ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মারা গেলেন স্পেনের প্রিন্সেস

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৩০ মার্চ ২০২০

 করোনায় মারা গেলেন  স্পেনের  প্রিন্সেস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার মারা গেছেন স্পেনের রাজকুমারী মারিয়া টেরেসা। এতে রাজপরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এই প্রথম কোন রাজপরিবারের সদস্যের প্রাণ গেল। অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোইরি। খবর এবিসি নিউজ ও ডেইলি মেলের। ফেসবুকে মারিয়া টেরেসার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন তার ভাই প্রিন্স সিক্সটাস হেনরি, ডিউক অব আরানজুয়েজ। তিনি জানান, মারিয়া টেরেসার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর শুক্রবার প্যারিসে তার মৃত্যু হয়েছে। ওইদিনই মাদ্রিদে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। প্রিন্স হাভিয়ার ও ম্যাডেলিন ডি বারবনের ছয় সন্তানের অন্যতম মারিয়া টেরেসা ১৯৩৩ সালের ২৮ জুলাই প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। এদিকে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লসও সম্প্রতি নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্ত্রী ক্যামিলাকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে প্রথম যিনি নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ‘পজেটিভ’ আসার পর তিনি নিজেকে আলাদা (আইসোলেশন) রেখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব নেতাদের মধ্যে জনসনই প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এর একদিন আগেই এ ভাইরাসের কবলে পড়েন ব্রিটিশ রাজপরিবারের যুবরাজ চার্লস। কয়েকদিন আগে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ব্রিটেনের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জনসন নিজের মধ্যে কোন লক্ষণ নেই বলে এখনই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না বলে দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে ৫৫ বছর বয়সী জনসন ও ৪১ বছর বয়সী হ্যানকক- দুজনেরই উপসর্গ মৃদু, তারা বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। জনসনের প্রেমিকা ৩২ বয়সী ক্যারি সিমন্ডস এখন সাত মাসের গর্ভবতী। তার মধ্যে কোন উপসর্গ আছে কিনা জানা যায়নি। এর আগে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট নেগোশিয়েটর ডেভিড ফ্রস্ট নিজের মধ্যে করোনাভাইরাসের মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়ার পর স্বেচ্ছায়-বিচ্ছিন্নবাসে রয়েছেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান নেগোশিয়েটর মিশেল বার্নিয়ের কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত প্রথমদিকের রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম। চলতি মাসের প্রথম দিকে ফ্রান্সে নিজের ঘর থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি আক্রান্ত হওয়ার খবর দেন। ফ্রান্সে চারজন রাজনীতিবিদ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে সংসদ সদস্য, পার্লামেন্টের এক কর্মকর্তা, সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং প্রতিবেশ প্রতিমন্ত্রী। নিজের চিকিৎসকের মধ্যে নোভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিলেন। কিন্তু দুবারের পরীক্ষায় তার মধ্যে ভাইরাস ধরা পড়েনি। এর আগে মোনাকোর রাজপুত্র দ্বিতীয় এ্যালবার্ট শ্বাসতন্ত্রের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এদিকে ব্রাজিলের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে তাদের সংস্পর্শে আসায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরীক্ষা করা হয়। তবে তার শরীরে ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। মিয়ামির মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার পরে নয় আইনপ্রণেতাও কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এদের মধ্যে তিনজন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসা ব্রাজিলের একটি প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ওয়াশিংটনে ব্রাজিলের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স, একজন সিনেটর ও প্রেসিডেন্টের প্রেসসচিব। নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এক রোগীর সংস্পর্শে আসার পর ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে পরীক্ষা করে ফল নেতিবাচক এসেছে। অন্যদিকে ইরান সরকারের আট শতাংশ সদস্য প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত- ২৯০ জন সাংসদের মধ্যে ২৩ জনের শরীরে ভাইরাস মিলেছে। দুই সাংসদ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ইরানের বেশ কয়েজন ভাইস-প্রেসিডেন্টও আক্রান্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর এক সপ্তাহেরও আগে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার, হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোইরি। শনিবার এক বিবৃতিতে সোফি নিজেই নিজের সুস্থতার কথা নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে সোফি গ্রেগোইরি ট্রুডো বলেন, আমি খুব ভাল অনুভব করছি। তিনি জানিয়েছেন, তার চিকিৎসক এবং ওত্তাওয়া গণস্বাস্থ্য তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। এর আগে গত ১২ মার্চ জাস্টিন ট্রুডোর কার্যালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছিল যে, সোফি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। লন্ডন থেকে সফর করে দেশে ফেরার পর অসুস্থ বোধ করায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলে তার শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই সেলফ আইসোলেশনে থাকা শুরু“করেন। যদিও ট্রুডো এবং তার তিন সন্তানের দেহে করোনার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। এরপর থেকে প্রতিদিনই নিজের বাসভবনের বাইরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ট্রুডো। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশবাসীকে প্রতিনিয়ত সাহস দিয়ে গেছেন তিনি। শনিবার এক বিবৃতিতে ট্রুডো জানান, সোফি ভাল অবস্থায় আছেন।
×