ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

করোনায় আর্তমানবতার সেবায় নেমেছে উদীচী

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৬ মার্চ ২০২০

করোনায় আর্তমানবতার সেবায় নেমেছে উদীচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতিচর্চা মানেই নিছক বিনোদন নয়। কারণ শিল্প-সংস্কৃতির উল্টোপিঠেই থাকে সমাজের প্রতি অঙ্গীকার। সমাজ বদলের আকাক্সক্ষার মাঝে পূর্ণতা পায় সংস্কৃতির স্রোতধারা। সেখানে থাকে মানুষের প্রতি ভালবাসা কিংবা দায়িত্ববোধ। সেই বাস্তবতায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যখন স্তব্ধ সারাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গন তখন আর্তমানবতার সেবায় নেমেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। নাচ, গান, কবিতার পরিবেশনা কিংবা নাট্য প্রদশনীর মাধ্যমে মানুষকে উজ্জীবিত করার পরিবর্তে সরাসরি বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়তার হাত। ‘মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ’ প্রতিপাদ্যে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে সংগঠনটি। জরুরী পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী হওয়া খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। শুধু তাই নয়, মানুষের সুরক্ষায় নিজেদের প্রস্তুতকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করছে সংগঠনটি। বুধবার সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের কয়েকটি দিনমজুর পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়। পরিবারভেদে পাঁচ থেকে দশ কেজি চালের সঙ্গে ডাল, তৈল, আলু, পেঁয়াজ লবণ বিতরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন জনকণ্ঠকে বলেন, শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার কথাই বলতে চাই সমাজে। গান, কবিতা কিংবা নাট্যচর্চা-সবকিছুর মূলেই রয়েছে মানুষ। আর এই মানুষ যখন সংকটে পড়বে সংস্কৃতিকর্মীদের দায়বোধ থাকে সেই সংকট মোকাবেলার। বিরূপ পরিস্থিতিতে দাঁড়াতে হয় মানুষের পাশে। আমরাও সেটাই দায়বোধ থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে দাঁড়িয়েছি মানুষের পাশে। তোপখানা রোডের কার্যালয় থেকে সংগঠনের কর্মীদের প্রচেষ্টায় তৈরি করা হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ২০ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও ২৩ মার্চ থেকে বিতরণ প্রক্রিয়ায় যাই। প্রেসক্লাব ও পল্টন মোড়ে রিকশাচালক, শ্রমিক, দিনমজুরসহ নি¤œবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। এসব মানুষের পক্ষে নিত্যপণ্যের চাহিদা মিটিয়ে স্যানিটাইজার কেনা সম্ভব নয়। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের সচেতনও করা হয়। এই কার্যক্রম দেখে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সংগঠনও আমাদের কাছ থেকে স্যানিটাইজার তৈরির পদ্ধতি জেনে নিজ নিজ এলাকা সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বুধবার থেকে করোনার জরুরী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর বা খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে খাবার প্রদান করা হচ্ছে। নিজের উদ্যোগ শুভাকাক্সক্ষীদের সহায়তায় আমরা এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। রাজধানীতে উদীচীর ১৯টি শাখাসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়েও সাংগঠনিকভাবে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঠিক কতদিন এই কর্মসূচী চলবেÑসেটা এখনও আমাদের জানা নেই। তবে যতদিন সাধ্য থাকবে ততদিন চালিয়ে যাবে। দেশের এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও এ ধরনের উদ্যোগ নিলে অসহায় মানুষ উপকৃত হতো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও দিনমজুর। তাঁদের ভেতরে যেমন সচেতনতার অভাব আছে, তেমনি তাঁদের নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো জিনিস কেনার সামর্থ্য। করোনাভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ার পর থেকে তোপখানা রোডে নিজেদের কার্যালয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। রিকশাচালক, শ্রমিক, দিনমজুর ও ভাসমান মানুষের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করে ভাইরাসটি সম্পর্কে তাঁদের সচেতনও করছেন উদীচীর সদস্যরা। উদীচীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যত দিন পথে থাকবেন এবং সরকার লকডাউন ঘোষণা না করবে, তত দিন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন তারা। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ৫১ বছর ধরে সংগঠনটিরন শিল্পীরা হেঁটেছেন গ্রামেগঞ্জে, শহরে-বন্দরে, এমনকি দেশের বাইরে। সংকল্পে অবিচল থেকে গেয়েছেন গণমানুষের গান, অংশ নিয়েছেন ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৬৮ সালে পুরান ঢাকার নারিন্দায় সাইদুল ইসলামের বাসায় সত্যেন সেন, গোলাম মোহাম্মদ ইদুসহ কয়েকজন সমাজসচেতন তরুণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল উদীচীর সূচনাপর্বের ইতিহাস। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর শান্তিবাগে রহিমা চৌধুরানীর বাড়িতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে সংগঠনটি। দীর্ঘপথলায় গণসঙ্গীতের পাশাপাশি নিয়মিত মঞ্চস্থ করেছে নাটক এবং উপস্থাপন করেছে নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
×