ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীপুরে গল্প-কবিতার বই দিয়ে খেলার মাঠ থেকে কিশোরদের ঘরে পাঠাচ্ছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১ এপ্রিল ২০২০

শ্রীপুরে গল্প-কবিতার বই দিয়ে খেলার মাঠ থেকে কিশোরদের ঘরে পাঠাচ্ছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ প্রতিরোধের জন্য নানা কৌশলে কাজ করছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। বুধবার বিকেলে শ্রীপুরে শিশু-কিশোরদেও হাতে দেশের খ্যাতনামা লেখকদের গল্প ও কবিতার বই দিয়ে ক্রিকেট খেলার মাঠ থেকে ঘরে পাঠিয়েছেন জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন। করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ রোধে সরকারের নির্দেশে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন বাইরে না গিয়ে ঘরে থাকতে গিয়ে তার অধৈর্য্য পড়ছিল। ধৈর্য্য হারিয়ে উচ্ছল শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই লুকিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে খেলাধূলার জন্য জড়ো হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ সম্ভাবনার ভয়ে ভীত অভিভাবকদের তাড়া খেয়ে মনের অপূর্ণ সাধ নিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়। বুধবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সলিংমোড় এলাকায় মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের পাশে একটি মাঠে দল বেঁধে ক্রিকেট খেলছিল জাবায়ের, রাতুল, প্রান্ত, শান্ত, শিহাবসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের ২৪/২৫জন কোমলমতি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী। তাদের মনে ছিলনা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতংক। এসময় মাঠের পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারি সুপার আল মামুন। তার নজরে পড়ে শিশু-কিশোর খেলোয়াড়দের। তিনি গাড়িটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলায়রত শিশু-কিশোরদের ডেকে জড়ো করে করোনা ভাইরাস সংক্রামনরোধে ঘরে থাকাসহ কয়েকটি সরকারী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পরামর্শ দিলেন। তাদের চোখে মুখে বিষন্œতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাদেরকে বিষন্ন মনে মাঠ থেকে ঘরে যেতে দেখে পুলিশের ওই কর্মকর্তার চোখেও পানি এসে যায়। এসময় তিনি শিশু কিশোরদের কাছে ডেকে নেন এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন দেশের খ্যাতনামা লেখকদের গল্প-কবিতার বই। বই হতে পেয়ে মুহুর্তেই শিশু-কিশোররা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে এবং হাতে তালি দিতে থাকে। পরে তারা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ঘর ছেড়ে বাইরে না যাওয়ার শপথ করে বই হাতে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যায়। শিশুদের আনন্দ ও উচ্ছ্বলতা দেখে পুলিশের ওই কর্মকর্তাও আনন্দিত হয়ে উঠেন এবং ওই এলাকা ত্যাগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে গল্প-কবিতার বই পেয়ে দারুণ খুশি রাতুল ও প্রান্তসহ অন্যরা। তারা জানায়, আগে পুলিশ দেখে ভয় পেতাম, ভাবতাম তারা মানুষকে পেটায় ও বদমেজাজী হয়। কিন্তু পুলিশ যে এত ভাল হতে পারে তা আজ দেখলাম। একজন পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে বই গ্রহণ করেছি। এতে আমাদের ভুল ধারণা ও ভয় কেটে গেছে। আমরা এখন বাসায় গিয়ে পুলিশের দেয়া বই পড়ে সময় কাটাবো। বাসা থেকে বের হবো না। সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন এব্যাপারে বলেন, মরণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিশু কিশোর বয়সের এসব শিক্ষার্থীর ঘরে বসে সময় কাটাতে গিয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে। উচ্ছ্বল এসব শিশু কিশোররা সুযোগ পেলেই ঘর থেকে লুকিয়ে খেলার মাঠে চলে যায়। তাই এলাকার প্রতিটি খেলার মাঠে গিয়ে শিশু-কিশোরদের বুঝিয়ে এবং হাতে গল্প ও কবিতার বই দিয়ে কিছুদিনের জন্য ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। আশা করছি এতে তাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়বে এবং বই পড়ার মধ্য দিয়ে অলস সময় কাটবে। সেইসঙ্গে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে তারা ও তাদেও পরিবার রক্ষা পাবে।
×