ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

করোনা ॥ সরকার ও নাগরিক সমাজের দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১ এপ্রিল ২০২০

করোনা ॥ সরকার ও নাগরিক সমাজের দায়বদ্ধতা

রবীন্দ্রনাথ তার জীবনকালে সভ্যতার সঙ্কট দেখে গেছেন। তাই ‘সভ্যতার সঙ্কট’ নামে একটি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখতে পেরেছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে সঙ্কট দেখে গেছেন তা সভ্যতার মানবিক দিকের সঙ্কট। জাগতিক দিকের সঙ্কট নয়। এবারের জাগতিক দিকের সঙ্কট জগৎজোড়া। তার সঙ্গে মানবিক দিকটাও যুক্ত রয়েছে। সুতরাং এবার যদি ইসরাফিলের ধ্বংসের বাঁশি বেজে ওঠে তাহলে জাগতিক সভ্যতা তো বটেই, মানবিক সভ্যতাও ধ্বংস হবে। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন গৃহবন্দী। সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক সব ভেঙ্গে পড়েছে। এই করোনাভাইরাস মানুষের দু’হাজার বছরের সভ্যতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসীম শক্তিকে হার মানিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির মারণাস্ত্র। রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন সভ্যতার সঙ্কট। আমরা দেখছি মহাসঙ্কট। আমরা অতীতে সামাজিক, অর্থনৈতিক বহু মূল্যবোধের পতন দেখেছি। কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক জীবনে সকল সম্পর্কের এই বিচ্ছিন্নতা কখনও দেখিনি। মা রোগাক্রান্ত সাত মাসের শিশু সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যেতে পারে, রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়ে প্রতিটি মানুষ এভাবে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, একে অন্যের সম্পর্কে ভয় করতে পারে, দীর্ঘদিনের বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে এক বিছানায় শুতে স্বামী অসম্মতি জানাতে পারে, প্রেমিক-প্রেমিকা চুমু খাওয়া ও আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকতে পারে, মজলিশ আড্ডা, সমবেত নামাজ ও প্রেয়ার বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এক কথায় সামাজিক বিচ্ছিন্নতার (Social isolation) এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিতে পারে, তা ভাবিনি কখনও। রোগ বিস্তার কমেনি। সব দেশেই আক্রান্তদের এবং মৃতদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। যেসব ডাক্তার, নার্স মুখে মাস্ক এবং হাতে দস্তানা পরে এই মহাদানবের বিরুদ্ধে মানবতাকে রক্ষার যুদ্ধে নেমেছেন, তাদের আমি সর্বকালের সাহসী সৈনিক মনে করি। প্রত্যেকটি দেশ তাদের সাধ্যমতো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। যা হয়নি তা হলো সকল দেশের এই দানববিরোধী প্রচেষ্টার মধ্যে সমন্বয় বিধান। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে (war on terrorism) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ছোট বড় বহু দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এবারের ভাইরাসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং নয়াচীন উভয় রাষ্ট্রের নেতৃত্বে সকল মতাদর্শের রাষ্ট্রকেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। ভুললে চলবে না, এটা তথাকথিত স্বাধীন বিশ্ব অথবা সমাজতন্ত্রী বিশ্ব রক্ষার যুদ্ধ নয়। গোটা মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। এখন পেন্টাগন, ক্রেমলিন বা বেজিং ও মস্কোর ষড়যন্ত্রের এবং স্নায়ুযুদ্ধের ঘুড়ি ওড়াবার সময় নয়। এটা এ যুগের ‘কালাপাহাড়’ ট্রাম্প সাহেবও অনুধাবন করছেন মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে সভ্যতার এই মহাসঙ্কটকে কী চোখে দেখতেন জানি না, তবে এই সঙ্কটের স্রষ্টা মানবরূপী দানবের বিরুদ্ধে অবশ্যই তার কণ্ঠে ধিক্কার ধ্বনি বেজে উঠত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়েই তার কণ্ঠে সতর্কবাণী শোনা গিয়েছিল, ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস/শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসান হয়েছে ৭৫ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু অশান্তির অবসান হয়নি এখনও। নাগিনীদের আরও বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলা এবং শান্তির ললিত বাণীর আরও ব্যর্থ পরিহাস শোনা এখনও অব্যাহত রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সভ্যতার সঙ্কট যখন দেখা দেয় এবং মানবতা যখন বিপন্ন হয়, তখনই দেখা দেয় মানুষের মধ্যে একদল অমানুষের আবির্ভাব। