ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘এখনই আমাদের সচেতন হওয়ার সময়’

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৮ মার্চ ২০২০

 ‘এখনই আমাদের সচেতন হওয়ার সময়’

রুমেল খান ॥ ‘আপনারা সাংবাদিকরা সবসময়ই পত্রিকায় আমার নামের বানান ভুল লেখেন কেন? লেখা উচিত সোনাম, কিন্তু লেখেন সোনম! কেন বলুন তো?’ জাতীয় টেবিল টেনিস (টিটি) তারকা সোনাম সুলতানা সোমা ফোন করতেই তার কিন্নরী কণ্ঠে বেজে উঠলো এমন অভিমানের সুর। শুনে বিস্মিত হতেই হলো। কেননা টিটি ফেডারেশনই তো বছরের পর বছর ধরে সাংবাদিকদের প্রেস রিলিজে ‘সোনম’ নাম দিয়ে পাঠিয়ে আসছে। বিষয়টা সোমাকে জানাতে এবার তার অবাক হওয়ার পালা। হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘উফ, ফেডারেশনের কথা আর বলবেন না!’ বাংলাদেশের জনজীবন বেশ কদিন ধরেই বিপর্যস্ত। সব সেক্টরের মতো স্পোর্টস সেক্টরও বন্ধ হয়ে গেছে। খেলোয়াড়রা যে যার বাসায়-বাড়িতে অবস্থান করছেন এক শঙ্কা নিয়ে। সেই শঙ্কার নাম করোনাভাইরাস। এর রাহুগ্রাসে পুরো বিশ^ই আক্রান্ত। বাংলাদেশে মরণঘাতী এই রোগটি এখনও সেভাবে না ছড়ালেও যতটুকু ছড়িয়েছে, তাতেই সবার মনে তীব্র ভয়ের বীজ ঢুকে গেছে। ১৯৮৭ সালের ১১ ডিসেম্বর এই ধরণীতে আসা সোনামও এর ব্যতিক্রম নন। তবে নিজের জন্য নয়, তিনি বেশি ভীত-উদ্বিগ্ন তার দুই ছেলে আবু সুফিয়ান ইভান (বয়স ১৪) এবং আল হায়েজ ইফাজের (৫) জন্য। বয়স কম বলে তারা দুজনেই বেশ চঞ্চল, ঘরে থাকতে চায় না, এটা-ওটা ধরে, ফলে হাত নোংরা হয়ে যাচ্ছে। এজন্য একটু পর পরই তাদের হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হচ্ছে সোনামকে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আর বলবেন না, বাচ্চাদের সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ওদের জন্যই জরুরী কাজ থাকলেও বাইরে যাচ্ছি না। ঘরেই একপ্রকার বন্দী হয়ে আছি!’ খেলাধুলা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি সোনাম বিপিএড কোর্স করছেন উত্তরা বিশ^বিদ্যালয় থেকে। খেলাধুলা নেই। বসে থাকায় ফিটনেসে নিশ্চয়ই ঘাটতি পড়ে যাচ্ছে? সোনামের ভাষ্য, ‘টানা দুই সপ্তাহ ধরে অনুশীলন করছি না। না, এজন্য করোনা দায়ী নয়। আসলে যে গ্যারেজ আমি অনুশীলন করি একটি মেশিনের মাধ্যমে, সেই মেশিনটি ময়লা হয়ে গেছে। আমার স্বামী (জাতীয় টিটি কোচ মোহাম্মদ আলী) মেশিনটি পরিষ্কার করলে এবং গ্যারেজের অন্যান্য কিছু জিনিসপত্র সরালেই আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আবার অনুশীলন শুরু করতে পারব।’ বাংলাদেশ আনসারের খেলোয়াড় সোনাম আরও যোগ করলেন, ‘এর আগে অবশ্য গ্রীন রোডের গীন পয়েন্ট টিটি একাডেমিতে গিয়ে আমার চাচাতো ভাই অন্তু হোসেন জয়ের (জাতীয় টিটি সিনিয়র বিভাগে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ১৬ তে আছেন) সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতাম।’ আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমস এবং তার পরেই প্রিমিয়ার টিটি লীগে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোনাম। কিন্তু করোনা এসে বাগড়া বাধালো সব! জাতীয় টিটি কতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জানতে চাইলে মনে হলো একটু বিপদেই পড়ে গেলেন সোনাম, ‘মনে নেই। তবে ২০০৩ সাল থেকে অংশ নেয়ার পর ২০১৭, ১৮ ও ১৯ সাল বাদে (শেষের বছর আসর অনুষ্ঠিত হয়নি) মনে হয় প্রতিবারই শিরোপার স্বাদ পেয়েছি। এক কাজ করতে হবে। শোকেসে পুরস্কারগুলো রাখা আছে। সেগুলো বের করে গুনে আপনাকে শীঘ্র্রই জানাব।’ প্রবাস ফেরত বাংলাদেশীরাই যে করোনা বিস্তারের জন্য দায়ী, এতে কোন সন্দেহ নেই সোনামের। তারা কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি মানছেন না। এটাকে ‘দুঃখজনক’ বলেন তিনি। সরকারের ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছুটি ঘোষণার আগেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। তাহলে এতগুলো লোক গাদাগাদি করে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারত না। তাদের এই কান্ড এখন সবাইকে করোনায় আক্রান্তের চরম ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। বাঙালী এখন সচেতন না হলে আর কবে হবে। আল্লাহ্ই জানেন শেষ পর্যন্ত কি হয়!’ সোনাম আরও যোগ করেন, ‘তারপরও আমি আশাবাদী। কারণ পুলিশ ও সেনাবাহিনী খুব ভাল কাজ করছে। তবে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।’ করোনা থেকে বাঁচতে ভারতে গোমূত্র পান এবং বাংলাদেশে থানকুনি পাতা খাওয়া নিয়ে সোনমের ভাষ্য, ‘এগুলো একেবারেই হাস্যকর। এর চেয়ে বরং কালোজিরা ও মধু খাওয়া অনেক ভাল। আমাদের নবীজী এগুলো খেতেন।’
×