ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা থেকে মানুষকে রক্ষা করাই এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ কাজ ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১ এপ্রিল ২০২০

করোনা থেকে মানুষকে রক্ষা করাই এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ কাজ ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করাই এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ কাজ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে চিকিৎসাসহ সাধারণ মানুষের খাবারের জোগানের বিষয়টি এখন সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া করোনা মোকাবেলা ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে মহামারী আকারে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছে সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, নিজ বাসভবনে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবগণের সঙ্গে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব তা উত্তরণে পর্যালোচনা বৈঠকে এসব কথা বলেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আসন্ন বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়। বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাজেটে যাতে আর্থিক সঙ্কট না হয় সেজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে আমরা ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে এগুচ্ছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে এটা এখন সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশও এই নেতিবাচক প্রভাব হতে মুক্ত নয়। তিনি বলেন, এ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্যানডামিক বা বিশ্বমহামারী হিসেবে এখন প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মতো নানামুখী অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হতে পারে। তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ আরও কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমা মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিলম্বের কারণে বেসরকারী বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং এভিয়েশন সেক্টরের মতো সার্ভিস সেক্টরগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাসের কারণে এর মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাস আয়ের ওপর। তবে যেহেতু বিগত আট মাসে প্রবাস আয়ে ২১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ছিল সেহেতু আগামী চার মাসে প্রবাস আয় কিছুটা কম হলেও বছর শেষে গত অর্থবছরের তুলনায় কম হবে না বলে আশা করা যায়। সারা বিশ্বের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের প্রাক্কলনে করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। যদি করোনার প্রভাব বাংলাদেশে খুব খারাপভাবে পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পসহ উৎপাদনমুখী সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে বিরূপ প্রভাব এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা শঙ্কিত। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূল ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’কর্মসূচীর আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। শিল্প উৎপাদন এবং রফতানি বাণিজ্যের আঘাত মোকাবেলায় কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইতোমধ্যে ব্যবসায়বান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোন গ্রাহক যদি কিস্তি পরিশোধে অপরাগও হয় তথাপিও তাকে ঋণখেলাপী না করার ঘোষণা দিয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধেও জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে অপরাগ হলেও ঋণখেলাপী করা হবে না। রফতানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইলে ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।
×