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের ঠুলি পরা থাকে এদের চোখে। ইবসেন এদের নিয়ে একটা নাটক নিখেছেন ‘পিপলস এনেমি’। এই নাটকের অনুসরণে সত্যজিৎ রায়ও একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন ‘গণশত্রু’ নামে। শহরে দূষিত জলের ব্যবহারে অসংখ্য লোক বছর বছর মারা যায়। মন্দিরের পুরোহিত, মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ বলেন, এটা পবিত্র জল। এই জলপান করলে সর্ব রোগের উপশম হয়। ডাক্তার এই জল ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলে তাকে ধর্মের শত্রু, দেব-দেবীর শত্রু হিসেবে প্রচার চালিয়ে শহর থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চক্রান্ত হয়। বহুকাল আগে সত্যজিতের এই ছবিটি দেখেছি। কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে সহৃদয় পাঠকেরা ক্ষমা করবেন। বিপদে আতঙ্কই হচ্ছে মানুষের বড় শত্রু আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে গুজব। এবারের করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের সময় আতঙ্ক প্রচার ও গুজব সৃষ্টি করা হয়েছে সবচাইতে বেশি। তার সুযোগ গ্রহণ করেছে অনুন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলোতে ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি। নাট্যকার ইবসেন এদের গণশত্রু বলেছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আলেম নামধারী একশ্রেণীর মোল্লা কোরান হাদিসের নাম ভাঙ্গিয়ে তাবিজ-তুমার, পানি পড়া ও তেল পড়ার ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছিল। কেউ কেউ করোনাভাইরাসের সঙ্গে তাদের স্বপ্নে সাক্ষাত হয়েছে দাবি করেছেন এবং করোনাভাইরাস তাদের বলেছে, বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু ধর্মচর্চা বেশি করে, সেহেতু বাংলাদেশে তারা হামলা করবে না। যদি করে তাহলে করবে যারা নাস্তিক এবং মুরতাদ তাদের ওপরে। ওয়াজ মাহফিল করে এবং ফেসবুকের সাহায্যে তারা এই প্রচারণা চালাচ্ছিল। এখন বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় এবং এক স্থানে বেশি লোক জমায়েত হওয়া রোগের বিস্তার ঘটায়Ñএটা জানার পর এই তথাকথিত ওয়াজ নসিহতের মজলিশ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ফেসবুকের মাধ্যমে চলা এই তাবিজ-তুমারের ব্যবসা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এই বিপদ কাটলেও বাংলাদেশে (সম্ভবত এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও) আরেকটি বিপদ লক্ষ্যণীয়। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে মানুষ যাতে নিজ নিজ গৃহে রোগ বিস্তার না ঘটানোর জন্য আইসোলেশনে থাকে, তার সুবিধা দেয়ার জন্য। কিন্তু এই ছুটিতে শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষ ছুটেছে শহর ছেড়ে নিজেদের গ্রামের বাড়ির দিকে। লন্ডনে বসে মাওয়া ও অন্যান্য ফেরিঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল দেখে ভীত হয়ে ভাবছি, শহরের মানুষ এভাবে ঈদের ছুটির মতো আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গ্রামে ছুটলে সেখানেও এই রোগ ভয়ানকভাবে ছড়াবে। হয়তো ছড়ানো শুরু হয়ে গেছে। আগের এই ছুটি এখন বাড়ানোর ফলে আরও মানুষ গ্রামে ছুটবে। ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের উচিত সকলেই যাতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে দলবেঁধে না ছোটে, তার কঠোর ব্যবস্থা করা। এ জন্য ছুটি ঘোষণার সঙ্গে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রাখলে ভাল হবে। লন্ডনে বিনা জরুরী প্রয়োজনে কেউ রাস্তায় নামলে তাকে জরিমানা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লন্ডনের রাস্তা এখন একেবারে বিরান। কোন কোন পথচারী বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় নামায় পুলিশ তাকে লাঠিপেটা পর্যন্ত করেছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে গিয়ে সড়ক নৌ আকাশ পথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন এবং যারা বাড়িতে চলে গেছেন ও যারা যাননি তাদের সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলেছেন। তবে অবস্থা দেখে মনে হয় এই উপদেশে হয়তো কাজ হবে না। সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে প্রথমে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যে ভুল করেছিলেন, এখন সেই ভুল আর করতে চাইছেন না। