ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত রাখার আহ্বান

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৩১ মার্চ ২০২০

মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত রাখার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরাজমান পরিস্থিতিতে মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে করোনা সংক্রমণ থেকে সচেতনতার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জুমা ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। উপসর্গ আছে এমন কোন ব্যক্তিদের মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষা বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রবিবার সকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নূরুল ইসলাম। এই পরামর্শ সভায় আলেমরা মতামত দিয়েছেন যে বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের দেশও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও জনগণ চরম উদ্বিগ্ন। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা তৈরি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা আবশ্যক। রোগ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সতর্কতা অবলম্বন তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। বরং নবীজীর (স) সুন্নত। মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও নিয়মিত জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। কিছু লোককে জুমা ও জামাতে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে, যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন, যারা উক্ত মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়োঃবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু, যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত এবং যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার জন্য বলা হয়েছে। এতে আর বলা বলা হয়েছে, যারা জুমা ও নিয়মিত জামাতে যাবেন তারা সকলেই যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নাত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সকল নির্দেশনা মেনে চলবেন। হঠাৎ হাঁচি-কাশি এসে গেলে টিস্যু বা বাহু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন। এতে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা। জামাত সংক্ষিপ্ত করা। জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা। বর্তমান সঙ্কটকালে দরসে হাদিস, তাফসির ও তা’লীম স্থগিত রাখা। ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো। ইশরাক, তিলাওয়াত, জিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা। ঢাকাসহ দেশের কোন মসজিদে যদি কোন বিদেশী মেহমান অবস্থান করেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাজা ॥ হাদিসের বর্ণানুযায়ী মহামারীতে মৃত মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তির কাফন, জানাজা ও দাফন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে করা জরুরী। করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফনে সহযোগিতা করুন। তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ বা কোনরূপ অসহযোগিতা করা শরীয়তবিরোধী ও অমানবিক। এতে আরও বলা হয়েছে হাদিস শরীফে আছে দান-সদকা দ্বারা বালা মুছিবত দূর হয়। এই সঙ্কটকালীন সময়ে আল্লাহর রহমত লাভের উদ্দেশে দুস্থ ও অসহায়দের বেশি বেশি দান-সদকা করুন। নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। গুজব মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গুজব সৃষ্টি করা বা গুজবে বিশ্বাস করা সর্বোতভাবে বর্জন নিশ্চিত করতে হবে।
×