ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি ফখরুলের

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনা মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি ফখরুলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরার নিজ বাসায় সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান। ফখরুল বলেন, আমরা কখনোই সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না, আমরা বার বার বলছি যে, আমরা সরকারকে সাহায্য করতে চাই। আমরা বলেছি ত্রুটি নয়, আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। আমরা সরকারকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত একটা জাতীয় কমিটি তৈরি করা হয়নি। যেটা আরো আগে করা উচিত ছিলো বলে মনে করি। তাই সরকারকে বলছি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় কমিটি গঠন করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে। জাতীয় কমিটি গঠন করুন। এটা করা সরকারেরই দায় এবং দায়িত্ব। এটা করলে সকলের মধ্যে একটা ধারণা আসবে ‘উই আর ওয়ান’। তাই এটা আপনাকেই উদ্যোগী হয়ে করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দাঁড়াচ্ছে সেটা হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষজনের অর্থনৈতিক সমস্যা। এখন সবাই একটা কথা বলছেন বিশেষ করে যারা অর্থনীতিবিদ আছেন তারা বেশি করে বলছেন। সেটা হচ্ছে দেশের বেশিভাগ মানুষই এখন দিন আনে দিন খায়- এই বিশাল একটা অংশ কয়েকদিন ধরে কোনো আয় করতে পারছে না এবং এটা একটা টার্মিং পজিশনে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেই মানুষগুলোর জন্য যদি দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা না যায় তাহলে বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দেবে। যেটা আমরা ১৯৭৪ সালে দেখেছি। তাই এই বিষয়গুলো সরকারের দেখতে হবে। আমি মনে করি, সেনা বাহিনীকে যদি সেই কাজে লাগানো যায় এবং একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সম্পৃক্ত করে যদি সেই কাজগুলো করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি সম্পৃক্ত করা যায়, তাদেরকে একসঙ্গে করা যায় তাহলে অত্যন্ত ফলোপ্রসূ হবে। তার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রি বরাদ্দ থাকতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ১৬০ মিলিয়ন মানুষের দেশ। এখানে অর্থনীতি একেবারে নিচের দিকের। তাই এ ধরনের সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে যদি একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা যায় সেটাই হবে দেশের জন্য ভালো কাজ। তাই আমরা মনে করি জাতীয় কমিটি করা দরকার। কিভাবে এই কমিটি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগ নিয়ে করতে হবে। একখানে বসে মিটিং করে কমিটি করতে হবে তা বলছি না। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই এ জাতীয় কমিটি গঠন করতে পারেন। অথবা সকল নিরাপত্তা রেখে যদি তিনি যদি কমিটি গঠনের জন্য সভা করতে চান তাও পারেন। ছুটি ঘোষণা করে দুইদিন পর পর্যন্ত পরিবহন চালু রাখা সরকারের ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমি মনে করি এটা বড় ভুল হয়েছে। এতে করে সকল মানুষ সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে । এক কোটি মোবাইল ফোন ঢাকার বাইরে চলে গেছে। এতই বুঝা যায় কত মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে। আর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও বিদেশ ফেরত ৪০ হাজার মুনুষকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফখরুল বলেন, চীনের ঘটনার পর করোনা মোকাবেলায় সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি। সমস্যাগুলো প্রথম থেকে দেখলে দেশে এটা এখন এত প্রকট আকার ধারণ করতো না। তিনি বলেন, লকডাউন যেটাকে বলে সেটা সেভাবে হয়নি। যার ফলে দেখা গেছে যে, প্রথমদিকে দু’একদিন হাজার হাজার মানুষ বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে করে ছুটি কাটাতে কক্সবাজার, সিলিটসহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গেছে। আমাদের দেশে সবাই সচেতন নয়, তাই অনেকে বুঝতে পারেনি। কিন্তু সরকারের তো উচিত ছিল ব্যবস্থা নেয়া। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিএনপি কি কার্যক্রম চালাচ্ছে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, মহামারি থেকে বাঁচতে দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঘরবন্দী মানুষজন বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করছে। এটা অব্যাহত থাকবে। ফখরুল বলেন, এখন ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো রোগে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা পাচ্ছে না। পত্রিকায় খবর এসেছে একজন এপেনডিসাইটিজের রোগী ৮টা হাসপাতালে ঘুরেও আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে পারছে না। তাই আমরা বলেছি, বিষয়টাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে বিরোধী দলকে কিভাবে কাজে লাগাবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কিভাবে কাজে লাগাবে, ভাল পরিবেশ কিভাবে সৃষ্টি করবে।
×