ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম পর্ব

সময়ের প্রবাহে ভয়াবহ পানি সংকটের দ্বার প্রান্তে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৯ মার্চ ২০২০

সময়ের প্রবাহে ভয়াবহ পানি সংকটের দ্বার প্রান্তে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তন আর পানির অতিব্যবহার কিংবা কখনও অপব্যবহারের ফলেভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। গত চার দশকেরও বেশি সময়ে আমাদের দেশে ভূগর্ভের পানির ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে সুপেয় পানির চাহিদা ও চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পানির প্রায় ৮০ শতাংশই মেটাতে হয় পাতাল বাভূগর্ভের পানির উৎস থেকে । দুঃখজনক ভাবে এই পানির প্রায় অর্ধেকই অপচয় হয় । অথচ, এখনও বাংলাদেশের বহু জায়গায় নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির সংস্থান। এক সময় যখন পাতালের পানি শেষ হয়ে যাবে তখন পানির বিকল্প ব্যবস্থা কি হবে? কয়েক বছর আগে বিএডিসির এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার পানির স্তর সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে।এ অবস্থায় মাটির নিচ থেকে অব্যাহত ভাবে পানি তোলা হলে আগামীতে ঢাকার পানিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি চলে আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে পানির স্তর নিচে নামতে থাকলে এক সময় শুধু পানির অভাবেই ঢাকা ছাড়বে মানুষ। এতোগেল ঢাকার কথা। ঢাকার বাইরের অবস্থা কেমন? বিএডিসির 'গ্রাউন্ড ওয়াটারজোনিংম্যাপ' অনুযায়ী, চলতি শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। দেশে বর্তমানে ১৭ লাখ অগভীর নলকূপ মাটির নিচ থেকে পানি তুলছে। কিন্তু এখন অনেক এলাকায় মাটির ২৪ ফুট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। এমনকি গভীর নলকূপেও অনেক স্থানে ঠিকমতো পানি মিলছে না।৩৫ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নেমে যাচ্ছে। যার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের জেলাই বেশি। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা অববাহিকা বিস্তৃত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবংউত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূগর্ভের পানির স্তরপ্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হারে নামছে। সম্প্রতি এশীয়উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও এশীয়-প্রশান্ত পানি ফোরাম 'দ্য এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক' শীর্ষক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশে পানি সংকট ভয়াবহ। এতে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলের ৪৯ দেশের মধ্যে ৩৭ দেশেই পানি সংকট রয়েছে। এর মধ্যে পানি সংকট ভয়াবহ রূপ পেতে চলেছে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ায়। অন্যদিকে আয়রন, আর্সেনিকসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থপ্রচুর পরিমাণে পানিতে মিশে আছে; ক্ষেত্রবিশেষে যা কিনা মরণঘাতী রূপ নিতে পারে ।বছর কয়েক আগেও কুষ্টিয়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় আর্সেনিক দূষণ ছিল মারাত্মক আকারে।এই পানি খেলেই শুরু হয় নানান ধরনের পানি বাহিত রোগ ও চর্মরোগের প্রকোপসহ অন্যান্য সমস্যা। ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাছিল২৫০-এর মত। ২০১৩তে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০০। মেহেরপুরের প্রায় এগারটি গ্রামেও আর্সেনিকের ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি । নির্বিচারে জলাভূমি ভরাট করাএবংভূ-গর্ভের পানি উত্তোলন করার কারণেই এই গ্রামগুলোর নলকূপের পানিতে এসব ক্ষতিকর ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি। নিরুপায় জনসাধারণ এই দূষিত পানি পান করে হচ্ছে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন । বছর খানেক আগে নোবেলজয়ীইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অনক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণের খুলনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ ১৬ জেলার কোনোটাতেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নেই। সবখানেই নোনা জলের আগ্রাসন। ১০ থেকে ১২ কিলো মিটার দূরে গিয়ে তাই এক কলস পানি কিনে আনতে হয় ১০ টাকা দিয়ে। খাবার পানি জোগাড় করতেই উপকূলের নারীদের দিন কেটে যায়। তার উপর আবার অনেক এলাকার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক! জাতিসংঘের সদ্য প্রকাশিত বিশ্ব পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলাহয়েছে, এই শতাব্দীর মধ্য ভাগে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭২০ কোটি থেকে ৯৬০ কোটি হবে। তখন পৃথিবীতে পানির চাহিদা বাড়বে ৫৫ শতাংশ।এদিকে বছর দুয়েক আগে 'নেপোটিজম অ্যান্ডনেগলেক্ট : দ্যফেইলিংরেসপন্সটু আর্সেনিক ইন দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার অব বাংলাদেশ' সরুরাল পুওর' শীর্ষক প্রতিবেদনে এইচ আর ডব্লিউ জানায়, খাওয়ার পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার ২২ বছর পরও বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চলমান-
×