ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা হটলাইনে তিন মাসে সাড়ে ৯ লাখের বেশি কল

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৩১ মার্চ ২০২০

করোনা হটলাইনে তিন মাসে সাড়ে ৯ লাখের বেশি কল

নিখিল মানখিন ॥ করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ১২ বছর বয়সী এক বালকের মৃত্যু ঘটে। তার শরীরে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথার উপসর্গ ছিল। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক শিশুটির রোগের উপসর্গসমূহ জানিয়ে আইইডিসিআরের হটললাইনে কল করেন। কিন্তু এসব উপসর্গ শোনার পরও শিশুটির করোনার নমুনা পরীক্ষা করার দরকার নেই বলে জানিয়ে দেন হটলাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইনগুলোতে দৈনিক আসা ৭০ থেকে ৮০ হাজার কলের সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এত সংখ্যক কল সঠিকভাবে মূল্যায়িত হলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এবং করোনা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহজনক করোনা রোগীর হাসপাতালে ভর্তি এবং রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। সীমিত পরিসরে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা সংক্রমণের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ব্যাপকতা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত তিন মাসে আসা সাড়ে ৯ লাখের বেশি করোনা সংক্রান্ত হটলাইনগুলোতে কলের বিপরীতে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩৩৮টি। সোমবার পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বাতায়নে ৭১ হাজার ২৬৬টি, ৩৩৩ নম্বরে ১৩৯৭টি এবং আইইডিসিআরের নম্বরে ৩৯৯৭টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় এসেছে মোট ৭৬ হাজার ৬৬০টি। এ পর্যন্ত করোনা সংক্রান্ত মোট ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৮টি কল এসেছে বলে জানিয়েছেন ডাঃ নাসিমা সুলতানা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। করোনাভাইরাস সংক্রমণের চারটি স্তর রয়েছে। চারটি স্তরের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়টি হলো কমিউনিটি সংক্রমণ। এই স্তরে রোগ কোন সম্প্রদায়গতভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ সংক্রামিত হয়। সম্প্রদায়ের সংক্রমণ তখনই হয় যখন কোন রোগী কোন সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও বা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে কোন একটি দেশে সফর না করা সত্ত্বেও তার শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এই পর্যায়ে, সংক্রামিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই সীমিত পরিসরে হলেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে থাকলে দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো দরকার। দৈনিক গড়ে ১০০ তেকে ১৫০টি নমুনা পরীক্ষা করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ব্যাপকতা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যাবে না। ফলে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলেন, টেস্টের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেফিনেশনের কথা বলে আইইডিসিআর। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেফিনেশন তো আরও রয়েছে, তারা (আইইডিসিআর) যে ডেফিনেশন দিচ্ছে সেটা দিয়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বোঝা যাবে না। পরীক্ষা ব্যবস্থা এখন জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দিতে হবে। নয়তো সঠিক রোগী পাওয়া যাবে না। শুরু থেকেই যে সবার সাহায্য নেয়া দরকার ছিল সেটা তারা হয় বুঝতে পারেনি, নয়তো বুঝতে চায়নি। টেস্ট যদি করা হয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে রোগীর সংখ্যা ওই জায়গায় পৌঁছাবে, কিন্তু টেস্টই যদি না করা হয় তাহলে সে রোগীর সংখ্যা দশ গুণ বাড়বে। আর এটা যত দিন যাবে ততই দ্বিগুণ হারে বাড়বে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জাহিদুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের এই পর্যায়ে (লেভেল-৩) সবচেয়ে জরুরী কাজ টেস্টিং। রাষ্ট্র সন্দেহজনক সবার টেস্ট করতে বাধ্য, আর আইইডিসিআর ব্যর্থ হবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই যত দ্রুত সম্ভব সারাদেশে কমপক্ষে ১৫-২০টি ল্যাবে পিসিআর মেশিন বসিয়ে প্রতিটি সাসপেক্টেড কেস টেস্ট করতে হবে বলে মনে করেন ডাঃ জাহিদুর রহমান। সোমবার কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা সবসময় বলেছি, বাংলাদেশের অন্য ল্যাবরেটরির দিকে তাকাতে হবে না, আইইডিসিআরই একদিনে ১ হাজার টেস্ট করাতে পারে। তবে টেস্ট কম করা হচ্ছে বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করতে চাই, আমরা যাদের করোনা আছে মনে করছি সাসপেক্টেড কেস করোনা, তাদের প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই সাসপেক্টেড কেসের সংখ্যার ওপরই নির্ভর করবে পরীক্ষা কতখানি হবে। লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষার প্রয়োজন নাই। যাদের লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে এবং মনে হবে করোনা, তাদের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে, তারা করোনা তাদেরই পরীক্ষা করা হবে এবং সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা। হটলাইনে কল করেও ফোন না ধরা বা পরীক্ষার ব্যবস্থা না করার অভিযোগ নিয়ে ব্রিফিংয়ে বাসা থেকে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যেগুলো পরীক্ষার প্রয়োজন সেগুলো করা হচ্ছে। সবাই তো পরীক্ষার জন্য ফোন করে না। কেউ কেউ জানার জন্য ফোন করে। যার প্রয়োজন হবে তার পরীক্ষা করা হবে। দেশের ৭টি সেন্টারে করোনা টেস্ট করানো হচ্ছে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইইডিসিআর, আইপিএইচ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতাল, চিলড্রেন হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ওফবংয নামের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে পিসিআর টেস্ট করার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুত আছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগে চঈজ টেস্ট সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিকাল মেডিসিন এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চঈজ মেশিন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অন্য বিভাগগুলোতেও করোনাভাইরাস পরীক্ষা চালু হবে। বর্তমানে আমাদের হাতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কিট আছে ৪৫ হাজার বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্দেহজনক করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে দেশের বিভিন্ন হাসপতাালে। অসংখ্যবার কল দিয়ে সাড়া পাচ্ছেন না শত শত করোনা উপসর্গে আক্রান্ত মানুষ। করোনার মতো উপসর্গ শোনার পরও নমুনা পরীক্ষা করানোর বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছেন হটলাইনে থাকা চিকিৎসকরা। