ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টিসিবির ট্রাকসেল শূন্যের কোঠায়

রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার ক্রেতাশূন্য, দাম কমছে

প্রকাশিত: ১১:০০, ২৯ মার্চ ২০২০

রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার ক্রেতাশূন্য, দাম কমছে

এম শাহজাহান ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় নগরবাসীর কেউ আর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাঁচাবাজারে যাচ্ছেন না। এ কারণে ছুটির তৃতীয় দিনেও নিত্যপণ্যের বাজার ছিল ক্রেতাশূন্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ফাঁকা ছিল ভোগ্যপণ্যের বাজার। টিসিবি’র ট্রাকসেল কার্যক্রমে বিক্রি প্রায় শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তবে চাহিদা না থাকায় বেড়ে যাওয়া চড়ামূল্যের পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। চালের বিক্রি কমে গেলেও চাহিদা বেড়েছে লেবু ও দেশীয় ফলমূলের। বেড়ে গেছে লেবু ও নতুন উঠা গুটি জাতীয় কাঁচা আমের। এছাড়া ফার্মেসিতে মেডিকেল পণ্য হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার, মাস্ক ও স্যাভলনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রীর সরবরাহ বেড়েছে। তবে অনুমোদনহীন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান লাভের আশায় বিভিন্ন নামে হ্যান্ডওয়াশ ও স্যানিটাইজার বাজারে বিপণন করছে। এসব পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ভোক্তা মহলে। উচ্চদামে এসব পণ্য কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষায় সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার আগে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ ভোক্তারা। আর বুঝি পাওয়া যাবে না-এই আশঙ্কা করে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের মতো পণ্য চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কিনে মজুদ করে নগরবাসী। যে ভোক্তার চালের প্রয়োজন ছিল ২৫ কেজি, সে অতি উৎসাহিত হয়ে ১ থেকে ৩ বস্তা চাল কিনে রেখেছেন। এতে করে চলমান ‘লকডাউন’ ঘোষণার আগে প্রতিকেজি চালে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। এমন কোন ভোগ্যপণ্য নেই যে ওই সময় বাড়েনি। তবে নগরবাসীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে শাক-সবজিসহ সবধরনের নিত্যপণ্যের বাজার, সুপারশপ, মুদিপণ্যের দোকান, ফার্মেসি, এলপিজি গ্যাস, সীমিত আকারে হোটেল-রেস্তরাঁ, খাদ্যপণ্যের দোকান, মোবাইল সার্ভিস সেন্টারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, পণ্যের সরবরাহ চেন স্বাভাবিক রাখতে ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যানসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক, রাখা আমদানিকৃত পণ্যের জন্য দ্রুত ঋণপত্র চালুকরণ ও নিষ্পত্তি, সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখাসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ কারণে বাজারে এখন আর কোন ধরনের পণ্য সঙ্কট নেই। ক্রেতারা বাজারে গেলে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী কেনাকাটা করতে পারছেন। তবে এক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ এড়াতে নিরাপত্তা দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতাদের চলাফেরা ও কেনাকাটার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজারে যাতে কোন ধরনের ভিড় ও জটলা পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকেও নজর রাখছে সরকার। এছাড়া বাজারে আসা ক্রেতাদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্ল্যাভস ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইভাবে ব্যবসায়ীরাও নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জনকণ্ঠকে বলেন, লকডাউনের সময় বাজারে কোন পণ্যের সঙ্কট তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতেও পণ্য সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। কারণ চাহিদামতো পণ্যের সরবরাহ করতে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। এছাড়া যেগুলো আমদানি করা হয়, সেসব পণ্যের মজুদও বাড়ানো হয়েছে। চীন ও ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এসব কারণে দেশে খাদ্য পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। এদিকে, কাঁচাবাজার ফাঁকা হওয়ার পাশাপাশি রাজধানীর সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র ট্রাকসেল কার্যক্রমে বিক্রি প্রায় শূণ্যের কোঠায়। ক্রেতাদের লাইন ধরে কেনাকাটার সেই ভিড় নেই। এ কারণে টিসিবি বিক্রি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ডিলাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবি’র একজন ডিলার বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ যে পণ্যসামগ্রী আনা হচ্ছে তা বিক্রি হয় না। অথচ ছুটির আগে উল্টো অবস্থা ছিল। তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের বেশিরভাগ মানুষ এখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। আর এ কারণে টিসিবি’র পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে না। করোনা আতঙ্কের কারণে ঢাকার প্রায় এক কোটি মানুষ গ্রামে চলে গেছেন বলেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে জানানো হচ্ছে। এর ফলে নগরের পণ্য চাহিদাও অনেক কমে গেছে। তরে রাজধানীর কাওরান বাজারসহ নগরীর বেশিরভাগ বাজার চালু আছে। একটি বাজারের অন্তত ৩০-৪০ ভাগ দোকানপাট এখনও বন্ধ রয়েছে। ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজারের ব্যস্ততা বাড়বে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খিলগাঁও গোড়ান বাজারের মুদিপণ্যের বিক্রেতা মোঃ টিটু হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। যারা ঢাকা আছেন তারা ছুটির আগে চাহিদা মতো সব পণ্যসামগ্রী কিনে নিয়েছেন। আর এ কারণে ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। এছাড়া করোনার ভয় তো আছেই। তিনি বলেন, চালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি কমেছে। এখন আর চালের কথা কেউ বলে না। এ কারণে কেজিপ্রতি দাম কমেছে ২-৩ টাকা পর্যন্ত। বর্তমান স্বর্ণা ও চায়না ইরি খ্যাত মোটা চাল ৩৮-৪৮, সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬০-৬৮ এবং মাঝারিমানের পাইজাম ও লতা ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে ডিম ৩৪-৩৬ এবং পেঁয়াজ ৩৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া শাক-সবজির দাম আর বাড়েনি। তবে প্রতিহালী লেবু ৩০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় জাতের মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দু’একটি মাছের দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে, বাজারে মেডিক্যাল পণ্যসামগ্রী আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মতো পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু ফার্মেসিগুলো কারাসাজি করে এসব পণ্যের দাম বেশি রাখছে। মজুদ করে এসব পণ্যের দাম বেশি রাখছে ফার্মেসিগুলো। ফার্মেসিতে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×