ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে সাধারণ ছুটি মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২৮ মার্চ ২০২০

 চট্টগ্রামে সাধারণ  ছুটি মানছে না  অনেক প্রতিষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে দেশব্যাপী ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু বন্ধ হয়নি উৎপাদনকারী বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো। চালু রয়েছে পোশাক শিল্প প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানও। বিজিএমইএয়ের পক্ষ থেকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণাকে অবজ্ঞা করে কারখানা খোলা রাখার পাশাপাশি আবার বন্ধ করার অনুমতি চাওয়ার মতো নাটকও করা হচ্ছে। এদিকে, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো জীবিকার টানে রাস্তায় নামলেও তাদের তাৎক্ষণিক সাজা দিতে প্রস্তুত পুলিশের একশ্রেণীর সদস্য। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে জনসাধারণকে রাস্তায় নামার কোন নিষেধাজ্ঞা না দিলেও অতি উৎসাহী পুলিশ ফেসবুকে ছবি তুলে ভাইরাল করার মতো অপকর্মে ব্যস্ত রয়েছে। রিক্সা থেকে নামিয়ে যাত্রী এবং রিক্সাচালককে কান ধরে ওঠবস করার মতো উদাহরণও সৃষ্টি করে তা ফেসবুকে ভাইরাল করছে অসাধু পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, মানুষ কি না খেয়ে মরবে গৃহের কোণে, নাকি বাজারে যাবে ক্ষুধা নিবারণে রান্নার সামগ্রী যোগাড় করতে। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, সিমেন্ট ও রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বন্ধ হয়নি। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে অলিগলির ছোট সড়কগুলো দিয়েও চলা শুরু করেছে কেএসআরএম ও কনফিডেন্স সিমেন্টের ক্লিংকারবাহী গাড়ি। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ধরনের প্রত্যক্ষ চলাচল দেখা গেছে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে কুমিরা ও সীতাকু-ে থাকা বিভিন্ন বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের কারখানায় যাতায়াত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারের এ নির্দেশনা মানতে পারছে না। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ছোট সড়ক দিয়েই চালাতে হচ্ছে ভারি এসব যানবাহন। এ সব প্রতিষ্ঠানের কাছে চাকরিজীবীদের মূল্যায়ন নেই এমন মন্তব্যও করেছেন চালকরা। পেশার টানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, পোশাক শিল্প শ্রমিকরা গভীর রাতেই যেতে হচ্ছে কারখানায়। গাড়ি মিস করলেই হেঁটে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে যেতে হচ্ছে শ্রমিকদের। তবুও বন্ধ দিচ্ছে না পোশাক শিল্প কারখানা। সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও কারখানা মালিকরা মানতে নারাজ। কিছু কিছু মালিক একাধিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অজুহাতে একটি প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বন্ধের চেষ্টায় পিপিই তথা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস তৈরি করছে। সরকারের দৃষ্টি কাড়তে এ ধরনের উদ্যোগ নিলেও মূলত পেছনে রয়েছে পোশাক তৈরির রমরমা উদ্যোগ। উৎপাদন বন্ধ রাখতে নারাজ এ ধরনের শিল্পপতিরা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের। উৎপাদনকারী এসব প্রতিষ্ঠান মালিকরা কারখানায় শ্রমিক প্রবেশদ্বারে ব্যানার ফেস্টুন টাঙিয়ে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছে এমনকি সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়াসহ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করছে। কিন্তু পরিধেয় হাইজানিক মাস্কের পরিবর্তে এসব মাস্ক তৈরি করা হয়েছে গার্মেন্টসের ঝুট বা উচ্ছ্বিষ্ট কাপড়ের টুকরো থেকে। অপরদিকে, অতি উৎসাহী পুলিশ নিজেদের প্রচারের উদ্দেশ্যে রিক্সা ও মোটরসাইকেল থেকে যাত্রীদের নামিয়ে মাস্ক পরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ রাস্তায় নেমে আসা দিনমজুর ও চালক শ্রেণীর লোকদের কেন কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে। বিভিন্ন বাজারের মোড়েও পুলিশ অহেতুক সাধারণ ক্রেতাদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুয়েকটি স্থানেই নয়, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানাধীন ভেলুয়ারদীঘি মোড়ে পুলিশের একটি টিম বাজারে যাওয়ার সময় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কারণ জানতে চেয়ে বিব্রত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় না করতে বলা হলেও সাধারণ জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করছে পুলিশ।
×