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, করোনা রোগে আমেরিকায় দু’লাখ লোকের মৃত্যু হতে পারে। আর আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা সম্পর্কে বলেছেন, এই মন্দা করোনাভাইরাসের চেয়েও বহুগুণ বিপজ্জনক হবে। ট্রাম্প ছাড়াও ইউরোপের অনেক রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন করোনা সঙ্কট চলাকালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার কোন কোন দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ সরকারী অফিসার, রাজনীতিক এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সংখ্যা এত বেশি যে, সরকার এখনই এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিপদে পড়বে। একটা উদাহরণ দেই। পাকিস্তান আমলে যুক্তফ্রন্টের আবু হোসেন সরকার যখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, তখন প্রদেশব্যাপী বন্যার দরুন ক্ষেতে খাদ্যশস্যের যথেষ্ট ক্ষতি হয় এবং খাদ্য উৎপাদন কম হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়াতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার ঘোষণা করেন সরকারের হাতে যথেষ্ট খাদ্য মওজুদ আছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত সফল হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও ধান-চালের দাম বাড়তে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর আমলা উপদেষ্টারা তাকে পরামর্শ দেন সরকারের গুদামে মওজুদ সব ধান-চাল একটা নির্দিষ্ট দর বেঁধে দিয়ে খোলা বাজারে ছেড়ে দিতে। প্রাদেশিক খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন খোলা বাজারে সব খাদ্যশস্য একটা নির্দিষ্ট দর বেঁধে দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে। এই সময় একজন মাত্র রাজনৈতিক নেতা সরকারকে সাবধান করেন। তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পুরান ঢাকায় ওকে রেস্টুরেন্টে (সাবেক মুকুল সিনেমা হলের পাশে অবস্থিত তখনকার অভিজাত রেস্টুরেন্ট। এখন আছে কিনা জানি না) সংবাদ সম্মেলন ডেকে অনুরোধ জানান। সরকার যেন একসঙ্গে খোলা বাজারে তাদের গুদামের মওজুদ খাদ্যশস্য ছেড়ে না দেয়। বরং রেশনের দোকানগুলোর মাধ্যমে বিক্রির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়ে চাল ছাড়ে। আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিসভা তার পরামর্শ উপেক্ষা করে। দৈনিক সংবাদে খবরটির ব্যানার হেডিং দেয়া হয় (সংবাদের মালিকানা তখন বদল হয়েছিল)Ñ‘সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারি গুদামের চাউল একযোগে খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া হবে।’ সরকারী গুদামের মওজুদ চাল খোলাবাজারে ছেড়ে দেয়ায় দামও হঠাৎ নেমে যায়। চালের ঘাটতিও ছিল না। মানুষও খুব খুশি। সাতদিন না যেতেই অকস্মাৎ ভোজবাজি! বাজারে চাল নেই। দাম হু হু করে বেড়ে আগের দামের চাইতেও তিনগুণ হয়ে গেছে। সরকার কমিশন বসাল কারণ তদন্তের জন্য। কমিশন তদন্ত শেষে জানাল অসাধু ব্যবসায়ীরা খোলা বাজার থেকে সব চাল সরকারের নির্ধারিত কম দরে কিনে নিয়ে স্টক করে এখন দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি করতে শুরু করেছে। তখন আর কিছু করার ছিল না। সরকারী গুদামের ধান-চাল এভাবে চড়া দামে বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের মিত্র আমলা পকেট ভারি করে। বর্তমান করোনাভাইরাসের সমস্যা আরও বেশি জটিল। ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টাদের ভুলে আমেরিকা এখন করোনাভাইরাস দ্বারা অনেক বেশি আক্রান্ত। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এই রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সামর্থ্য তার কম। তবু শেখ হাসিনার সরকার মানব সভ্যতার মহাসঙ্কটে সাধ্যমতো এই সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এই সঙ্কট এমনই সর্বব্যাপী যে, সরকারের কর্মপ্রচেষ্টার সঙ্গে নাগরিক-সহযোগিতার প্রয়োজন সব চেয়ে বেশি। অজ্ঞানতা ও ধর্মান্ধতার জন্য যদি নাগরিক সমাজের কোন অংশ সরকারকে এই সহযোগিতা দিতে অক্ষম হয়, তাহলে নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে এই কুসংস্কার ও অজ্ঞানতা দূর করার জন্য প্রয়োজনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। মা যেমন শিশুর মঙ্গলের জন্যই মাঝে মাঝে তাকে পীড়ন করেন, তেমনি সমাজ ও সভ্যতার রক্ষক হিসেবে কখনও কখনও ওয়েলফেয়ার স্টেটের সরকারকে পীড়ননীতি গ্রহণ করতে হয়। তখন ধর্মের হানি হলো বা গণতন্ত্র গেল গেল বলে কোন মহল যদি চিৎকার করে, সরকারকে তাও অগ্রাহ্য করতে হবে। এবারের ভাইরাস-আক্রমণ শুধু মানব সমাজের ওপর আক্রমণ নয়, মানব সভ্যতার ওপরেও আক্রমণ। রবীন্দ্রনাথ তার ‘সভ্যতার সঙ্কট’ এবং রোমা রোঁলা তার ‘ডেনজার ফর হিউম্যানিটি’ প্রসঙ্গে মানব সভ্যতার যে শত্রুকে চিহ্নিত করেছেন, বর্তমানের শত্রু তার চাইতেও ভয়াবহ। গোটা মানবতার সচেতন ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া এই মৃত্যুদূতকে প্রতিরোধ করা যাবে না। [লন্ডন, ৩১ মার্চ, মঙ্গলবার, ২০২০]
×