ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নায়িকার নামে নাম, অথচ ঋতুপর্ণা হলেন ফুটবলার!

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৮ মার্চ ২০২০

নায়িকার নামে নাম, অথচ ঋতুপর্ণা হলেন ফুটবলার!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জেঠিমা নিলোবানু চাকমা বাংলা সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করতেন। ভারতের কোলকাতার নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তার অন্ধভক্ত তিনি। ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর যখন তার ভাইয়ের একটি ফুটফুটে মেয়ে হলো, তিনি তখন মায়াকাড়া চেহারার ওই শিশুকন্যার নাম রাখলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। জেঠিমার হয়তো সুপ্ত বাসনা ছিল-একদিন তার ভাতিজি নামকরা নায়িকা হবে। সময়ের পরিক্রমায় ঋতুপর্ণা নামকরা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নায়িকা নয়, ফুটবলার! লেফট ব্যাক এবং লেফট উইঙ্গার দুই পজিশনেই চমৎকার খেলতে পারেন সুদর্শনা ঋতু। ২০১২ সালের ঘটনা। পড়েন তৃতীয় শ্রেণিতে। বয়স মাত্র ৯। ওই বয়সেই মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে ফেললেন বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল। সেবার তার স্কুল রানার্সআপ হয়েছিল। এর পরের দু’বছরও খেলেন। ২০১৩ আসরে তার স্কুল হয়েছিল তৃতীয়। ভাল খেলার সুবাদে ২০১৭ সালে জাতীয় অনুর্ধ-১৫ দলে ডাক পান। এরপর অ-১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ দলেও খেলেছেন। সিনিয়র বা জাতীয় দলেও খেলার সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকটি ম্যাচে। মহিলা ফুটবল লিগে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে সর্বশেষ খেলছেন। জাতীয় দলে ১৫ নম্বর জার্সি পড়ে খেলেন ঋতু। মজার ব্যাপার- নাসরিনেও একই নম্বরের জার্সি পেয়েছেন তিনি! আট বছর আগে যখন খেলা শুরু করেন, তখন ঋতুর এলাকার লোকজন তার ফুটবল খেলা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতো। এদিকে অভাব-অনটনের সংসার। তবে কৃষক বাবা বরজ বাঁশি চাকমা মেয়েকে সমর্থন-উৎসাহ দিতেন। মেয়েকে ধার করে খেলতে যাবার যাতায়াত ভাড়া এনে দিতেন অনেক কষ্টে। বাবার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে একদিন জাতীয় দলে খেলবে। ঠিকই খেলেছে তার মেয়ে। কিন্তু সেটা তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০১৫ সালে মারা যান তিনি। এই আক্ষেপে এখনও পুড়ছেন ঋতু! গৃহিণী মা বোজপুতি চাকমার ৪ মেয়ে, ১ ছেলের মধ্যে ঋতু চতুর্থ। তার প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, থিয়াগো সিলভা, সাবিনা খাতুন ও মনিকা চাকমা ও মারিয়া মান্দা। লক্ষ্য- জাতীয় দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা। ফুটবল খেলতে দারুণ ভাল লাগে ঋতুর। কিন্তু এখন তিনি ভাল নেই। কারণ করোনা ভাইরাস! এজন্য লিগ বন্ধ। ক্লাব কর্তৃপক্ষও তাই ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঋতুকে চলে আসতে হয়েছে নিজ জেলা রাঙামাটির ঘাগড়ার মঘাছড়িতে নিজেদের বাড়িতে। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, ‘গত ১৯ মার্চ বাড়িতে এসেছি। ক্লাব বলেছে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে আমাদের খবর দিলেই ঢাকা যেতে হবে।’ বিকেএসপিতে থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ও বাঁ পায়ের ফুটবলশৈলীতে সবাইকে মুগ্ধ করা ঋতু করোনা নিয়ে বলেন, ‘আমাদের গ্রামে প্রথমে না হলেও এখন করোনা নিয়ে সবাই খুব আতঙ্কিত ও সতর্ক। সবকিছু প্রায় বন্ধ। লোক চলাচল নেই বললেই চলে। দুজন পাশাপাশি রাস্তায় হাঁটে না।’ নিজে কতটা সচেতন? ‘শুরতে তেমন পাত্তা দিইনি। পরে ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে সতর্ক হয়ে যাই। বার বার হাত ধুচ্ছি সাবান দিয়ে। দরকার না থাকলে বাইরে যাই না। গেলেও মুখোশ পড়ি। আশেপাশের সবাইও তাই করছে। এখনও পরিচিতজনরা এই রোগে কেউই আক্রান্ত হননি।’ করোনা থেকে বাঁচতে ভারতে অনেকেই সমানে গোমূত্র পান এবং বাংলাদেশে থানকুনি পাতা খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঋতুর মন্তব্য, ‘আমি পাতা খাইনি। কারণ ওসবে বিশ্বাস করি না। যারা ওসব পান করে ও পাতা খায়, ওটা তাদের ব্যাপার। তবে গোমূত্র পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ পাহাড়ীকন্যা ঋতুর মতে, সব ধরনের বিধিনিষেধ মেনে চললে ও সতর্ক থাকলেই সবাই করোনামুক্ত থাকতে পারবে।’ ঋতু আরও যোগ করেন, ‘প্রবাস ফেরত অনেক বাংলাদেশীদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় আজ দেশে করোনা বিস্তার ঘটেছে। তারা সীমা লংঘন করেছেন। তাদের কাজকর্ম অনুুচিত, অসমর্থনযোগ ও নিন্দনীয়।’ লিগ চলাকালে প্রথম দু’-একটি ম্যাচ খেলেননি ঋতু। কারণ পরীক্ষা। ফিটনেসে ঘাটতি নিয়েই খেলতে হয়। এখন লিগ বন্ধ। আবারও খেলার বাইরে। অনুশীলন হচ্ছে না। যখন লিগ শুরু হবে, তখন ফিটনেস তো আরও নিচুতে থাকবে। ‘এটা শুধু আমার না, তখন সবারই সমস্যা হবে। দেখা যাক, কি হয়।’ ঋতুর জবাব।
×