ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা চিকিৎসায় চীনা-জাপানী বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২ এপ্রিল ২০২০

করোনা চিকিৎসায় চীনা-জাপানী বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চিকিৎসায় চীনের বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ওষুধ খুঁজতে গিয়ে কার্যকর এ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছেন। তাদের আলাদা করে ফেলা এসব এ্যান্টিবডি নতুন করোনাভাইরাসকে কোষে প্রবেশে বাধা দেয়ার বেলায় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ উদ্ভাবন কোভিড-১৯ চিকিৎসা বা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এদিকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নিজেদের এ্যাভিগান ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে জাপানে। সাধারণত, ঠা-া-সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত এ্যাভিগান ওষুধটি চীনে করোনা চিকিৎসায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রমাণিত কার্যকর কোন চিকিৎসা নেই। চীনে গতবছরের ডিসেম্বরে উৎপত্তির পর এখন সারাবিশ্বে মহামারীতে রূপ নিয়েছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আট লাখ ৫৭ হাজার মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪২ হাজার মানুষ মারা গেছে। বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাং লিংকি বলেছেন, তার দলের সন্ধান পাওয়া এ্যান্টিবডির মতো এ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি ওষুধ বর্তমান পদ্ধতির চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিকে তিনি ‘বর্ডারলাইন’ বা ‘সীমান্তরেখা’ বলছেন। এর আগে এ রকম প্লাজমা বা রক্তরস পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার নজির রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে ঝাং ও তার গবেষক দল শেনঝেনে থার্ড পিপল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সেরে ওঠা রোগীদের রক্তে এ্যান্টিবডি বিশ্লেষণ শুরু করেন। তারা ২০৬টি মনোক্লোনাল এ্যান্টিবডি পৃথক করেন যার ভাইরাসের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার একটি জোরালো ক্ষমতা রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ঝাং বলেছেন, এ্যান্টিবডি পৃথক করার পর তারা আরও একটি পরীক্ষা চালান। এ পরীক্ষায় এ্যান্টিবডি ভাইরাসকে কোষে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারে কি না, তা দেখা হয়। প্রথম ২০ বা ততোধিক এ্যান্টিবডির মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ৪টি এ্যান্টিবডি ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকিয়ে দেয়। এর মধ্যে দুটি খুব ভালভাবে কাজ করতে পারে। গবেষকেরা এরপর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী এ্যান্টিবডি শনাক্ত করেন এবং এগুলোকে সংযুক্ত করে করোনাভাইরাসের পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগ্রহী ওষুধ নির্মাতারা এটি নিয়ে পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রথমে পশু ও পরে মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে। গবেষক দলটি ইতোমধ্যে বায়োটেক ফার্ম ব্রি বায়োসায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। ঝাংয়ের দাবি, কয়েক দশক ধরে এ্যান্টিবডিগুলোর গুরুত্ব প্রমাণিত হয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসা বা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় এর প্রয়োগ করা হয়েছে। এ্যান্টিবডি কোন ভ্যাকসিন নয়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের রোগ প্রতিরোধের জন্য দেয়া যেতে পারে। আগে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি হিসেবে ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’র কথা বলেন। তার দাবি, নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে প্লাজমা থেরাপি। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতেও আশার আলো হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, প্লাজমায় এ্যান্টিবডি থাকে, তবে রক্তের ধরন দ্বারা এটি সীমাবদ্ধ। এদিকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নিজেদের এ্যাভিগান ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে জাপানের ফুজি ফিল্ম। সাধারণত, ঠা-া-সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত এ্যাভিগান ওষুধটি চীনে করোনা চিকিৎসায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল। চীনের ট্রায়ালে দেখা যায়, যাদের ওই ওষুধ দেয়া হয়েছিল, অন্যদের তুলনায় তারা দ্রুত সেরে ওঠেন। এ্যাভিগানের জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির। বুধবার কোম্পানির এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, জুনের শেষ নাগাদ ১০০ জন রোগীর ওপর এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ট্রায়াল হবে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করব, বিশ্লেষণ করব, এরপর অনুমোদনের জন্য আবেদন করব। হাল্কা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২০ থেকে ৭৪ বছর বয়সী রোগীদের সর্বোচ্চ দিনের জন্য এই ওষুধটি দেয়া হবে। তবে প্রাণীর শরীরে পরীক্ষার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে না। গত শনিবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছিলেন, তার সরকার নতুন এই ভাইরাসের চিকিৎসা হিসেবে এ্যাভিগানের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এরপরই তৃতীয় ধাপে ট্রায়ালের এ ঘোষণা এলো। গত মাসে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, এর মধ্যে ফ্যাভিপিরাভিরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করেছে। জাপানে এর আগে করা দুই ধাপের ট্রায়ালে দেখা গেছে, এই ওষুধ রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনে। যদিও ওই দুই ট্রায়াল প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল না ফুজি ফিল্ম। এবারের তৃতীয় ধাপে ট্রায়ালের আগে ফুজি ফিল্ম এক বিবৃতিতে জানায়, আশা করা যায় নতুন করোনাভাইরাসের ওপর এ্যাভিগান সম্ভাব্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রভাব ফেলতে পারবে।
×