ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

রনজু চৌধুরীর দুটি বই

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৭ মার্চ ২০২০

রনজু চৌধুরীর দুটি বই

মা ও একটি যুদ্ধ কাহিনী মাকে নিয়ে আবেগ থাকবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এ কারণেই হয়তো মা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। কবি রনজু চৌধুরী তার কবিতার বইয়ে মা’কে নিয়ে যে কবিতা লিখেছেন তার প্রতি এই বইয়ের সবচেয়ে দীর্ঘ কবিতা। এবং কবিতাটির প্রতিটি পরতে পরতে জুড়ে আছে মায়ের প্রতি আবেগ ও ভালবাসা। সুনিপুণভাবে যোগ করেছেন দীর্ঘ বেদনাটুকু। এক সপ্তাহ আগে যে মা’কে দেখে এসেছিলেন ঠিক এক সপ্তাহ পরে গিয়েই দেখতে পান সেই মা সটান হয়ে শুয়ে আছে নিথর দেহ নিয়ে। যা কবি মনকে আপ্লুত করে সবসময়। কবিতায় তিনি স্মৃতি চারণ করেছেন ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার পেছনে মায়ের অবদানটুকু। এছাড়া দেশমাতৃকার কথাও লিখতে ভুলে যাননি বইটিতে। কারণ কবি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখসমরে যা যা ঘটেছে তার সব বর্ণনা তুলে ধরেছেন একটি যুদ্ধ কাহিনী কবিতার মাধ্যমে। টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করায় যুদ্ধের সময়টিও কেটেছে টাঙ্গাইলে, বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ করে। মোট ২২ টি কবিতা সম্বলিত এই বইতে পাঠক বিভিন্ন ধরনের কবিতার রস আস্বাদন করতে পারবে। এর মধ্যে অজানা গন্তব্য, ফিরবোনা কোনদিন, ঝরাপাতা, ধানফুল, অলংঘিত আহ্বান ও জীবন অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশ কবিতায় কবি বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে খোলা চিঠি লিখেছেন। যেখানে কবি বোঝাতে চেয়েছেন একজন বঙ্গবন্ধুই যেন একটি বাংলাদেশের চিত্র। এই মহানায়কের আগমন না ঘটলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। এছাড়া বইটিতে কবিগুরু, প-িত স্যার, জননী জন্মভূমি কবিতাগুলো ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করেছে। বইটির প্রকাশক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউল হামিদ, প্রচ্ছদ করেছেন দিদার হোসেন রোমান এবং বইটির মূল্য ধরা হয়েছে দুইশত টাকা মাত্র। বইটি কবি তার মা হাসনা বানু চৌধুরী এবং বাবা আব্দুল বারী চৌধুরীকে উৎসর্গ করেছেন। সবুজ জমিনে লাল অশ্রুফোঁটা কবি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তার কবিতার বইয়ে দেশমাতৃকার কথা এবং স্বাধীনতার কথা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই কবিতার বইটিও তাই ব্যতিক্রম নয়। বইটির শুরুতেই স্বাধীনতা কবিতার মাধ্যমে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা এবং সত্যিকারের স্বাধীনতা কাকে বলে সেটাও বোঝাতে চেয়েছেন। বার বার বুঝিয়েছেন স্বাধীনতা কেউ কাউকে এমনি দেয় না, সেটা ছিনিয়ে আনতে হয়। আমরাও আমাদের স্বাধীনতা জয় করে এনেছি। এই কবিতার বইটি মূলত বিভিন্ন ঢঙের কবিতা দিয়ে সাজানো। স্বাধিকারের কথা যেমন উঠে এসেছে তেমনি প্রেম-বিরহও স্থান পেয়েছে বইটিতে। যার ফলে পাঠক বইটি পড়ে বেশ পুলকিত হবে। যেমন অনামিকা কবিতাটি সম্পূর্ণ প্রেমের কবিতা, আবার পিতা কবিতায় উঠে এসেছে সেই মহানায়কের কথা যার ডাকে স্বৈরাচারের ভিত কেঁপে উঠেছিল। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। উঠে এসেছে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা। অন্যদিকে দুখু মিয়া কবিতা দিয়ে জাতীয় কবির জাগরণের কথা তুলে এনেছেন। যিনি কিনা শুধু লেখনি দিয়ে আন্দোলিত করতেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। কবিতার শেষে কবি, দুখু মিয়ার মতো কবি যেন বার বার ফিরে আসে সে প্রয়াস দেখিয়েছেন। বইটিতে নজর কাড়বে কিছু ব্যক্তিবিশেষকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো। যেমন হুমায়ুন আজাদ, শামসুর রাহমান, মামুনুর রশীদের মতো ব্যক্তিদের স্তুতি গেয়েছেন। যারা কিনা তাদের শিল্পচর্চার মাধ্যমে আমাদের মনকে জাগিয়ে তুলেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন এদেশের কৃষ্টিকালচার। কপাল কুন্ডলা বিষয়ক জটিলতা কবিতায় গেয়েছেন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখনীর গুণগান। আবার অন্যদিকে সমসাময়িক বিষয়গুলোও বাদ যায়নি : উত্তাল শাহবাগ, বর্ষবরণ, রমনা, ভালবাসা, জীবন সঙ্গীত কবিতাগুলো তারই প্রতিফলন। মোট ৬৩ টি কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। বইটি প্রকাশ করেছে জয়তী প্রকাশনী, প্রচ্ছদ করেছে, নিয়াজ চৌধুরী তুলি, মূল্য মাত্র ২০০ টাকা। বইটি কবি তার সহধর্মিণী তানজিন জাহান, পুত্র তাহসিন আহমেদ চৌধুরী রাফি এবং কন্যা মাশিয়াত চৌধুরী আদিবাকে উৎসর্গ করেছেন।
×