ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাবুলে হামলার তদন্ত করবে আফগান সরকার

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২৮ মার্চ ২০২০

কাবুলে হামলার তদন্ত করবে আফগান সরকার

আফগান রাজধানী কাবুলে হত্যাকান্ডের দুদিন পরও কার্তি পারওয়ান গুরুদুয়ারা হলগুলো শিখদের কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। কেউ কেঁদেছেন উচ্চৈঃস্বরে। অনেকে ছিলেন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায়। কাবুলে ক্ষুদ্র আফগান শিখ ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য অবশিষ্ট মাত্র তিনটি ধর্মীয় স্থানের মধ্যে কার্তি পারওয়ান একটি। -খবর আলজাজিরা অনলাইনের। হত্যাযজ্ঞের পর কান্নার শব্দ ও বিলাপ কার্তি পারওয়ান এলাকার রাস্তাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ এলাকায় একসময় প্রচুর সংখ্যক আফগান শিখের বাস ছিল। তারা তখন আফগান সংঘাতপূর্ব সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাস করেছে সম্প্রীতির সঙ্গে। শিখ সম্প্রদায় কেবল সংঘাত দুর্দশাতেই ভুগছে না, ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণু সমাজের শিকারও। রাজধানীতে শিখ ধর্মীয় কমপ্লেক্সে বুধবার বন্দুকধারী হামলাকারীরা আফগান সৈন্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে ২৫ জন নিহত হয়েছে। কাবুলে শোর বাজারে চার শ’ বছরের পুরনো গুরুদুয়ারায় সাম্প্রতিক হামলায় এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। রাজ সুতাকা (২৫) বলে এক আফগান শিখ আলজাজিরাকে বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর। পুরো সম্প্রদায় শোকাহত ও ক্রন্দন করছে। রাজ সুতাকা কাবুলে একটি ওষুধের দোকান চালান। আফগান শিখ ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৯৭০ দশকে ছিল প্রায় ৭ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে কয়েক শ’য়ে। সুতাকা বলেন, আমরা এখন প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার রয়েছি সমগ্র আফগানিস্তানে এবং আমাদের সংখ্যা হতে পারে ৪শ’ থেকে ৪শ’ ৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রায় ১শ’ থেকে ২শ’ শিশু। তাই আমাদের মোট জনসংখ্যা ৭শ’র বেশি হবে না। তারপরও, আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক কয়েক দশকের যুদ্ধে এ সম্প্রদায়ের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। কেবল সংঘাতের কারণেই এ দুর্বিষহ জীবন তাদের ভোগ করতে হয়নি, ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণু সমাজের নির্যাতনের সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাদের। ছ’ ঘণ্টার হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে সুতাকা বলেন, আমরা ভোর প্রায় সাড়ে ৭টায় শোর বাজারে হামলার বিষয়টি শুনতে পাই। তখন প্রভাতি প্রার্থনা মাত্র শেষ হয়েছে, প্রসাদ বিতরণ চলছে। প্রার্থনা সমাবেশে আগতদের জন্য জলখাবারের ব্যবস্থাও ছিল, অনেকেই সে জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং তখন দুই বন্দুকধারী ঝড়ো বেগে গুরুদুয়ারায় প্রবেশ করে। তারা প্রথম বোমা ছোঁড়ে এবং এরপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। সশস্ত্র গ্রুপ ইসলামী স্টেটস (আইএস) এ হামলার দায়িত্ব দাবি করলেও সরকারী সূত্রগুলো বলেছে, হাক্কানি নেটওয়ার্ক এ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রতিশোধ হতে পারে। আফগান জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র জাভেদ ফয়সল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অঞ্চলে সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় তালেবান ও অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অতীতেও আমাদের সমাজের ওপর হামলা চালিয়েছে। এবং জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, এ ধরনের অতীত ঘটনা ভীতির সঞ্চার করে, সম্প্রদায়ে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি এবং জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতাকা বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুল্লাহ মোহিব বুধবার বিকেলে বেঁচে থাকা লোকদের ও তাদের পরিবারগুলোকে দেখতে যান। তিনি তাদের জন্য শোক প্রকাশ করেন এবং হামলার ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। খোস্ট প্রদেশের আইন পরিষদের সদস্য সাহিরা শরিফ বলেন, আফগান শিখরা অন্যান্য আফগানের চেয়ে বেশি আফগান যাদের শতশত পরিবারের দেশ ছিল আফগানিস্তান।
×