ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দু’উপজেলার সীমান্ত ব্রিজে ব্যারিকেড-রাস্তার পাশে জীবাণুমুক্তর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ৩১ মার্চ ২০২০

দু’উপজেলার সীমান্ত ব্রিজে ব্যারিকেড-রাস্তার পাশে জীবাণুমুক্তর ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, যেনেছি তার ইতিহাস। তাই একাত্তরের মার্চ মাসের ন্যায় ২০২০ সালের মার্চ মাসের মহামারি করোনা মোকাবেলাকে আরেকটি যুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করে সরকারের নির্দেশ যেন শতভাগ পালন করা হয় সেজন্য জীবনের ঝুঁকিনিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে গ্রামের মানুষকে সচেতন করে ঘরে রাখার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি ঘরে আটকে পরা দিনমজুর পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য। একইসাথে অতিপ্রয়োজনে ঘর থেকে হাট ও বাজারে বের হওয়া দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝে মাস্ক ও সাবান বিতরণের পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বেসিন ও সাবানের ব্যবস্থা করেছি। কথাগুলো বলছিলেন-বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুমন মাহমুদ, ছাত্রলীগ নেতা রাসেদুল ইসলাম সঙ্গীত, শাহাদাৎ হাওলাদার ও আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাগর সেরনিয়াবাত। করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনের পাশাপাশি সরকার ঘোষিত নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে এসব ছাত্রলীগ নেতারা ইতোমধ্যে বর্তমান প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপাধী লাভ করেছেন। সূত্রমতে, সড়কপথে বরিশাল বিভাগের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী জেলা মাদারীপুর। ওই জেলায় সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে গত ২৪ মার্চ গৌরনদী উপজেলার চৌকস নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহানের নির্দেশে থানা পুলিশ সীমান্তবর্তী এলাকাকে লক ডাউন ঘোষনা করেন। ওইদিন থেকে বরিশাল ও মাদারীপুরের সীমান্তবর্তী স্থল ও নৌ-পথের ১২টি স্পটে পুলিশের চেকপোষ্ট বসানো হয়। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ সরকার ঘোষিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দোকান ব্যতিত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণার পর উপজেলা প্রশাসন ও গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ কঠোর অবস্থানে মাঠে নামেন। প্রথমে তারা এলাকাবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ব্যতিত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকান বন্ধ করে দেন। পরে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন। বর্তমানে ঘরে আটকে পরা দিনমজুর পরিবারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গৌরনদীর সীমান্তবর্তী টরকী বন্দর সংলগ্ন পালরদী নদীর ওপরের ব্রীজ দিয়ে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় প্রবেশের পথে দুইটি বিশাল বাঁশের ব্যারিকেড দেয়া রয়েছে। পাশেই পাহারা দিচ্ছেন গৌরনদী মডেল থানার একদল পুলিশ সদস্য। তারা (পুলিশ) বলেন, কোন অবস্থানেই তারা ব্রীজ দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দিচ্ছেন না। গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট ও বাজারে এবং বাঙ্গীলা গ্রামের যুব সমাজের উদ্যোগে রামসিদ্ধি, ধুলিয়াল, রাজাপুর, নন্দনপট্টিসহ বিভিন্নস্থানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ এবং বিভিন্ন গুরুত্বর্পূনস্থানে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল র‌্যাব-৮ এর উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাধারণ জনগণের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ওইসব এলাকায় বিভিন্ন শ্লোগান সংবলিত বিশাল বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে লেখা রয়েছে-নিজে সুস্থ থাকুন, সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন, করোনা মুক্ত থাকুন। হাত ধোয়া বেসিনের ওপর রাখা রয়েছে সাবান। তার ওপরে জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাটানো বিলবোর্ডে লেখা রয়েছে-‘একটি বিশেষ ঘোষণা। সবার অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে, প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার আতঙ্কে সারাবিশ্ববাসী এখন আতঙ্কিত। তাই সর্বসাধারণকে জানানো যাচ্ছে যে, আপনারা সবাই যার যার ঘরে অবস্থান করুন। বিনাপ্রয়োজনে বাহিরে ঘোরাফেরা করবেন না। উক্ত কাজগুলো নিজে করুন এবং অন্যকেও উৎসাহিত করুন। এসব কাজের ক্ষেত্রে কেউ আপত্তি পোষণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতএব, নিজের জীবনকে মূল্যায়ন করুন, এলাকাকে ভাইরাস মুক্ত রাখুন।’ এছাড়া র‌্যাব-৮ এর উদ্যোগে নগরীর বিভিন্নস্থানের ওষুধের দোকান, কাঁচা বাজার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কাটার দোকানের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বৃত্ত অংকন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে যাতায়াতের সময় মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, নিয়মিত সঠিকভাবে হাত ধৌতকরণের বিষয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দিনমজুর পরিবারের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে গৌরনদী ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা গত কয়েকদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং অতিপ্রয়োজনে বের হওয়া গাড়িকে জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সার্বিক বিষয়ে বরিশালের চৌকস জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, মানুষ এখন অনেকটা সচেতন। তাই বিনা কারণে কেউ ঘরের বাহিরে বের হচ্ছেন না। এজন্য সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেছে জেলার খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারগুলো। তাদের দুর্দীনের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে সরকারী বরাদ্দের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী জেলা প্রশাসনসহ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, করোনা মোকাবেলায় সরকারের কঠোর নির্দেশে পুরো জেলাজুড়ে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্ময় করে এ কাজে আনসার ও গ্রামপুলিশের সদস্যদেরকে নিয়োজিত করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনার কারনে দেশের ক্লান্তি লগ্নে বর্তমান যুব সমাজ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×