তাঁরা পড়েছেন বিপদে। এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন চলচ্চিত্রর বেশ কয়েক শিল্পী। ইতোমধ্যে শোবিজের বেশ কয়েকজন তারকা শিল্পী অসচ্ছলদের পাশে এগিয়ে এলেও সুপারস্টার শাকিব খানের কোন ভূমিকা আপাততো চোখে পড়েনি। কারণ তার পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শুরু করলে বাকিরা আরও উদ্বুদ্ধ হবে। চিত্র নায়িকা পপি : দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি গত ২২ মার্চ নিজ জন্মস্থান খুলনা সিটিতে করোনা সম্পর্কে সচেতন করেন। পপি নিজে সচেতন হয়ে মাস্ক পরে রাস্তায় নেমে তিনি মানুষদের মাস্ক পরিয়ে, স্যানিটাইজার ব্যবহার শিখিয়ে সচেতন করেন। দেশের এই কঠিন সময় পপি জন্মস্থান খুলনা সিটিতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি কোরআন খতমসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করেছেন। অপু বিশ্বাস : জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) বসুন্ধরার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অসহায়দের মাঝে কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। সে সময় তিনি বলেন, আমরা যাঁরা সচ্ছল আছি, তাঁরা বাসায় সময় কাটাচ্ছি। তবে আমরা লক্ষ্য করছি দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা ও হকাররা পেটের দায়ে রাস্তায় নেমে আসছে। কারণ, তাঁদের বাসায় খাবার নেই। নিজের পরিবারের চিন্তা করেই মূলত তাঁরা কাজ না করে থাকতে পারছেন না। তাই এই অসচ্ছল মানুষগুলোর পাশে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। আমি প্রায় দেড়শর মতো প্যাকেট দিয়েছি। প্রতিটি প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, লবণ, তেল ও আলু। সমাজে যাঁরা সচ্ছল, তাঁদের প্রতি অনুরোধ রইল, আপনারা সামর্থ্য অনুযায়ী অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়ান। অনন্ত জলিল : চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল মানুষের এই দুঃসময়ে অসচ্ছল শিল্পী ও খেটে খাওয়া দিনমজুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারমধ্যে রয়েছে সাভারের হেমায়েতপুর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৫০০টি পরিবার, বায়তুল আমান আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, ভাসানটেক এরিয়ায় ৫০০ পরিবার, চলচ্চিত্রের ৪৮০টি পরিবারের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। এছাড়াও সাভার থানার অধীনস্থ ১০০টি পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেন। এ প্রসঙ্গে অনন্ত জলিল বলেন, আমি এ পর্যন্ত মোট ১৫৮০টি পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন এতিমখানার অনাথ শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। অর্থ ও বিত্তবানদের নিকট আমার আকুল আবেদন। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় অর্থ ও বিত্তবানদের নিকট আবেদন জানাচ্ছি যে, একদিন আমরা সবাই এই পৃথিবী থেকে চলে যাব। আমাদের উপার্জিত অর্থ ও ঐশ্বর্য কোন কিছুই আমাদের সঙ্গে যাবে না। এই বিপদের সময় কর্মহীন মানুষ যাদের ঘরে খাবার নেই তাদের ঘরে কিছু না কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারলে তাদের মন থেকে যে দোয়া আসবে সেই দোয়া আপনার নাযাতের কারণ হতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাকে যতটুকু দিয়েছেন আমি ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাইমন সাদিক : চিত্রনায়ক সাইমন প্রায় ৫০০ পরিবারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। মঙ্গলবার ঢাকা ও তার আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। সাইমনের এই উদ্যোগে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তার কাছের ভাই বন্ধুরাও। সাইমন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এখন সব মানুষই ঘরবন্দী। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। আমি ও আমার কিছু ভাই-বন্ধু মিলে এই কাজটা করছি। আমরা যাকে তাকে নয়, বেছে বেছে খুব দরিদ্র মানুষদেরকেই সহায়তা করেছি। যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের উপকার হয়। ’ অধরা খান : চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সব কিছু উলট-পালট করে দিয়েছে বলে জানালেন অধরা খান। বাংলাদেশেও করোনা নিয়ে জনজীবন থমকে গেছে। তাই শিল্পী হিসেবে নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সোমবার (৩০ মার্চ) কিছু মানুষের ঘরে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিলেন তিনি। অধরা খান জানান, রাজধানী ঢাকার নন্দীগ্রাম দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একশ’ পরিবারকে এসব খাদ্য সামগ্রী তিনি ও তার সহযোগিরা পৌঁছে দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহেও এই রকম আরেকটি কার্যক্রম পালন করবেন বলে জানালেন অধরা খান। ‘টিম ইয়াংস্টার’: বর্তমান প্রজন্মের সক্রিয় কয়েকজন শিল্পীদের নিয়ে গঠিত ‘টিম ইয়াংস্টার’। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি পয়েন্টে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, হকারদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছে এই টিম। প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণীর সময় উপস্থিত ছিলো টিমের সদস্য- জয় চৌধুরী, নাদিম, বিপাশা কবির, আঁচল, শিরিন শিলা, রোমানা নীড়, মডেল জারা টাইরা ও সারাকা মজুমদার। এদিকে মাঠে এই গ্রুপের আরও দু’জন সদস্য চিত্রনায়ক শিপন মিত্র ও সানজু জন উপস্থিত না থাকতে পারলেও সার্বিক সহযোগিতায় তাঁরা ছিলেন। গৌতম সাহা : কোরিওগ্রাফার ও অভিনেতা গৌতম সাহা রবিবার (২৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের রিক্সা চালকসহ স্বল্প আয়ের মানুষদের হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার পুত্র গৌরব সাহা। এ প্রসঙ্গে গৌতম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চারদিকে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগ প্রতিরোধে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। যার যার জায়গা থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে হবে। আমি মনে করি, এখন সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত।’ এছাড়াও মিষ্টি জান্নাত, তানহা তাসনিয়া, বাপ্পি চৌধুরী, বারিশ হক ও ওমর সানী ফ্যান ক্লাব দেশের দুঃসময়ে অসচ্ছল মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
×