ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে ঘরে-বাইরে

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ২৯ মার্চ ২০২০

করোনাকালে ঘরে-বাইরে

সমগ্র পৃথিবীতেই আজ ক্রান্তিকাল। একটি ভাইরাস রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। মানছে না কোন নিয়ম। মানবদেহই তার আরাধ্য। আক্রান্ত দেশগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও যেন মনে হচ্ছে আরও কিছু প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ থেকে দশ দিনের জন্য দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কেননা ঘরের বাইরে গেলে এই রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তাই ছিল না কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজন। মানুষ ঘরে বসেই স্মরণ করেছে একাত্তরের বীরদের আত্মত্যাগের কথা। নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরও কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সতর্ক ও সচেতন হতে হবে- এই বার্তা যেন সবার সামনে চলে এসেছে। এ মুহূর্তে গণমাধ্যমের দায়িত্ব বিরাট। একইসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও করণীয় রয়েছে। মানুষ ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু ঘরের বাইরেও যেতে হচ্ছে অনেককে জরুরী প্রয়োজনে। সর্বক্ষণিকভাবে ঘরে থাকার জন্য মানুষের ওপর বন্দিত্বের অনুভূতিসহ নানা মনস্তাত্ত্বিক চাপ আসাটা স্বাভাবিক। এ সময়ে তার করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। একইসঙ্গে একান্ত জরুরী প্রয়োজনে পরিবারের কাউকে না কাউকে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে। ঘরের বাইরে বেরুনো ওই ব্যক্তিই যখন আবার ঘরে ফিরে আসছেন, তখন তার নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট করণীয় রয়েছে। এসব তথ্য ও বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছানোর জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকাই প্রধান। তবে স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিরও দায়িত্ব রয়েছে। তিনি কি সর্বক্ষণিকভাবে ঘরেই অবস্থান করবেন? -এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অনলাইনে বার্তা প্রেরণের সুবিধা এনে দিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। তাই শুধু কম্পিউটার নয়, একইসঙ্গে টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও বার্তা দেয়া যায়। টেলিফোনেও তথ্যসহায়তা দেয়া সম্ভব। এসব বিষয়ে মানুষের ভোটে নির্বাচিত মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ভূমিকা গ্রহণের বিরাট সুযোগ রয়েছে। এমনকি জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের বিশেষ বিশেষ অংশ বার বার প্রচার করা যেতে পারে। নির্দেশনা মানলেই রক্ষা পাব। কিছু কথা বার বার বলা চাই। কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। সেজন্য সবকিছুর আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জরুরী। কুঅভ্যাস ত্যাগ করা চাই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমে। সংবাদপত্রের প্রথম ও শেষ পাতায় এ সংক্রান্ত তথ্য ও সংবাদ নিয়মিতভাবে ছাপা হচ্ছে। এখন প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীও জেনে গেছে যে, দুই হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। আর ছোঁয়াছুয়ি বাঁচিয়ে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন, নির্দেশনা মানলেই দেশ রক্ষা পাবে। ঘনবসতির এই দেশে করোনাভাইরাস নামের ছোঁয়াচে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। এখন আমরা প্রত্যেকে যদি নির্দেশনা মেনে চলি এবং অন্যকে বিপদগ্রস্ত না করে তুলি তাহলে ওই প্রাণঘাতী ভাইরাস কী করে পাত্তা পাবে! কিন্তু বাঙালীর সমস্যাই হচ্ছে যেখানে সেখানে কফ থুতু ফেলা। মানুষের মুখের ওপরে হাঁচি-কাশি দেয়া। বদভ্যাসগুলো পাল্টে ফেললে আমরা যেমন আরেকটু সভ্য হবো, তেমনি অন্যকেও বিপদে ফেলব না।
×