ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়

এক হাজার ভূমিহীন পরিবারের ঘর নির্মাণ শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২২, ২৯ মার্চ ২০২০

এক হাজার ভূমিহীন পরিবারের ঘর নির্মাণ শুরু হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ মুজিববর্ষ কেন্দ্র করে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে (ক্লাইমেট ভিক্টিমস রিহ্যাবিলিটেশন-সিভিআরপি) এক হাজার ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের জমিসহ ঘর নির্মাণ শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয় এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের জন্য বিভিন্ন জেলায় খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। কয়েকটি জেলায় খাস জমি পাওয়াও গেছে। বাকি জেলাগুলো সুবিধা মতো খাস জমি খোঁজার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হযেছে। এই নির্দেশ পালনে গড়িমসি করলে ওই সব ডিসিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, খাস জমিতে আমরা ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেব। এটা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মুজিববর্ষে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। এ বছর এক হাজার পরিবারকে আমরা গৃহ দেয়ার কাজ শুরু করেছি। চলতি বছরের মধ্যেই গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রতিটি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে গৃহ দেয়ার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কোন মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের ওপর ভূমি মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের (ক্লাইমেট ভিক্টিমস রিহ্যাবিলিটেশন) প্রকল্প ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে ২৫৪টি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। আর এই গ্রামগুলোই ১০ হাজার ৭০৩ ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার ২৫৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। চলতি বছরে আরও এক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করার কাজ চলছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি গুচ্ছগ্রামে প্রতিটি পরিবারের জন্য ৪ থেকে ৮ শতাংশ খাস জমি কবুলিয়াত সম্পাদন, ৩০০ বর্গফুটের দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর দেয়া, একটি করে নলকূপ স্থাপন, মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ, পুনর্বাসিত পরিবারসমূহের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ, বিধবাদের ক্ষেত্রে নারীর নামে কবুলিয়ত সম্পাদন এবং আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিটি পরিবারকে ১৫ হাজার করে টাকা দেয়া হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। গরিবের একটাই স্বপ্ন একটি ঘর। গৃহহীনের কাছে এটিই যেন আকাশের চাঁদ। সারাদেশে এই গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লাখ। পর্যায়ক্রমে সব পরিবারকে গৃহ দেয়া হবে। সরকার গৃহহীনকে ঘর দিতে বদ্ধপরিকর। গরিবের ওপর বিত্তশালীদের লোলুপ দৃষ্টি, মহাজনীয় শোষণ, নদীভাঙ্গা, বঞ্চনা-বৈষ্যমের কারণে দিন দিন গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রকল্প জোরদার করা হলে শতভাগ গৃহহীনের পুনর্বাসন সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব জেলার গৃহহীন মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গৃহহীনদের গৃহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস জনকণ্ঠকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের জন্য আশ্রয় ও গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প রয়েছে। ওই প্রকল্পেও একজন পিডি রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়েও একজন পিডির মাধ্যমে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে খাস জমি খুঁজে বের করে দখলমুক্ত করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা খাস জমির সঠিক তথ্য দিতে গড়িমসি করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায় (সিভিআরপি) প্রকল্পের অধীনে গৃহ দেয়া হচ্ছে গৃহহীন পরিবারকে। এর আগে আদর্শ গ্রাম প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হয়েছে গৃহহীনদের। বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। বর্তমানে ৫৭ জেলার ২শ’ উপজেলায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলা ও উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মে মাসে আশ্রয়ণ, গুচ্ছগ্রাম, একটি বাড়ি একটি খামার, গৃহায়ন তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের অধীনে পঞ্চাশ হাজার গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ পঞ্চাশ হাজার পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। চলতি বছরের মধ্যে গৃহহীনদের গৃহ দেয়ার কাজ দ্রুত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ রয়েছে। উল্লেখ্য, গৃহহীনদের ঘর তৈরির জন্য যাবতীয় খরচ বহন করছে সরকার। গুচ্ছগ্রাম পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিআরডিবির মাধ্যমে ক্ষুুদ্রঋণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ৩৪০টি মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দশ হাজার পরিবারকে আর্থ-সামাজিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দশ হাজার নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
×