ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে ৬৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত- ডেইলি মেইল

ইতালিতে একদিনে আরও ৭শ’ ১২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৭ মার্চ ২০২০

ইতালিতে একদিনে আরও ৭শ’ ১২  জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৫৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে এক লাখ ২৩ হাজার ৩২১ জন। এদিকে করোনায় বৃহস্পতিবার আরও নতুন করে স্পেনে ৬৫৬, যুক্তরাষ্ট্রে ২২৩, ইরানে ১৫৭ ও ফিলিপিন্সে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কলাম্বিয়া ও বলিভিয়ায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে। তবে নতুন এক জরিপে ডেইলি মেইল বলছে ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ লাখ মানুষ, যদিও দেশটির সরকার বলছে অন্য কথা। খবর এএফপি, বিবিসি, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল-জাজিরা, সিএনএন, ইরনা, সৌদি প্রেস এজেন্সি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ডেইলি মেইল, আল আরাবিয়া, নিউইয়র্ক টাইমস, ডন, ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো ও ইয়াহু নিউজের। ইতালি ॥ ইতালিতে প্রতিদিনই বাড়ছে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৭১২ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ২১৫ জন। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি। এছাড়া দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৮৭ জন। ইতালির পর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে স্পেনে। মালয়েশিয়ায় কোয়ারেন্টাইনে রাজা-রানী ॥ দেশটির রাজপ্রাসাদের সাতজন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর রাজা এবং রানী কোয়ারেন্টাইনে গেছেন। রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ এবং তার স্ত্রী রানী টুঙ্কু আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনাহ ইস্কান্দারিয়াহর করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেও সতর্কতা হিসেবে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে রাজপ্রাসাদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন করে আরও ২৩৫ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। এনিয়ে মালয়েশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। স্পেনে আরও ৬৫৬ জনের মৃত্যু ॥ স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৬৫৬ জন। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৃহস্পতিবার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১৮৮ জনে। এদিকে মহামারী মোকাবেলায় স্পেনে জারি করা জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়াল দেশটির সরকার। জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে স্পেনের সংসদে দীর্ঘ এক আলোচনা হয়। ৩২১ জন আইনপ্রণেতার ভোটে দেশটিতে জরুরী অবস্থার মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়। আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরী অবস্থা জারি থাকবে দেশটিতে। তবে ২৮ জন আইনপ্রণেতা এ বিষয়ে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। ইরানে আরও ১৫৭ জনের মৃত্যু ॥ ইরানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। একইসঙ্গে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও হাজারের বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপোর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশে নতুন করোনাভাইরাসে আরও ১৫৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২৩৪ জনে পৌঁছেছে। জাহানপোর বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৩৮৯ জন। যা নিয়ে দেশে মোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ৪০৬ জনে পৌঁছেছে। ইরানের প্রত্যেকটি প্রদেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। করোনা পরীক্ষার কিট সঙ্কট ও দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কারণে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে আরও ২২৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত বেড়ে ৭০ হাজার ॥ যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিন ২২৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১০৩৬ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এদিন দেশটিতে নতুন করে ১১ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭০ হাজারে। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও আক্রান্তের বিচারে তা তৃতীয়। এদিকে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা বিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়েছে। আইনে পরিণত হলে এটিই হবে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রণোদনা। