ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্ক এখন ভুতুড়ে নগরী

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২৮ মার্চ ২০২০

নিউইয়র্ক এখন ভুতুড়ে নগরী

করোনাভাইরাসে কাহিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে লাফিয়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তবে দেশটির অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকে এ ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে নিউইয়র্ক। করোনার প্রকোপে আলো ঝলমলে নিউইয়র্ক এখন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরটিতে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মারণ করোনায় আক্রান্ত ৮৫ হাজার ৬শ’ ৫৩ জন। মারা গেছে কমপক্ষে ১,১৭৮ জন। জন হপকিন্স আরও জানায়, প্রচন্ড গতিতে মার্কিন মুলুকে এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। খবর বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। নিউইয়র্কের গবর্নর এ্যান্ডু কুমো বৃহস্পতিবার নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা দয়া করে ঘরের বাইরে আসবেন না। ঘরে থাকুন। নিরাপদ থাকুন। সবাইকে নিরাপদ রাখুন। বৃহস্পতিবার শহরটির শতাধিক মানুষ এ ভাইরাসে মারা যায়। এ সংখ্যাসহ গত কয়েকদিনে নিউইয়র্কে প্রায় চারশত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মাত্র এতদিনের ব্যবধানে শহরটির প্রায় সাত হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ সংখ্যাসহ নিউইয়র্কের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ্যান্ডু কুমো বলেছেন, করোনা রোগী সামাল দিতে এক লাখ ৪০ হাজার অতিরিক্ত হাসপাতাল বেড দরকার। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় আরও ভেন্টিলেটর ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রয়োজন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ঠেকাতে আরও ডাক্তার ও নার্স দরকার। করোনায় মৃত রোগীদের রাখার জন্য নিউইয়র্কের প্রখ্যাত বেলভিও হাসপাতালের বাইরে একটি অস্থায়ী মর্গ তৈরি করা হয়েছে। এ মর্গ থেকে বিশেষ কায়দায় মৃহদেহগুলো সৎকার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে হোয়াাইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক হারে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, দেশটির ৫০টি রাজ্যেই এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এবং সারাদেশে ৫ লাখ ৫২ হাজারের বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বেজিংয়ের প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে সন্দেহও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আপনি সঠিকভাবে জানেন না চীনে আসল সংখ্যাটা কত। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান তিনি এ বিষয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস মহামারী আরও খারাপ রূপ নেবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। শহরের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এর মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমরা যদি আরও ভেন্টিলেটর না পাই, লোকজন মরতে শুরু করবে। এর আগে এন্ড্রু কুমো জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং আসল কথা হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন যার ফলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি ডলারের সহায়তা পাবে। তারপরেও শহরটির মেয়র ব্ল্যাসিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাসটি মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ‘আমাকে বলতেই হবে : প্রেসিডেন্ট যদি ব্যবস্থা না নেন, লোকজনকে মরতে হবে, তারা হয়ত বেঁচে থাকত।’ ঊনিশশো তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বড় এক সঙ্কট তৈরি হতে যাচ্ছে।’ এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের জন্যও তিনি একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার জন্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ‘আমেরিকানদের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সবাই এক কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে আছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। এসব সামগ্রী দ্রুত কমে আসার কথা জানিয়েছেন নিউইয়র্কের চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, হাসপাতালে যেসব ডাক্তার ও নার্স এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্যও সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের গবর্নররাও একই ধরনের ঘাটতির কথা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তারা জরুরী ভিত্তিতে সাহায্যের জন্যও আবেদন করেছেন। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যকেই লকডাউন করা হয়েছে এবং বেশকিছু রাজ্যের বাসিন্দাদের ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইস্টার সানডে’র দিন, ১২ই এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। শুরুতে সমালোচিত হলেও এখন ওই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হোক, তাই চাইছেন অনেকে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ৩৩ লাখ আমেরিকান চাকরি হারিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, আমেরিকানদের কাজে ফিরে যেতে হবে, আমাদের দেশকে কাজে ফিরতে হবে। ফিরে যেতে হবে বললে অনেকেই এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। কাজে ফিরলেও তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলবেন। তিনি জানান আগামী সপ্তাহে এই পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।
×