ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার কারণে অন্য পরিবেশে জন্মদিন পালন স্বর্ণকন্যা কারাতেকা অন্তরার

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনার কারণে অন্য পরিবেশে জন্মদিন পালন স্বর্ণকন্যা কারাতেকা অন্তরার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে কেক কেটে ধুমধাম করে আগের জন্মদিনগুলো পালিত হয়েছে সুদর্শনা মেয়েটির। ২৫ মার্চ এবার নিজের একবিংশ জন্মদিনটাও পালিত হলো, তবে একেবারেই সাদামাটাভাবে, ভিন্ন পরিবেশে। কেক ছিল না, ছিল না বাইরের কেউই। শুধু ঘরোয়াভাবে রান্নাবান্না করে (মেন্যু ছিল চকোলেট, শুটকি, মুরগির রোস্ট এবং সুপ) তা ঘরের মানুষদের নিয়ে খাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন কেক আনা হয়নি এবং কেন অন্যদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি? উত্তর-করোনা ভাইরাস! এতক্ষণ যার জন্মদিনের বৃত্তান্ত বয়ান করা হলো, তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) বাংলাদেশের স্বর্ণকন্যা কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরা। গত বছরের ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক’ খ্যাত এসএ গেমসে তাম্রপদক দিয়ে পদকের হালখাতা খুলেছির বাংলাদেশ। সেই প্রথম পদকটি জিতেছিলেন এই অন্তরা (কারাতেতে ব্যক্তিগত কাতা ইভেন্টে)। এই ইভেন্টে স্বর্ণও জিততে পারতেন তিনি। কিন্তু আয়োজকদের কৌশলের কারণে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাকে। প্রতিযোগীতায় নামার আগে বাংলাদেশ অনুশীলন করে পুরনো ম্যাটে। কিন্তু খেলা হয় নতুন ম্যাটে। এজন্য নেকোওয়াশি মুভে গিয়ে পা পিছলে যায় অন্তরার। তাতেই সোনার পদক জয়ের আশা অনেকখানি কমে যায় তার। প্রতিপক্ষের পয়েন্ট বেশি থাকায় ব্রোঞ্জ পান অন্তরা। এজন্য অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন তিনি। রাতে ঘুমাতে পারেননি ঠিকমতো। তবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, পরের দিন মঙ্গলবারটা অবশ্যই তার জন্য মঙ্গলময় হবে। এবং সেটা হয়েছিলও। মেয়েদের কারাতের কুমিতে অনুর্ধ-৬১ কেজির ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারিয়ে সোনার পদক জেতেন অন্তরা। সর্বনাশী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশেও লেগেছে এর মরণ ছোবল। লকডাউনের পর্যায়ে এখন বাংলাদেশ। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মতো বন্ধ ক্রীড়াঙ্গনও। ফলে সব খেলোয়াড়রাই এখন খেলার বাইরে। নিজ নিজ বাড়িতে অলস সময় পার করছেন তারা। অন্তররা খবর কি? বাংলাদেশে সর্বশেষ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি স্বর্ণ জেতা অন্তরা জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমাদের ট্রেনিং বন্ধ। তারপরও ফিটনেস ধরে রাখতে বাসায় একা একা অনুশীলন করছি, সপ্তাহে ছয় দিন।’ করোনা থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মুখোশ পড়া, দরকার না পড়লে বাইরে না যাওয়া (গত সপ্তাহে অবশ্য টাকা ওঠানোর জন্য বাইরে বের হন), করোনা সংক্রান্ত নিউজ আপডেট জানা ও অন্যদের জানানো ... এগুলোই করছেন ঢাকার নয়া পল্টন নিবাসী অন্তরা। আসন্ন বাংলাদেশ গেমসে ৪টা ইভেন্টে আংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অস্তরা। এর মধ্যে দলগত কুমি ও দলগত কাতাতে নিজের ছোট দুই বোন জান্নাতুল ফেরদৌস সুমী এবং তানজিদা সিদ্দিকা শোভাকে নিয়ে আনসারের হয়ে খেলার কথা ছিল অন্তররা। হতচ্ছাড়া করোনার জন্য পিছিয়ে গেছে তা। প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে হোম কোয়ারিনটাইন না মানায় ও তথ্য গোপন করায় সেটাকে অনুচিত ও দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন অন্তরা। এমনটা করলে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশে থানকুনি পাতা খেলে ও ভারতে গোমূত্র পানের মাধ্যমে করোনামুক্ত হওয়ার যে চর্চা চলছে, সেটাকে পুরোপুরি কুসংস্কার বললেন এক সময় ডাক্তার হতে চাওয়া অন্তরা। সবশেষে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখনও করোনার প্রতিষেধক বের হয়নি, তাই সবার উচিত নিজ বাসায় থাকা ও স্বাস্থ্যরক্ষার সব বিধান মেনে চলা।’
×