ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা বিধস্ত শেয়ারবাজারে ৬ লাখ টাকায় নতুন ট্রেক

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনা বিধস্ত শেয়ারবাজারে ৬ লাখ টাকায় নতুন ট্রেক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা আক্রান্ত বিধস্ত শেয়ারবাজার পরিস্থিতির মধ্যে নতুন ট্রেক ইস্যু করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগ্রহী দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই ট্রেকের সনদ দেওয়া হবে। পুরো ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানা না দেওয়া হলেও দীর্ঘছুটির আগে এমন খসড়া প্রস্তাবে নাখোশ বাজার সংশ্লিষ্টরা। খসড়া বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়েই ব্রোকারেজ হাউজের মালিক না হলেও লেনদেন করার অনুমতি মিলবে। এমন বিধান রেখে ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ট্রেক ইস্যুর ৬ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ টাকা ফরম কেনা বাবদ এবং ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি বাবদ নেওয়া হবে। জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে এই খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাজ থেকে মতামত চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে। করোনো মোকাবিলায় সরকারি- বেসরকারি সব ধরনের অফিস এখন বন্ধ রয়েছে। সেখানে দ্রুত ট্রেক ইস্যুও খসড়া প্রকাশ নিয়ে ডিএসইর সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া যেখানে মূল ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেই লেনদেন চলে এসেছে নামমাত্র টাকায় সেখানে নতুন ট্রেক ইস্যু নিয়েও তারা সন্দিহান। তাদের মতে, প্রতিদিনই সেটেলমেন্ট জটিলতা হবে নতুন ট্রেক ইস্যুর জন্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক প্রভাবশালী সদস্য জানান, মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক না হলেও ট্রেক পাওয়ার সুযোগ রাখায় আমরা একইসঙ্গে হতাশ ও বিস্মিত। তারা বলছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সর্বশেষ ১২টি মেম্বারশিপ বিক্রি করেছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকা করে। সেখানে মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে ট্রেক সুযোগ রাখা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। তারা বলছেন, ডিএসই সর্বশেষ মেম্বারশিপ বিক্রি করেছে ৩২ কোটি টাকা ওপরে। সেখানে এখন মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ পাওয়র সুযোগ করা দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়াটির এমন সময় জনমত জরিপে দেয়া হয়েছে যখন করোনাভাইরাস সংক্ররোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া কিছুতেই ঠিক হয়নি। বিএসইসির খসড়াই বলা হয়েছে, এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় একটি করে ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) পাওয়ার অধিকার রাখেন। প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের বাহিরে ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার শর্তে রাখা হয়েছে - কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন থেকে অনুমোদন যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে তারা ট্রেক পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে নিট সম্পদের পরিমাণ সব সময় পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে। ট্রেক পাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এই ফি ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ বরাবর জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাইবাছাই করে এক্সচেঞ্জ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা মঞ্জুর করবে অথবা বাতিল করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জ বরাবর ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়েই হওয়া যাবে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক। কোন প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক- ব্রোকার’র সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, এখন সবাই করোনাভাইরাস নিয় আতঙ্কিত। সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এই বন্ধের মধ্যে বিএসইসি কিভাবে এমন বিষয়ে মতামত চাইতে পারে? তাছাড়া ৪ এপ্রিল ছুটি শেষ ৫ এপ্রিল থেকে সবকিছু খুলবে, এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। বিএসইসির উচিত আপাতত বিষয়টি স্থগিত রেখে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারপর এ বিষয়ে জনমত জরিপের ব্যবস্থা করা। ডিএসইর আরেক সদস্য বলেন, ৩২ কোটি টাকায় সদস্যপদ বিক্রি করেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেখানে একজন মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়ে ট্রেকহোল্ডার (ব্রোকারেজ হাউজের মালিক) হয়ে কিভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সংক্রান্ত নীতিমালা হাস্যকার। এটি দেখে অবাক হয়েছি। বিএসইসি কিভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয় বিএসইসি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মতামত চেয়েছে। অথচ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ মার্চ থেকেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে সমস্ত দেশ এক প্রকার লকডাউন হয়ে যাবে। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিএসইসি কোন যুক্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিল?
×