ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার সময় অনেকদিন বাসায় থেকে একবারও ঝগড়া হয়নি শাটলার দম্পত্তি শাপলা-রাজুর!

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ৩০ মার্চ ২০২০

করোনার সময় অনেকদিন বাসায় থেকে একবারও ঝগড়া হয়নি শাটলার দম্পত্তি শাপলা-রাজুর!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় ফুলের নামে নাম তার। আসল নাম শায়লা শারমীন শাপলা। ২০০৬ সালে বিদেশে খেলতে যাবার সময় পাসপোর্ট করার সময় ছোট নামের প্রয়োজন পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে ‘শায়লা শারমীন’ বাদ দিয়ে শাপলার পর ‘আক্তার’ অংশটি যোগ করা। সেই থেকে তার নতুন নাম শাপলা আক্তার। হ্যাঁ, পাঠক নিশ্চই ধরে ফেলেছেন জাতীয় তারকা শাটলারের কথাই বলছি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির বর্ষসেরা এই শাটলারের ক্যারিয়ার শুরু ২০০৩ সালে। ২৭ বছর বয়সী লাস্যময়ী শাপলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ব্যাডমিন্টনে এককে সাতবার ও বাংলাদেশ গেমস এক বারের চ্যাম্পিয়ন। ভাঙ্গতে চান সাবেক শাটলার এলিনা বেগমের ৯ বারের শিরোপার রেকর্ড। পাবনার মেয়ে শাপলা বিয়ে করেছেন সাবেক শাটলার এবং বর্তমানে ব্যাডমিন্টন কোচ অহিদুজ্জামান রাজুকে। স্বামীকে নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ গেমসে অংশ নেয়ার জন্য আনসারের শাটলার শাপলা পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছিলেন গত ৭ মার্চ থেকে। কিন্ত ১৩ মার্চ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন অনুশীলন। কারণ করোনা ভাইরাস। শুধু ব্যাডমিন্টন নয়, এই ভাইরাসের জন্য বাংলাদেশে সব ধরনের খেলাধুলাই এখন বন্ধ। কবে আবার মুখরিত হয়ে উঠবে ক্রীড়াঙ্গন, তা বলা মুশকিল। ঘরে বসে অখণ্ড অবসর পার করছেন শাপলা। যেন মুটিয়ে না যান, এজন্য করছেন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। নামাজ পড়া, পরিবারের সবার সঙ্গে গল্পগুজব, গান শোনা, ফেসবুকে করোনা সংক্রান্ত আপডেট নিউজ পড়া,... করার মধ্যে আছে এগুলো। তবে ইচ্ছা থাকলেও রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছেন না। কেন? ‘আমার শ্বাশুড়ি আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতেই দেন না। তিনি চান আমি যেন শুধু খেলা নিয়েই থাকি!’ জনকণ্ঠকে বলেন শাপলা। করোনা নিয়ে কতটা সচেতন শাপলা? ‘বাইরে তো যাচ্ছিই না। ঘরে আধঘণ্টা পর পর সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি। যে বিল্ডিংয়ে থাকি, সেখানে আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন থাকেন, তারা মাঝেমধ্যে বাসায় এলে তাদেরও হাত ধোয়াই।’ শাপলা আরও যোগ করেন, ‘আমার স্বামীও জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে যান না। যদি যান তাহলে বাসায় ফিরে তিনি সরাসরি বাথরুমে চলে যান। সেখান থেকে গোছল করে, পরিস্কার হয়ে তবেই বের হন।’ আগে স্বামী-স্ত্রী খেলার সুবাদে দুজনেই সারাদিন বাইরে থাকতেন, দেখা-সাক্ষাৎ হতো রাতে, বাসায়। আর এখন তো সারাক্ষণই একসঙ্গে এক ছাদের নিচে। সারাক্ষণ এক মুখ দেখতে দেখতে একঘেয়েমি লাগে না? ঝগড়া হয় না? প্রশ্ন শুনে প্রাণখোলা হাসিতে ভেঙ্গে পড়েন শাপলা, ‘মোটেও না। বিশ্বাস করেন, আমাদের মধ্যে একটুও ঝগড়া হয় না। আমরা মিলেমিশে থাকি।’ প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীদের নির্বুদ্ধিতায় এদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে শাপলা বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ড সত্যিই হতাশাজনক। তাদের উচিত ছিল দেশে ফিরেই হোম কোয়ারিনটাইনে যাওয়া। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই এই নিয়ম মানেননি। এটা একদমই ঠিক হয়নি।’ এছাড়া সরকারের দশ দিনের ছুটি ঘোষণায় যারা নিজের বাসায় না থেকে দলবেঁধে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, তাদের নিয়ে শাপলার প্রতিক্রিয়া, ‘এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হয়েছে। তারা ছুটির অপব্যবহার করেছেন। এ কারণে গ্রামগুলো এখন সবচেয়ে বেশি করোনার ঝুঁকিতে আছে।’ থানকুনি পাতা খেলে করোনা হয় না-এই গুজব মোটেও বিশ্বাস করেন না শাপলা, ‘আমি পাতা খাইনি। এমনকি ঠাণ্ডা কিছুই খাই না।’ শাপলার আত্মীয়-পরিজনদের এখনও কেউই সৃষ্টিকর্তার কৃপায় করোনায় আক্রান্ত হননি। করোনা সন্দেহে অনেকেই হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না, প্রতিবেশীরা ভয়ে কাছে আসছে না, এমনকি কেউ মারা গেলেও তাকে জানাজা পড়িয়ে দাফন করতে বাধা দেয়া হচ্ছে ... সাম্প্রতিক সময়ের এই ঘটনাগুলো নিয়ে শাপলার ভাষ্য, ‘এখন ঋতু বদলাচ্ছে। ফলে এমনিতেই অনেকেই সর্দি-জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ভয় না পেয়ে বাসাতেই কদিন থেকে চিকিৎসা নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। অবস্থা খারাপ হলে তখন হাসপাতালে নিতে হবে। তবে সেখানে চিকিৎসদের রোগী দেখতে অস্বীকৃতি জানানো এবং হাসপাতাল কৃর্তপক্ষের রোগী ভর্তি করতে রাজি না হওয়া বিষয়টি ভীষণ মর্মান্তিক। এটা অনাকাখিত!’
×