ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিদিনই নতুন নতুন লোক হোম কোয়ারেন্টাইনে

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৭ মার্চ ২০২০

প্রতিদিনই নতুন নতুন লোক হোম কোয়ারেন্টাইনে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশে প্রতিদিনই নতুন নতুন লোককে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা। কোয়ারেন্টাইন থাকা ব্যক্তির মধ্যে গোপালগঞ্জে ৫৩৯, নীলফামারীতে নতুন ১৫ জনসহ ২১৯, সিরাজগঞ্জে নতুন ৩৯ জনসহ ৫২৬, কুড়িগ্রামে নতুন ২০ জনসহ ৩১০, হবিগঞ্জে ৭৫৫, ভোলায় নতুন ১৭ জনসহ ৩৭৫, টাঙ্গাইলে আরও ১৬১ জনসহ ৮৩১, বরিশালে নতুন ৪৯ জনসহ ৫০১, নারায়ণগঞ্জে ২৩৬, গাইবান্ধায় ২৩১ ও মাগুরায় ২৭৯ জন রয়েছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কিছু লোককে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার আট, নারায়ণগঞ্জের ১৪, বরিশালের ২২, টাঙ্গাইলের ৪৬৩, ভোলার ১২০, হবিগঞ্জের ৩০০, কুড়িগ্রামের ১৪৩, নীলফামারীর ৭৫ ও গোপালগঞ্জের ৬৮ জন রয়েছেন। গাইবান্ধা ॥ করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে বিদেশ ফেরতদের ওপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিদেশফেরত ২৩১ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জে ৪২, গোবিন্দগঞ্জে ৫৭, সদরে ৪৮, ফুলছড়িতে ১৪, সাঘাটায় ১৯, পলাশবাড়িতে ১৭ ও সাদুল্যাপুরে ২৫ জন রয়েছেন। এছাড়া ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন চিহ্ন না পাওয়ায় আটজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৩১ জন। শুক্রবারের মধ্যে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। বরিশাল ॥ নগরীসহ জেলার ১০ উপজেলায় বিদেশফেরত ৬৪৭ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদের মধ্যে ১৪৬ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন জানান, বৃহস্পতিবার নগরীসহ জেলায় ৫০১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে ৪৯ জনকে। আর ২২ ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। মাগুরা ॥ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাগুরায় বিদেশফেরত ২৭৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদের শরীরে কোন জ্বর বা সর্দিকাশি দেখা যায়নি। মাগুরার প্রত্যেক উপজেলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা হয়েছে। জেলা সদরে ১০ শয্যার এবং শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুরে পাঁচ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। ভোলা ॥ জেলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নতুন করে আরও ১৭ জনকে চিহ্নিত করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ১৫ মার্চ থেকে মোট ৩৭৫ বিদেশফেরত প্রবাসীকে বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে বলে ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়। তারা আরও জানায়, এদের মধ্যে ১২০ জনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার মেয়াদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ২৫৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভোলা সদরে ৫৬, পৌর এলাকায় ছয়, দৌলতখানে ৪২, বোরহানউদ্দিনে ১২, লালমোহনে ২৫, চরফ্যাশনে ৩২, তজুমদ্দিনে ৬২ ও মনপুরায় ২০ জন রয়েছেন। এছাড়া দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। হবিগঞ্জ ॥ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন ৭৫৫ জন। কোয়ারান্টাইন শেষ হয়েছে ৩০০ জনের। জেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলার পাশাপাশি সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। নীলফামারী ॥ নীলফামারীতে নতুন করে বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৫ জন যুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ২১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পূর্ণ হয়েছে ৭৫ জনের। তারা সবাই সুস্থ আছেন। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, জেলার ছয় উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। সিরাজগঞ্জ ॥ সিরাজগঞ্জে নতুন করে আরও ৩৯ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বিদেশ থেকে আসা ৫২৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরে ৪৬, উল্লাপাড়ার ১১০, রায়গঞ্জের ৭৫, কাজীপুরের ২৭, শাহজাদপুরে ১৭৪, বেলকুচি ৩৯, কামারখন্দে ২৬, তাড়াশে ১১ ও চৌহালীর ১৮ জন রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। যারা কোয়ারেন্টাইন অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খোলা হয়েছে করোনা মনিটরিং সেল। জেলার সব সরকারী হাসপাতাল ও দুটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু শ’ আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ জেলায় নতুন ২০ জনসহ বিদেশফেরত ৩১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪৩ জনের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৪০ প্রবাসী কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারী নির্দেশনা মেনে যেসব শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য জেলায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। গোপালগঞ্জ ॥ গোপালগঞ্জে করোনা সন্দেহে এ মুহূর্তে ৫৩৯ জন হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, এদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই প্রবাসী বাংলাদেশী। সবাই নিজ নিজ বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া আরও ৬৮ জনের হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এদিকে বুধবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে ব্লিচিং-পানি ছিটানো শুরু হয়েছে। শহরকে নিরাপদ রাখতে গোপালগঞ্জ পৌরসভা ও ফায়ার-সার্ভিস যৌথভাবে এ কাজটি শুরু করেছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলেও তারা জানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জে আরও নতুন করে ৩৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছেন। এ নিয়ে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩৬ জনে। তাদের মধ্যে বিদেশফেরত ২২৩ জন। বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হোম কোয়ারেইন্টান ২৩৬ জনের মধ্যে সিটি এলাকায় ১৯, সদর উপজেলায় ৯১, বন্দরে ২২, আড়াইহাজারে ৪০, সোনারগাঁয়ে ৩৮ ও রূপগঞ্জে ২৬ জন। তিনি আরও জানান, হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৪ জন। কক্সবাজার ॥ পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা লকডাউন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মুসলিমা খাতুন নামে নারীকে চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচির স্বামী ডাঃ মো. ইউনুছ। ওই নারী করোনাভাইরাস জীবাণু সংক্রমণ বহনকারী রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাঃ ইউনুছ কক্সবাজার আইসোলেশন ওয়ার্ডে আছেন। স্ত্রী (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। সিলেট ॥ সিলেট বিভাগে নতুন করে কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ১৩৭ জন। আর কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২০০ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডাঃ আনিসুর রহমান বিভাগে এখন ১৫৯৭ জন হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাদের মধ্যে সিলেটে ৭৩১, সুনামগঞ্জে ২২৯, হবিগঞ্জে ৪৭৩ এবং মৌলভীবাজারে ১৬৪ জন রয়েছেন। নতুনভাবে কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হওয়াদের মধ্যে সিলেটের ১০, সুনামগঞ্জের ৫৬, হবিগঞ্জে ৫০ জন এবং মৌলভীবাজারের ২১ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে আরও ২০০ জন মুক্ত হয়েছেন। তাদের নির্দিষ্ট ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ধরা পড়েনি। মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় ৪২৮ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। নতুন ৩৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩১ জন। এই নিয়ে গেল কয়েকদিনে ২০১ জন হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সিরাজদিখানে ১৩২, শ্রীনগর ৪৩, লৌহজংয়ে ৪৪, টঙ্গীবাড়িতে ১১৩, মুন্সীগঞ্জ সদরে ৬২, গজারিয়ায় ৩৪ প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রথম অবস্থায় সাত লাখ টাকা ও এক শ’ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। শীঘ্রই এই সহায়তা দরিদ্রদের হাতে পৌঁছানো হবে। গাজীপুর মেয়রের ভিডিও বার্তা ॥ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হবার নির্দেশনা দিয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ২৬ মার্চ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রশাসনের সহযোগিতায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টঙ্গী-গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে প্রশাসনের খবরদারি ও টহলের পাশাপাশি জনসাধারণকে বাড়ি-ঘরে অবস্থানের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
×