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর রোগীটির দাফন/সৎকার করা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৈরিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী। কিন্তু মৃত রোগীটির নমুনা পরীক্ষা হয় না। দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব চিত্র বেরিয়ে এসেছে। যশোরে একটি শিশুর মৃত্যু ॥ যশোর জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে ভর্তি (১২) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথার কারণে সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা নিয়ে ওই শিশু রবিবার বিকেল ৫টায় হাসপাতালের আসে। জরুরী বিভাগের ডাঃ আহমেদ তারেক শামস করোনা সন্দেহে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর ৪টায় তার মৃত্যু হলেও সকাল ১০টায় হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইদ্রিস আলী তার মৃত্যু ঘোষণা করে বলেন, অতিরিক্ত জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে সে করোনায় সংক্রমিত ছিল না। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আরিফ আহম্মেদ আইসোলেশনে ভর্তি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। আইইডিসিআর ডাঃ রোবায়েরের যোগাযোগ করা হয়েছে। এ শিশুর কোন করোনার লক্ষণ দেখা যায়নি। তাই তার নমুনা ঢাকায় পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হারুণ অর রশীদ। মুন্সীগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক শিশুর মৃত্যু ॥ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোহাগ হোসেন (১২) নামে এক শিশু মারা গেছে। এলাকাবাসীর ধারণা তার মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল। সে উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে। সোহাগ রবিবার রাত সাড়ে ৩টায় প্রচ- জ¦র নিয়ে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরে সোমবার ভোরে ঢাকা নেয়ার পথে সে মারা যায়। পরে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, জ্বর নিয়ে রবিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে সোহাগকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শ^াসকষ্ট বা সর্দি-কাশি ছিল না। তার বেশ জ¦র ছিল এবং ঘাড় বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। পরে অবস্থা খারাপ হলে ভোরে ঢাকা নেয়ার পথে সোহরাব মারা যায়। বিষয়টি আমরা আইইডিসিআরকে জানালে তারা করোনার উপসর্গ নয় বলে জানান। কুষ্টিয়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু ॥ কুষ্টিয়ায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে একজনের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়ে চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে করোনা সন্দেহে তাঁর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত ওই ব্যক্তি পেশায় ছিলেন ইজিবাইকচালক। তিনি শহরের চৌড়হাস এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শুক্রবার তাঁর সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সোমবার সকালে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের আরএমও ডাঃ তাপস কুমার সরকার জানান, সকাল সাতটার দিকে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখতে পান, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইজিবাইকচালকের পরিবারে কোন বিদেশী নেই বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ইজিবাইক চালানোর সময় করোনাভাইরাসের বাহক কারও সংস্পর্শে যেতে পারেন। এ জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। এরপর লাশ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিন দিন ধরে তিনি সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করানোভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হবে। এদিকে করোনা সন্দেহে মৃত ওই ব্যক্তির বাড়ি নমুনার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত লকডাউন করেছে জেলা প্রশাসন। দিনাজপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু ॥ জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা পল্লীতে ফরহাদ হোসেন (৪০) নামের এক যুবক সোমবার ভোরে নিজ বাসায় মারা গেছেন। করোনাভাইরাস সন্দেহে ওই ব্যক্তির বাড়ির ৪ সদস্যসহ আশপাশের আরও ৪০টি বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়রেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান। মৃত ফরহাদ হোসেন (৪০) বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের শিবপুর আঁচলকোল তফসি গ্রামে আবু হানিফের ছেলে। তিনি কুমিল্লায় এক ইতালিফেরত প্রবাসীর বাড়িতে কৃষিকাজ করতেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত পহেলা মার্চ ৩ যুবকসহ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় কাজের সন্ধানে যান। সেখানে গিয়ে তার শরীরে জ্বর অনুভব হলে গত ১০ মার্চ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার ভোরে তিনি নিজ বাড়িতেই মারা যান। এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস জানান, খবর পেয়ে মেডিকেল টিম সেখানে গিয়ে মৃত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইডিইসিআর পাঠিয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নমুনা সংগ্রহের পর বিরামপুর শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যর একটি দল তাকে গোসল করায়। বাদ জোহর জানাজার পর বাড়ির পাশেই তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় ৭ জন উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ফরহাদ মারা যাওয়ার পর ওই পাড়ায় যাতে কোনও লোক ঢুকতে বা বের হতে না পারে, সে জন্য গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। শেরপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে একজনের মৃত্যু ॥ শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ৩ দিন জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেছেন আব্দুল আওয়াল (৫৮) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক। রবিবার রাতে উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশপাশের অন্ততঃ ১০টি বাড়ি রাতেই ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এদিকে সোমবার সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে প্রেরণের জন্য জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ কে এম আনওয়ারুর রউফ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে বিকেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় ওই ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, এলাকা থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে খবর আসে। ফলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কথা বলে তাদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়দের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এ কে এম এ রউফ বলেন, মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা। আর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ এর আশেপাশের বাড়িগুলো লকডাউন থাকবে। কেউ বাড়ির বাইরে যেতে কিংবা বাইরে থেকে কেউ এখানে যাতায়াত করতে পারবেন না।
×