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের মধ্যে কয়েকদিনের আলোচনা শেষে স্থানীয় সময় বুধবার সিনেটে এ সহায়তা বিল ৯৬-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বুধবার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধের প্রচেষ্টায় বিদেশে থাকা মার্কিন সৈন্য ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের চলাচল ৬০ দিনের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের আওতায় আগামী দুই মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রায় ৯০ হাজার সদস্যের মোতায়েন বা পুনর্মোতায়েন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী সদস্যদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফিলিপিন্সে ৯ চিকিৎসকের মৃত্যু ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফিলিপিন্সে ৯ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির শীর্ষ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশটির হাসপাতাল গুলোতে মাত্রাতিরিক্ত রোগী হাজির হচ্ছেন এবং চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন। দেশটিতে করোনায় নতুন করে ৯ জনের মৃত্যু ও ৭১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে ফিলিপিন্সে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ লাখ ॥ যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা জানতে কোভিড সিম্পটম ট্র্যাকার নামের একটি এ্যাপ চালুর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সেটি ডাউনলোড করেছেন। এক সপ্তাহ পর এই এ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এ্যাপে করোনার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল। ব্যবহারকারীদের দেয়া তথ্য বলছে, দেশটিতে ইতোমধ্যে ৬৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। লন্ডনের কিংস কলেজের বিজ্ঞানীরা কোভিড সিম্পটম ট্র্যাকার নামের এই এ্যাপটি তৈরি করেছেন। তারা বলেছেন, এ্যাপটি চলতি সপ্তাহেই চালু করা হয়েছে। এটি প্লে-স্টোরে দেয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ডাউনলোড করেছেন। ডাউনলোডের পর সাইনআপ করে এ্যাপটির জরিপে অংশ নেয়া ১০ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে বলে জানিয়েছেন। এই দশ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা জ্বর, সর্দি, কাশি এবং অবসাদে ভুগছেন। ব্রিটেনের ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে যদি একজনও সংক্রমিত হন, তাহলে মোট সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৬৬ লাখ কিংবা তারও বেশি হয়। কিন্তু তা গোপন করা হচ্ছে। কোভিড সিম্পটম ট্র্যাকারের এই তথ্য প্রকাশের পর দেশটিতে গণহারে করোনা পরীক্ষা না করায় ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু“ হয়েছে। এই এ্যাপটি যারা ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে ৬৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন অধ্যাপক টিম। কিন্তু দেশটির সরকারী তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫২৯ এবং মারা গেছেন ৪৬৫ জন। এছাড়া এই ভাইরাসে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। কলাম্বিয়া ও বলিভিয়া লকডাউন ॥ ভয়াবহ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লাতিন আমেরিকান দেশগুলোতে বুধবার থেকে লকডাউন, সীমান্ত ও স্কুল বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের হতদরিদ্রদের জন্য ত্রাণ সহায়তাও জোরদার করা হয়েছে। এ রোগে সাত হাজার চার শ’র বেশি লোকের আক্রান্ত হওয়া ও ১২৩ জনের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের দুটি দেশ বলিভিয়া ও কলাম্বিয়া সর্বশেষ কঠোর পদক্ষেপের মতো উদ্যোগ নেয়ার দলে শামিল হয়েছে। দেশ দুটি পুরোপুরি লকডাউনে চলে গেছে এবং চিলি তাদের স্কুলসমূহ বন্ধের সময়সীমা বাড়িয়েছে। বলিভিয়া তাদের সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ এবং আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে লকডাউন চলবে যা কার্যকর হয়েছে বুধবার মধ্যরাত থেকে। লকডাউন কার্যকর করতে দেশটিতে প্রচুর সংখ্যক সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ হাজার ইসরাইলীর মৃত্যুর আশঙ্কা নেতানিয়াহুর ॥ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আগামী মাসে ইসরাইলীদের মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজারে পৌঁছে যেতে পারে। বুধবার তিনি এ কথা বলেছেন বলে ইসরাইলী সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। চ্যানেল টুয়েলভ নিউজকে নেতানিয়াহু বলেন, এক মাসের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ হতে পারে। এদের মধ্যে হয়ত ১০ হাজার ইসরাইলীর মৃত্যু হতে পারে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরাইলে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৬৬ জন। জাপান-হংকংয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনা ‘বিস্ফোরণের’ শঙ্কা ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনার ‘বিস্ফোরণ’ রোধে ফের আইসোলেশন পদক্ষেপ জোরালো করেছে টোকিও কর্তৃপক্ষ। এছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে ভেঙ্গে পড়তে না পারে তাই জরুরী অবস্থা জারির কথা ভাবছে হংকং। এতে করে পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণের বিস্তারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাপানকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফল ভাবা হচ্ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর টোকিওর গবর্নর নগরের বাসিন্দাদের ‘যে কোন মূল্যে’ ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছেন। কোভিড-১৯ এর ‘বিস্ফোরণ’ ঠেকানোর জন্য এটা অত্যন্ত জরুরী অভিহিত করে এমন আহবান জানান তিনি।
×