ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল বন্ধের বিকল্প

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৩১ মার্চ ২০২০

স্কুল বন্ধের বিকল্প

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সরকার ইতোমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায়কে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সবার আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছুটি ঘোষণা করে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিয়ে সরকারী-বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শও দেয়া হয় যাতে যথার্থভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষের পাঠদান কর্মসূচী শুরু করা হয় বাংলাদেশের সংসদ টিভিতে। ২৯ মার্চ থেকে এই শিক্ষা কার্যক্রম প্রথম ছাত্রছাত্রীদের সামনে হাজির করে প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা চালু করা হয়। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই ক্লাস পরিচালনা করা হবে। পরে দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পুনরায় এই পাঠদান কর্মসূচী দেখানো হবে। কেউ যদি ক্লাস মিস করে যায় সে যাতে শিক্ষা কর্মসূচী থেকে পিছিয়ে না থাকে। এ টু আইয়ের সহায়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতর শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট না করে প্রয়োজন মতো শিক্ষাদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া মাউশি অধিদফতরের ওয়েবসাইটেও এই শিক্ষা দান কর্মপ্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রেণী রুটিন দেয়া হয়েছে। নিয়মিত প্রতিটি শ্রেণীর দুটি করে ক্লাস সম্প্রচার করা হবে। প্রতিটি ক্লাসের সময় হবে ২০ মিনিট। সব ক্লাসের রুটিন মাউশির ওয়েবসাইটে দেয়া থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যানবেইস’, মোবাইল ফোন কোম্পানি, ‘রবি’ এবং একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড করা হয় ক্লাসগুলো। অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং বিচক্ষণ শিক্ষকম-লী কর্তৃক ধারণকৃত ক্লাস শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শুধু ক্লাস নয়, পাঠদান শেষে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাড়ির কাজও দিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন খাতায় তাদের বাড়ির কাজগুলো সম্পন্ন করবে। স্কুল খোলার পর সংসদ টিভির পাঠদান অনুযায়ী সম্পন্ন করা বাড়ির কাজের মূল্যায়ন করবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, যা মূল পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন থাকবে। শিক্ষা জীবন প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য এক মহামূল্যবান সময়। এখানে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাসের বহুল সংক্রমণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় ক্রান্তিকাল পার করছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সময়টুকু যথার্থভাবে কাজে লাগতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতেই সংসদ টিভির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম আমলে নিয়েছে। তেমন পদক্ষেপেই সারা বাংলাদেশের সমস্ত স্কুলের শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভির মাধ্যমে তাদের বিষয়ভিত্তিক ক্লাসগুলোর যথার্থ নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষাগ্রহণ পর্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচী সত্যিই প্রশংসনীয় এবং গ্রহণযোগ্য। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন পাঠদান কর্মসূচী জরুরী এবং আবশ্যক। কারণ করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক এবং শঙ্কা কবে কাটবে বলা মুশকিল। সুতরাং শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বিবেচনায় এনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন কর্মসূচী প্রণয়ন করা সময়ের যৌক্তিক দাবি। ইতোমধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক, আইউবি এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় তেমন কর্মসূচী আমলে নিতে পারলে ছাত্রছাত্রীরা সেশন জটের দীর্ঘসূত্রতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
×